হকির ফ্রাঞ্চাইজি আসরে সাকিব
ফ্রাঞ্চাইজি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গণে পরিচিতি পেয়েছে বাংলোদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) দিয়ে। ২০১২ সালে ক্রিকেটের এই আসর শুরু হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এক একটি দল কিনে নিয়ে ফ্রাঞ্চিইজি হিসেবে আবিভূর্ত হয়।
এরপর মাঝে কিছুদিন ফুটবলেও ফ্রাঞ্চাইজি লিগ শুরু হয়েছিল। কিন্তু আলোর মুখ আর দেখেনি। মাঝে ভলিবল,কাবাডি থেকেও মৃদু আওয়াজ এসেছিল। কিন্তু এবার কোনো রক, আওয়াজ ছাড়াই হকিতে শুরু হতে যাচ্ছে ফ্রাঞ্চাইজি আসর। অক্টোবরের শেষের দিকে মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে ‘বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি’ নামে গড়াবে এই আসর।
আজ রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ঘটা করে হয়ে গেলে ফ্রাঞ্চাইজিদের দল কেনা। যেখানে ছয় দলের একটি কিনেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল আসান তার অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মোনাক মার্টের নামে। অন্য দলগুলো কিনেছে একমি, ওয়ালটন, সাইফ পাওয়ারটেক ও রূপায়ন গ্রুপ। ষষ্ঠ দলের নাম কয়েক দিন পরে জানাবে হকি ফেডারেশন।
আজকের অনুষ্ঠানে শুধু ফ্রাঞ্চাইজিদের দল কেনাই হয়নি। একইসঙ্গে হকি ফেডারেশনের কাছ থেকে আসরের স্বত্ত্ব কিনে নেওয়া বসুন্ধরা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এইসের সঙ্গে ৫ বছরের চুক্তি হয়েছে হবি ফেডারেশনের। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হকি ফেডারেশনের সভাপতি বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ, এইসের চিফ প্যাট্রন ও বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান তাসভির। এ ছাড়া, এই আয়োজনকে সামনে রেখে পাঁচ তারকা হোটেলে হকি খেলোয়াড়দের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছিল। সাবেক খেলোয়াড় জাতীয় দলের প্রথম অধিনায়ক আব্দুস সাদেক থেকে শুরু করে প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, মাহবুব হারুণ, রফিকুল ইসলাম কামাল, ফয়সাল আহসানউল্লাহ সহ অনেকে। অনুষ্ঠানে হকি ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফের হাতে এক কোটি টাকার চেক তুলে দেন এইসের চিফ প্যাট্রন ও বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান তাসভির।
হকের এই আয়োজনে আলো ছড়িয়েছেন সাকিব আল হাসান। তার উপস্থিতিতে সবার নজর সে দিকে চলে যায়। হকি নিয়ে তার আগ্রহ অনেকেই পুলকিত করেছে। সাকিব ক্রিকেট ছাড়াও ফুটবল খেলে থাকেন। কিন্তু হকি নিয়ে এমন আগ্রহ সবার ছিল অজানা। সাকিব জানালে তার হকি প্রীতির কথা। তিনি হকির মাঝে অপার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন। তাই এগিয়ে এসেছেন এখানে ভুমিকা রাখতে। জানালেন সেই কথাই।
তিনি বলেন, ‘আমাদের হকিতে অনেক সম্ভাবনা আছে। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে আমরা ২৭তম স্থানে আছি। ১৬টি দেশ বিশ্বকাপ খেলে। কাজেই বিশ্বকাপে খেলা তো বেশি দূরের ব্যাপার না। আমার বিশ্বাস যদি হকিটা সঠিকভাবে প্রচার-প্রচারণা পায় এবং ভালোভাবে সবাই উদ্যোগ নেয়, তাহলে আমরা বিশ্বকাপে খেলতেই পারি।’ সাকিবের বিশ্বাস বাংলাদেশের হকির বিশ্বকাপ খেলা খুব দূরে নয়।
তিনি বলেন, ‘এই লিগ থেকে অবশ্যই কয়েকজন খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। বাংলাদেশের হকির পজিশনও ভালো। আশা করি একদিন বিশ্বকাপও খেলবে বাংলাদেশ। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে আমরা ২৭তম স্থানে আছি। ১৬টি দেশ বিশ্বকাপ খেলে। কাজেই বিশ্বকাপে খেলা তো বেশি দূরে নয়। আমার বিশ্বাস যদি সঠিকভাবে প্রচার-প্রচারণা করা যায়, একই সঙ্গে ভালোভাবে সবাই উদ্যোগ নেয়, তাহলে আমরা বিশ্বকাপে খেলতেই পার।’
সাকিব শুধু হকির সঙ্গেই জড়িত থাকবেন না। দেশের অন্য খেলায়ও ভুমিকা রাখতে পান। তিনি বলেন, ‘খেলার সঙ্গে থাকাটাই আমাদের একটা বড় ব্যাপার। বাংলাদেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে, বিশেষ করে খেলাধুলায় অনেক কিছু করার সম্ভাবনা আছে। সবাই যার যার জায়গা থেকে চেষ্টা করছে। আমিও আমাদের জায়গা থেকে চেষ্টা করা শুরু করলাম। মোনার্ক গ্রুপ এরই মধ্যে গলফার সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে কাজ করা শুরু করেছে। এখন হকিতে এসেছি। ক্রিকেটের সঙ্গেও আসার চেষ্টা করছি। অ্যাথলেটিকসের দিকে এগতে পারি। প্রতিটি জায়গাতে আমাদের অবদান রাখার করার ইচ্ছা আছে।’
সাকিব চান প্রথম আসরেই তার দল মোনাক মার্ট চ্যাম্পিয়ন হোক। তিনি বলেন, ‘আমাদের চিন্তা থাকবে কীভাবে এই দলের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ভালো হয়। আমরা যদি সেটার একটা রোলমডেল হতে পারি, অন্যরা সেটা হয়তো অনুসরণ করতে পারবে। এতে করে হকিরই উন্নতি হবে।’
সাকিব হকি খেলোয়াড়দের আর্তিক বিষয় নিয়েও ভাবছেন। তিনি বলেন, ‘খেলোয়াড়দের সবার ক্যারিয়ার ১০-১৫ বছরের বেশি থাকে না। যারা সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়, তাদের চাকরির সুযোগ ও আর্থিক নিরাপত্তা যদি দিতে পারি, তখন খেলোয়াড়েরা খেলায় অনেক বেশি মনোযোগ দিতে পারবে।’
এমপি/এমএমএ/