বিপিএল ‘হাইজফুল’ সিলেট পর্ব
বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণ যুগের সময় প্রায় প্রতিটি চলচ্চিত্রই দর্শক পরিপূর্ণ থাকত। সিনেমা হলগুলোতে তখন সাইনবোর্ড ঝুলত ‘হাইজফুল’। সেই স্বর্ণ যুগ এখন আর নেই। দর্শকের অভাবে হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যেগুলো এখনো চলমান, সেগুলোতে দর্শক খরা চলছেই।
তাই ‘হাউজফুল’ শব্দটি এখন আর দেখা যায় না। তবে ভিন্ন প্রেক্ষপটে এবার সেই ‘হাইজফুল’ শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপট ছিল নবম বিপিএলের সিলেট পর্ব। চার দিনে অনুষ্ঠিত আটটি ম্যাচের প্রতিটিতেই ছিল দর্শকে পরিপূর্ণ। যা দুই দফায় ঢাকায় এবং চট্টগ্রামে দেখা যায়নি।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে স্বাগতিকদের ম্যাচেও স্টেডিয়ামে পূর্ণ ছিল না। কিন্তু সিলেটে স্বাগতিকদের ম্যাচে শুধু নয়, অন্য দলগুলোর খেলাতেও দর্শকে ছিল টুইটুম্বর। প্রতিদিন খেলা ছিল দুইটি। এমন নয় যে সিলেটের খেলা ছিল প্রতিদিন। প্রথম তিন দিন ছিল সিলেটের খেলা ছিল। শেষ দিন তাদের কোেনা খেলা ছিল না। কিন্তু তারপরও দর্শকে ছিল পরিপূর্ণ।
আর এ দিন যারা মাঠে ছিলেন, তারা হয়ে গেছেন ইতিহাসের স্বাক্ষী। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ও খুলনার ম্যাচ ছিল সেই ইতিহাস গড়ার দল। খুলনার ২ উইকেটে করা ২১০ রান তাড়া করে কুমিল্লা জিতেছিল ৩ উইকেট হারিয়ে। এটি ছিল বিপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। আগের রেকর্ড ছিল ২০৫ রান । ঢাকা প্লাটুনুর ৪ উইকেটে করা ২০৫ রান তাড়া করে রংপুর রাইডার্স জিতেছিল ২ উইকেট হারিয়ে।
দুই দলের এই রানও ছিল আবার সর্বোচ্চ। দুই দল মিলে করেছিল ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৮.২ ওভারে ৪২৩ রান। ওভার প্রতি সংগ্রহ ছিল ১১.০৩। বিপিএলের ইতিহাসে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ রান। সর্বোচ্চ রান ৪০ ওভারে ৪৬০। ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও কুমিল্লা ওয়ারিয়ার্সের ম্যাচে হয়েছিল। ওভার প্রতি রান ছিল ১১.৫০।
চট্টগ্রামের ৪ উইকেটে করা ২৩৭ রানের জবাব দিতে নেমে কুমিল্লা ৭ উইকেটে করেছিল ২২২ রান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান হয়েছিল একই বছর একই ভেন্যুতে চট্টগ্রামের বিপক্ষে ঢাকা প্লাটুনুর ম্যাচের। দুই দল ৪০ ওভার খেলে ওভার প্রতি ১০.৬৫ করে রান করেছিল ৪২৬। চট্টগ্রামের ৪ উইকেটে ২২১ রানের জবাবে ঢাকা ২০৫ রানে করে শেষ বলে অলআউট হয়েছিল।
সিলেট ইতিহাস গড়া ম্যাচের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি হাই স্কোরিং ম্যাচও হয়েছে। যেমন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের করা ৬ উইকেটে করা ১৭৪ রান সিলেট টপকে গিয়েছিল ২ ওভার হাতে রেখে ৩ উইকেট হারিয়ে। আবার চট্টগ্রামের করা ৬ উইকেটে ১৬৮ রান বরিশাল অতিক্রম করেছিল ১৯.২ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে।
এ ছাড়াও খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে সিলেট ৪ উইকেটে করেছিল ১৯৪ রান। আবার ঢাকার বিপক্ষে কুমিল্লা করেছিল ৬ উইকেটে ১৬৪ রান। এ সব ম্যাচে প্রতিপক্ষরা জবাব দিতে পারেনি। কিন্তু এ রকম বড় ইনিংস হওয়ার পরও সিলেটে সেঞ্চুরি হয়ে একটি। কুমিল্লা-খুলনার ইতিহাস গড়া ম্যাচে কুমিল্লার হয়ে অপরাজিত ১০৭ রান করেছিলেন কুমিল্লার উইন্ডিজের ব্যাটসম্যান জনসন চার্লস। তবে সেঞ্চুরি হতে পারতো আরও দুইটি। তাও এই ম্যাচে। কিন্তু তামিম ইকবাল ৯৫ রান করে আউট হয়ে যান আর ৯১ রান করে অপরাজিত থাকেন সাই হোপ।
জনসন চার্লসের সেঞ্চুরি ছিল বিপিএলেরে এবারের আসরে চতুর্থ। আগের তিনটি সেঞ্চুরিও ছিল অপরাজিত। মিরপুরে চট্টগ্রামের বিপক্ষে খুলনার আজম খান ১০৯ রান করার পর ওসমান খান জবাব দিয়েছিলেন ১০৩ রান করে। এরপর চট্টগ্রামে ফরচুন বরিশালের ইফতেখার আহমেদ অপরাজিত ১০০ রান করেছিলেন রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে।
যেখানে রান বন্যা হয়, সেখানে বোলারদের নৈপুণ্য দেখানোর সুযোগ থাকে কম। সিলেটে তাই বোলারদের একক নৈপুন্য খুব একটা দেখা যায়নি। তারপরও রান বন্যায় সাঁতার কেটে বরিশালের বিপক্ষে চট্টগ্রামের নাহিদুজ্জামান ৪ ওভারে ১৭ ও খুলনার বিপক্ষে সিলেটের রুবেল হোসেন ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ৪টি করে উইকেট নিয়েছিলেন। সিলেটের আগে ঢাকা ও চট্টগ্রামে এ রকম ৪টি করে উইকেট নেয়ার ঘটনা আছে আরও ৯টি। ৫টি ছিল মিরপুরে, ৪টি চট্টগ্রামে।
এমপি/এমএমএ/