আবাহনীকে শিরোপার লড়াই থেকে ছিটকে দিল প্রাইম ব্যাংক
শিরোপা জয়ের হালি পূর্ণ করতে হলে কঠিন সমীকরণে থাকা আবাহনীর সামনে জয়ের বিকল্প ছিল না। কিন্তু তাদের সে সুযোগই দেয়নি প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। প্রাইম ব্যাংকের কাছে ১৪২ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে শিরোপার লড়াই থেকে ছিটকে গেছে আবাহনী। এর ফলে শিরোপা লড়াই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ও লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের মধ্যে। এই দুই দলই আজ নিজেদের খেলায় জয় পেয়েছে।
মিরপুরে শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে শিরোপা লড়াইয়ে টিকে থাকার প্রশ্নে আবাহনীকে যেখানে উজ্জীবিত নৈপুণ্য দেখানোর কথা ছিল, সেখানে তারা ছিল ম্রিয়মান। ব্যাট-বলে কোনো বিভাগেই তারা প্রাইম ব্যাংকের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রাইম ব্যাংক লিগে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এনামুল হক বিজয়ের (৭৭) আরও একটি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংসের সুবাদে ৯ উইকেটে ২৭৩ রান করে। জবাব দিতে নেমে প্রাইম ব্যাংকের পেস আর স্পিনের তোপে পড়ে মাত্র ৩২.৪ ওভারে ১৩১ রানে অলআউট হয়ে শোচনীয় হার মানে। এর ফলে প্রথম পর্বে হারের বদলাও নিল প্রাইম ব্যাংক।
টস জিতে বোলিং বেছে নিয়ে যে ফায়দা তুলে নিতে চেয়েছিলেন আবাহনীর অধিনায়ক। তা নিতে দেননি প্রাইম ব্যাংকের দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় ও শাহদাত হোসেন। পরে সেই যাত্রায় যুক্ত হন মেলান মোহাম্মদ মিঠুন, ইয়াসির আলী ও মেহেদি হাসান।
প্রাইম ব্যাংকের দুই ওপেনার এনামুল ও শাহদাত উদ্বোধনী জুটিতেই ৯৯ বলে ৯৭ রান করে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন। শাহদাত ৩৮ রান করে আউট হওয়ার পর মুমিনুল কোনো রান না করে ফিরে গেলেও তাতে কোনো চাপে পড়েনি প্রাইম ব্যাংক। পরে দাঁড়িয়ে যান মোহাম্মদ মিঠুন। তিনি দাঁড়িয়ে যাওয়ার কারণে এনামুল আউট হওয়ার পরপরই নাসির (৬) ফিরে গেলেও কোনো চাপে পড়েনি প্রাইম ব্যাংক। ম্যাচ সেরা এনামুল ৮৬ বলে ৩ ছক্কা ও ৫ চারে ৭৭ রান করে ধনঞ্জায়া ডি সিলভার বলে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন। নাসির বিদায়ের পর মিঠুন ও ইয়াসির আলী ১০.৪ ওভারে ৫৯ রান যোগ করেন। মিঠুন ৫৯ বলে ৫ চারে ৪৪ রান করে আউট হওয়ার পর শামসুর রহমানও কোনো রান না করে ফিরে যান। তারও ফিরে যাওয়াতে প্রাইম ব্যাংকের জন্য কোনো সমস্যা হয়নি। কারণ তখন রান করার দায়িত্ব তুলে নেন ইয়াসির আলী ও মেহেদি হাসান। ইয়াসির আলী ৪৩ বলে ৪৩ রান করে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে ডি সিলভার হাতে ধরা পড়ার পর আবারো দ্রুত উইকেট হারায়। এবার হারায় দুই উইকটে। তাইজুল ২ ও রেজাউর রহমান রাজা ২ রান করে ফিরে যান। কিন্তু দলের রান বাড়িয়ে নেওয়ার শেষ কাজটি করেন মেহেদি হাসান ২৭ বলে ৪ চারে অপরাজিত ৩৪ রান করে। ধনঞ্জায়া ডি সিলভা ৫৭ রানে ৩টি, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৩৫ রানে নেন ২টি উইকেট।
আবাহনীর শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনের জন্য ২৭৩ রান কঠিন হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সেই রান তাড়া করতে গিয়ে তারা যে এভাবে ভয়াবহ বিপদে পড়বে তা ছিল কল্পনাতীত। স্পিনার রাকিবুলের ঘূর্ণি বলে পড়ে তারা ২০ রানে ৩ উইকেট হারায়। সবকটি উইকেটই নেন রাকিবুল। এরপর আফিফকেও দ্রুত ফিরিয়ে দেন মেহেদি হাসান। লিটন দাস চেষ্টা করছিলেন হাল ধরার। কিন্তু তাকেও যখন তাইজুল ফিরিয়ে দেন, তখন আবাহনীর রান ৫ উইকেটে মাত্র ৩৪। লিটন দাস করেন ২৩ রান। তখনই আবাহনীর হার নিশ্চিত হয়ে যায়। অধিনায়ক মোসাদ্দেক এসে পতন ঠেকিয়ে দলের বড় হার ঠেকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু এ সময় রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন নাসির। তিনি একে একে ফিরিয়ে দেন শামীম ও শহীদুলকে। ফলে শতরানের আগেই ৯৮ রানে আবাহনী হারায় ৮ উইকেট। তারপরও সেখান থেকে আবাহনীর রান ১৩১ পর্যন্ত যেতে পেরেছিল অধিনায়ক মোসাদ্দেকের ৫৭ বলে ৩ ছক্কা ও ৭ চারে ৬৫ রানের ইনিংসে। মোসাদ্দেককেও আউট করেন নাসির। প্রাইম ব্যাংকের হয়ে রাকিবুল ১৮ ও নাসির হোসেন ৩৩ রান দিয়ে তুলে নেন ৩টি করে উইকেট। ২টি করে উইকেট নেন মেহেদি হাসান ও তাইজুল ইসলাম।
এমপি/আরএ/