নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট মাশরাফি
ইনজুরি খেলতে দেয়নি টেস্ট ক্রিকেট। অভিমানে হুট করে বিদায় বলে দিয়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে। মন-প্রাণ উজাড় করে দিয়ে খেলছিলেন ওয়ানডে ক্রিকেট। দলটির তিনি ছিলেন আবার নেতাও। নেতৃত্ব দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে দলে একটা অবস্থানও তৈরি করে ফেলেছিলেন। কিন্তু এখানেও শান্তি ছিল না। অদৃশ্য শক্তি তাকে এখান থেকেও সরে যাওয়ার জন্য নানাভাবে চাপ তৈরি করছিল। কিন্তু তিনি অবিরাম খেলা চালিয়ে যেতে মনস্থ করেন। কিন্তু সেই পথ ছিল কণ্টাকাকীর্ণ। একদিকে ইনজুরি নিত্য সঙ্গী, তারপর ২২ গজের লড়াই। সেই সঙ্গে অদৃশ্য শক্তির বিপক্ষেও লড়তে হয় নড়াইল এক্সপ্রেসকে। কিন্তু একরোখা মাশরাফি এসবে কান পাতেননি। তিনি বিদায় বলার সিদ্ধান্ত না নিয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ফলে তার বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে পড়ে ঘরোয়া আসর। বিপিএল আর ডিপিডিসিএল (ঢাকা প্রিমিয়ার বিভাগ ক্রিকেট লিগ)। এবারের লিগে পুরোপুরি ফিট না হয়েও ২০ উইকেট নিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। অদৃশ্য শক্তিকে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি ফুরিয়ে যাননি। তার খেলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিকই ছিল এবং তিনি খেলে যাবেন। আজ লিগের খেলা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন,‘খেলোয়াড় হিসেবে তো পারফর্ম করলে ভালো লাগে, অন্যরকম ভালো লাগছে। হয়তো আরেকটু ভালো করতে পারতাম, যদি ফিট থাকতাম। তবু ঠিক আছে, আলহামদুলিল্লাহ্।’ এবারের লিগে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার সংখ্যা ২৯টি। প্রাইম ব্যাংকের রাকিবুল হাসান নিয়েছেন এই ২৯ উইকেট নিয়ে আছেন সবার উপরে। মাশরাফির অবস্থান আটে। বয়স, ইনজুরি, নিয়মিত অনুশীলন না করা, পুরোপুরি ফিট না থাকা সব মিলিয়ে তার ২০ উইকেট প্রাপ্তি জানান দেয় মাশরাফি এখনো ফুরিয়ে যাননি।
লিগে মাশরাফি শুধু নিজে ভালো খেলেননি, তার দল লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে রানার্সআপও করেছেন। যে দল নিয়ে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ রানার্সআপ হয়েছে, সে রকম দল ছিল না। বলা যায় অনেকটা সাদামাটা দল মাশরাফি যাদুতে বলবান হয়ে উঠেছিল। দলের সাফল্য নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমার কাছে মূল চ্যালেঞ্জিং ছিল টিমটা নিয়ে। আমরা মডারেট একটা দল ছিলাম। সেখান থেকে লিগের চ্যাম্পিয়নশিপে লাস্ট ম্যাচের আগে আমরা ছিটকে গিয়েছি। যেটা সবসময় বলি, চ্যাম্পিয়ন হতে শুধু ভালো খেললে হয় না, একটু ভাগ্যও দরকার হয়। সেই ভাগ্যটা আমাদের হয়তো ছিল না। তবু আলহামদুলিল্লাহ্, রানার্সআপ হয়েছি। আমার কাছে কিন্তু ওইটাই ফোকাস ছিল দলকে ওই জায়গায় নিয়ে যাওয়া। কারণ আমাদের থেকে আরও ভালো ভালো দল ছিল, যাদের থেকে আমরা ওপরে আসতে পেরেছি।’ ২০ উইকেটের মাঝে সেরা উইকেট বেছে নিতে গিয়ে মাশরাফি নির্দিষ্ট করে কোনো উইকেট বেছে নিতে পারেননি। তবে আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচটিকে তিনি আলাদাভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,‘ওরকমভাবে তো খেয়াল করিনি। তবে আবাহনীর সঙ্গে ম্যাচটায় ভালো বোলিং করেছি। ওইটায় টার্নিং পয়েন্ট ছিল। মাঝে যখন জুটি হচ্ছিল, তখন ৩ উইকেট পেলাম, ম্যাচটা জিতলাম, ওইটা আমার বেশি ভালো লেগেছে।’
মাশরাফি কথা বলেন জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর পেসার আবু জাহেদ রাহীর ‘লবি’ নিয়ে বলা কথা প্রসঙ্গেও। তিনি রাহীর এ জাতীয় কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। জানান জাতীয় দলে লবিংয়ের কোনো জায়গা নেই। এখানে পেশাদারিত্ব আগে। মাশরাফি বলেন, ‘অনেকে মনে করে জাতীয় দলে লবিং আছে। এখানে এই সুযোগ নেই। এখানে পারফর্ম করলে খেলবেন, পারফর্ম না করলে খেলবেন না। দিন শেষে আমি বারবারই বলছি এখানে আবেগের কোনো জায়গা নেই। এটা সম্পূর্ণ পেশাদার জায়গা, আপনাকে শতভাগ পেশাদার হতে হবে। পারফর্ম করতে হবে।’ মাশরাফি মনে করেন রাহী এ জাতীয় কথা বলেছেন হতাশা থেকে। নিউ জিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে রাহী দলে ছিলেন। কিন্তু কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। তারপর ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে তিনি বাদ পড়নে। মাশরাফি বলেন, ‘এটা একটা খেলোয়াড়ের জন্য হতাশার। তবে বাংলাদেশ দলে এখন ফাস্ট বোলিংয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা। বিশেষ করে সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে মারাত্মক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এখন টেস্টে তাসকিন, ইবাদত ভালো খেলছে। শরীফুল সব ফরম্যাটে ভালো বোলিং করছে। এখন বাইরে নিজেকে উন্মোচন না করে মাঠে উন্মোচন করা উচিত।’
এসএন