প্লে অফে শীর্ষে উঠার লড়াই
ক্রিকেট ম্যাচকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটি ব্যাটসম্যানদের, অপরটি বোলাদের। ব্যাটসম্যানদের চার-ছক্কা, সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরিতে যেমন সবাই করতালিতে মুখরিত করে তুলেন, তেমনি একজন বোলারের উইকেট প্রাপ্তিতেও। তবে এখানে বোলারের উইকেট প্রাপ্তির চেয়ে ব্যাটসম্যানের চার-ছক্কা আর সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরিতে ক্রিকেটপ্রেমীরা বেশি উৎফুল্ল হয়ে থাকেন বেশি। এটি সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্মই যেন হয়েছে রান ফোয়ারার জন্য। এখানে লো-স্কোরিং ম্যাচ সবার কাছে অরুচিকর খাবারের মতো!
বিপএলের এবারের আসর জমজমাট হওয়ার কারণ এই রান ফোয়ারা। এবারের মতো এ রকম রান ফোয়ারার ম্যাচ বিগত আসরগুলোতে খুব একটা দেখা যায়নি। এবারের বিপিএলে মানহীন বিদেশি ক্রিকেটারের অভাবে ছিল প্রকট। গ্লামার নষ্ট হওয়ার শঙ্কা ছিল খুব বেশি। কিন্তু এই রান ফোয়ারার কারণে তা আর দৃষ্টিগোচর হয়নি। হাতে গোনা কয়েকটি ম্যাচ বাদ দিলে, বাদ বাকি সব ম্যাচই হয়েছে হাই স্কোরিং। দুইশোর্ধ রান অতিক্রম করেও ম্যাচ জেতার নতুন ঘটনা ঘটেছে এবারের আসরে।
এমন নান্দনিক বিপিএলে নতুন করে যোগ হয়েছে শীর্ষে উঠার লড়াই। প্লে অফে খেলা চারটি দলই শামিল এই লড়াইয়ে। যেখানে আছে ১১ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্স, তেমনি আছে ১০ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট করে নিয়ে যথাক্রমে ফরচুন বরিশাল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ও রংপুর রাইডার্স।
বিপিএলের আগের আসরগুলোতে এ রকম লড়াই কখনো হয়নি। সেখানে প্রথমে লড়াই থাকত প্লে অফে যাওয়ার। সেই লড়াইয়ে একটি কিংবা দুইটি দল আগেই প্লে অফে খেলা নিশ্চিত করে ফেলত। বাকি দুইটি স্থানের জন্য লড়াইয়ে থাকত তিন থেকে চারটি দল। এই লড়াই চলত লিগ পর্বের প্রায় শেষ খেলা পর্যন্ত। কিন্তু এবার সেখানে ব্যতিক্রম। এক একটি দলের অন্তত তিনটি করে ম্যাচ বাকি থাকতেই প্লে অফের চার দল চূড়ান্ত হয়ে যায়। যে কারণে আগে-ভাগেই বাদ পড়ে যায় তিন দল।
বাদ পড়া তিন দলের কাছে তাদের অবশিষ্ট ম্যাচগুলো নিয়ম রক্ষার হলেও প্লে অফে জায়গা করে নেওয়া দলগুলোর কাছে গুরুত্ব থেকে যায় ঠিকই। এই গুরুত্ব থাকার কারণ শীর্ষে উঠা। পয়েন্ট টেবিলেল এক ও দুইয়ে থাকতে পারলে ফাইনালে উঠার জন্য বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দল খেলে কোয়ালিফায়ার-১। এখানে হারলেও বাদ পড়া হয় না। ফাইনালের যাওয়ার সুযোগ থাকে কোয়ালিফায়ার-২ খেলে। এই কোয়ালিফায়ার-২ এ অপর দল এসে থাকে পয়েন্ট টেবিলের তিন ও চারে থাকা দুই দলকে নিয়ে এলিমেনেটর খেলা জয়ী দল।
এবার প্লে অফ নিয়ে ভাবনা না থাকায় সবার মাঝে নতুন করে ভাবনা তৈরি হয়েছে শীর্ষে উঠার। এই লড়াই আবার বেশি করে জমে উঠেছে প্লে অফ নিশ্চিত করে পরের ম্যাচে রংপুরের কাছে শীর্ষে থাকা সিলেটের হার। এই ম্যাচ জিতলে সিলেটের কোয়ালিফায়ার খেলা নিশ্চিত হয়ে যেত। কিন্তু হেরে যাওয়াতে বাকি তিন দলের সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধান কমে আসে দুইয়ে। আর নতুন করে মেরুকরণ সৃষ্টি হয় চার দলেরই কোয়ালিফায়ার খেলার।
শীর্ষে উঠার লড়াইয়ে সিলেটের খেলা বাকি আছে একটি, বাকি তিন দলের দুইটি করে। এই চার দলের আবার খেলা আছে পরস্পরের বিপক্ষে। যেমন কুমিল্লা খেলবে বরিশাল ও রংপুরের বিপক্ষে। রংপুরের অপর খেলা চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে। বরিশালের আরেকটি ম্যাচ খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে। এই খুলনার বিপক্ষেই সিলেট খেলবে তাদের শেষ খেলা।
এমপি/এসএন