সবার ‘হৃদয়’ কেড়ে আবার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তৌহিদ
কোনো কিছু একই গতিতে চলে না। সেখানে ছন্দপতন ঘটেই। তা কোনো না কোনোভাবে। এবারের বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী তৌহিদ হৃদয় আলোচিত নাম। তার ব্যাটের ঝলকানিতে তিনি বিপিএল জমিয়ে তুলেন। ঢাকায় শুরু হওয়ার পর টানা তিন ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলে তিনটিতেই ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে সবাইকে চমকে দেন। হয়ে উঠেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তার আশপাশেও ছিলেন না কেউ। কিন্তু তার এই যাত্রা চলমান থাকেনি। ইনজুরি এসে থামিয়ে দেয়।
ইনজুরির কারণে তৌহিদ খেলতে পারেনি চট্টগ্রামে কোনো ম্যাচ। চট্টগ্রামের পর ঢাকায় খেলা হয়নি দুইটি ম্যাচ। এরপর আবার তিনি ফিরেন ২২ গজে। শুরুতে ছন্দ ফিরে না পেলেও শেষ দুই ম্যাচে ফিরে পেয়েছেন ছন্দ। খেলেছেন ৭৪ ও অপরাজিত ৮৫ রানের ইনিংস। আর এই দুটি ইনিংস খেলে তিনি আবার সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক হয়ে গেছেন। তার মোট রান ৩৭৫। এতদিন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন একই দলের ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। তার রান ছিল ৩৭৩।
ইনজুরির আগে তৌহিদ হৃদয়ের তিনটি ইনিংস ছিল যথাক্রমে ৫৫, ৫৬ ও ৮৪। প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি ব্যাট করার সুযোগ পাননি। এরপর ইনজুরি থেকে ফিরে প্রথম তিন ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে ৪,০ ও ১৫ রান।
তৌহিদের এমন রান খরায় অনেকেই শঙ্কায় পড়ে যান। কারণ বিপিএলে এরকম অনেকেই আলো ছড়িয়ে আবার ঝরে যাওয়ার অনেক ইতিহাস আছে। তাহলে তৌহিদও কি সেই হারিয়ে যাওয়ার দলের সদস্য হতে চলেছেন? কিন্তু তৌহিদ সে পথে হাঁটতে রাজি ছিলেন না। তিনি যে আগুনে পুড়ে খাঁটি হয় এই পর্যায়ে এসে নিজেকে মেলে ধরেছেন। সামনে দেখছেন দিগন্ত প্রসারিত পথ। সে পথে হাঁটতে চান সবার ‘হৃদয়’ কেড়ে। আসন করে নিতে চান পাকাপাকি করে। তার জন্য চাই ২২ গজে রানের মিছিল।
ঢাকায় যে তিনটি ইনিংস খেলেছিলেন, সেগুলোতে ছিল একজন পরিপূর্ণ ব্যাটসম্যানের ছাপ। ফ্লিক, অন ড্রাইভ, কাভার ড্রাইভে এক একটি চার-ছক্কায় ছিল প্রকৃত একজন জাত ব্যাটসম্যানের প্রতিচ্ছবি। তাইতো রানে ফিরে আসতে খুব সময় নেননি তিনি। রানে ফিরতে তিনি স্থান বদল করেন। ওয়ান ডাউনের পরিবর্তে চলে যান ইনিংসের উদ্বোধন করতে। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ১৫ রান করার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরের দুইটি ইনিংস খেলেন খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ৭৪ ও রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে অপরাজিত ৮৫ রানের ইনিংস।
এই দুইটি ইনিংসই তৌহিদ হৃদয়কে আবার তার হারানো স্থান পুনরুদ্ধার করে দেয়। ফিরে যান সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সবার উপরে। রংপুরের বিপক্ষে ব্যাট করার আগে তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় নয়ে। অপরাজিত ৮৫ রানের ইনিংস খেলার পথে একে একে পেছনে ফেলেন তামিম ইকবাল (৩০২), মোহাম্মদ রিজওয়ান (৩১৬), আফিফ হোসেন (৩২৮), নাসির হোসেন (৩৪২), ইফতেখার আহমেদ (৩৪৭), সাকিব আল হাসান ( ৩৪৭) ও নাজমুল হোসেন শান্তকে (৩৭৩)।
তৌহিদ এই রান করতে ৯ ম্যাচের ৮ ইনিংসে ব্যাট করেছেন। তিনি যাদেরকে পেছনে ফেলে এসেছেন তাদের মাঝে একমাত্র মোহাম্মদ রিজওয়ান ছাড়া বাকি সবাই বেশি ম্যাচ খেলেছেন। রিজওয়ান খেলেছেন তারই সমান ইনিংস।
এমপি/এসজি