শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
Dhaka Prokash

অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র: নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা

জাতীয় নির্বাচনের আর বেশি দেরি নেই। সবকিছু ঠিক থাকলে ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির প্রথম দিকে দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ অবস্থায় এখনই বাড়ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার। এ সব আগ্নেয়াস্ত্র সীমাস্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে।

জানা যায়, রাজধানীসহ সারাদেশে এখন অপরাধীদের হাতে হাতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। শীর্ষ সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক দলের ক্যাডার, জঙ্গি থেকে শুরু করে পাড়ার ছিঁচকে মাস্তানরাও এ সব ব্যবহার করছে। নিয়মিত অভিযানে মাঝে মধ্যেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারও করছে র‌্যাব–পুলিশ।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সব অবৈধ অস্ত্র যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা না যায়, তাহলে দিন দিন এর ব্যবহার বাড়বে এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশের প্রায় ৩০টি রুট দিয়ে অবৈধ অস্ত্র দেশে প্রবেশ করছে। বৈধ অস্ত্রের আড়ালেও আসছে অবৈধ অস্ত্র। এ ছাড়া দেশেও অস্ত্র তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রায় ৫ শতাধিত সহস্রাধিক অস্ত্র উদ্ধার করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এ সব ঘটনায় সারাদেশে প্রায় ৪ হাজারেরও বেশি মামলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে দেশে আসছে অত্যাধুনিক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। তবে বেশি আসছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইয়াবা দেশের অভ্যন্তরে এলেও বর্তমানে সেখান থেকেও অস্ত্র কিনছে চোরকারবারীরা।

অতিসম্প্রতি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর খোদ রাজধানীতে মাদক উদ্ধার করতে গিয়ে অস্ত্রও জব্দ করেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অস্ত্রগুলো রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে রাজধানীতে নিয়ে আসা হয়েছে। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অভিযানে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাও বেড়েছে।

সূত্র বলছে, চোরাকারবারীরা এ সব অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র কৌশলে সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢোকাচ্ছে। এরপর হাত ঘুরে অ্যাম্বুলেন্স কিংবা জরুরি যানবাহনে ঢাকাসহ চাহিদা মোতাবেক ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সারাদেশে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, সামনে জাতীয় নির্বাচন। এক শ্রেণির চক্র আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে অস্ত্র মজুতের চেষ্টা করছে। তবে নজরদারির কারণে ধরাও পড়ছে।

গত ৮ মে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ‘ইলিশ’ বাস কাউন্টারের সামনে থেকে মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে অত্যাধুনিক দুটি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন এবং ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মতিঝিল সার্কেল।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্ল্যাহ কাজল এ প্রসঙ্গে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির কাছে ব্যাগভর্তি ইয়াবা রয়েছে। কিন্তু ব্যাগ খুলতেই বেরিয়ে আসে লোডেড দুটি আধুনিক বিদেশি পিস্তল।

গ্রেপ্তাররা রতনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, অস্ত্রগুলো রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আনা হয়েছে। অস্ত্রের গন্তব্য কোথায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ ছাড়াও চট্টগ্রাম, লক্ষীপুর, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, যশোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকা থেকে অতিসম্প্রতি অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা রয়েছে। সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় বিজিবির অভিযানেও নিয়মিত ধরা পড়ছে অস্ত্র।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে সীমান্ত পথে ভারত থেকে খুব সহজেই অবৈধ অস্ত্র ঢুকছে। নির্বাচনকালে হওয়ার কারণে বর্তমানে তা আগের চেয়ে বেড়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী দরিদ্র কৃষক ও দিনমজুরদের অস্ত্র বহনে বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভারতীয় অস্ত্র ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বাংলাদেশি অস্ত্র ব্যবসায়ীরা এই অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে আসা অস্ত্র যাচ্ছে রাজনৈতিক দলের ক্যাডার, ভূমিদস্যু এবং সন্ত্রাসীদের হাতে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবির) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুনুর অর রশিদ জানান, বিভিন্ন সময়ে একাধিক অস্ত্রের চালান জব্দ করেছে ডিবির টিম। এসব ঘটনায় একাধিক অস্ত্র ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হয়েছে। অবৈধ অস্ত্রৈর ব্যবসা, চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ওপর নজরদারির পাশাপাশি তাদের গ্রেপ্তারে সবসময় ডিবি কাজ করে যাচ্ছে।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমানের তত্ত্বাবধায়নে দুজন অতিরিক্ত উপকমিশনারের টিম অস্ত্রের চালানটি আটক করার পাশপাশি পাঁচ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। ওই চক্রের দলনেতা আকুল হোসেন। এ চক্রের শেকড় খুঁজে পেতে ৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে অনুসন্ধান চালানো হয়। অবশেষে আকুলের গ্রুপের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলেও এ চক্রের কাছে অস্ত্র বিক্রি করা মেহেদীকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি ভারতে অবস্থান করার কারণে।

গত ৭ বছরে আকুল যেসব ব্যক্তির কাছে অস্ত্র বিক্রি করেছে, তার মধ্যে ২৫ জনের নাম পেয়েছে আইনশৃঙ্কলা বাহিনী। এসব ব্যক্তির কাছে আকুলের কাছ থেকে কেনা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ কাজ করছে। পাশাপাশি গত কয়েক বছরে আকুলের সবরাহ করা আড়াইশ অস্ত্র কাদের হাতে গেছে, তাও খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

ডিএমপি গোয়েন্দা বিভাগের (লালবাগ) উপ কমিশনার মশিউর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, সামনে যেহেতু নির্বাচন একটি চক্র চাচ্ছে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে। তারাই অস্ত্র আনছে। আমরা সজাগ রয়েছি।

ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু এক চক্রের হাত দিয়েই যদি আড়াইশ অবৈধ অস্ত্র বাংলাদেশে প্রবেশ করে তাহলে এমন আরও একাধিক চক্র রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। সীমান্ত এলাকায় দুর্বল নজরদারি থাকার কারণে অবৈধ অস্ত্র সহজে ভারত সীমান্ত ব্যবহার করে বাংলাদেশে আসছে। এ অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতাদেরও সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

এ সব কর্মকর্তা বলছেন, মূলত অবৈধ অস্ত্রের হাতবদল একেক সময় একেক ধরনের কৌশল নেওয়া হয়। অবৈধ অস্ত্রের মজুদ নানা প্রয়োজনে গড়ে তোলা হয়। জাতীয় নির্বাচন, স্থানীয় নির্বাচনকে ঘিরেও অবৈধ অস্ত্রৈর চালান আসতে থাকে ভারত থেকে। এ ছাড়া জমি দখল, চাঁদাবাজি, আধিপত্য নিয়ন্ত্রণেও অবৈধ অস্ত্রের মজুদ গড়ে উঠছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘বছরজুড়েই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে র‌্যাব। যেহেতু নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই সীমান্তসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, র‌্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়ন অবৈধ অস্ত্রৈর মালিক, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নজরদারি শুরু করেছে। অবৈধ অস্ত্র পাচার ও বিক্রির সঙ্গে যুক্ত চক্রকে গ্রেপ্তারও করেছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কেউ চেষ্টা করলে সেটি প্রতিহত করা হবে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, ২০২২ সালে দেশে ৪৭৫টি রাজনৈতিক সহিংসতায় ৭০ জন মারা গেছেন। আর চলতি বছরে প্রথম তিন মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় একাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হয়। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে ভোটের মাঠের নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতা ধরে রাখতে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হয়।

আরইউ/আরএ/

Header Ad

সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৪তম জন্মদিন আজ

সজীব ওয়াজেদ জয়। ছবি: সংগৃহীত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র এবং পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত এম এ ওয়াজেদ মিয়া ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দম্পতির একমাত্র ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ৫৪তম জন্মদিন আজ শনিবার (২৭ জুলাই)। তিনি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছেন।

সজীব ওয়াজেদ জয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। নানা শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ‘জয়’ ও নানি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছার দেওয়া ‘সজীব’ মিলিয়ে নাম রাখা হয় সজীব ওয়াজেদ জয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার সময় মা ও বাবার সঙ্গে জার্মানিতে ছিলেন তিনি।

পরবর্তী সময়ে মায়ের সঙ্গে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকায় সজীব ওয়াজেদ জয়ের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে সেখানেই। দেশটির নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজে লেখাপড়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক করেন তিনি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন জয়।

২০০২ সালের ২৬ অক্টোবর মার্কিন নাগরিক ক্রিস্টিন ওভারমায়ারকে বিয়ে করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তাদের এক কন্যা সন্তান আছে। শিক্ষাজীবন থেকে রাজনীতির প্রতি অনুরাগ থাকলেও ২০১০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসেন তিনি। ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিতৃভূমি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ দেওয়া হয় তাকে।

অবশ্য ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের সময় গ্রেপ্তার হওয়া তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও মা শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলন জোরদারে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে নেপথ্য ভূমিকা রাখেন তিনি। সে সময় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে এবং দলের নির্বাচনি ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতি নির্ধারণে অবদান রাখেন। আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনি ইশতেহার 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রয়েছে তার।

২০০৭ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক ‘গ্লোবাল লিডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নির্বাচিত হন সজীব ওয়াজেদ জয়।

বাংলাদেশে নতুন নির্বাচনের দাবি ড. ইউনূসের

ফাইল ছবি

বাংলাদেশের চলমান সংকট উত্তরণের জন্য জনগণের ম্যান্ডেট দিয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য স্বল্প সময়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন শান্তিতে বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবীদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্রে সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে একটি প্রকৃত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। জনগণের নির্দেশনায় গণতন্ত্রের সমস্যার প্রতিকার সম্ভব। কারণ, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, সরকারে থাকা কিছু মানুষের জন্য নয়। এছাড়া বাংলাদেশে হত্যাকাণ্ড বন্ধে তিনি বিদেশিদের প্রতি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন ড. ইউনূস। বর্তমানে অলিম্পিক গেমসের স্পেশাল গেস্ট হিসেবে তিনি প্যারিসে অবস্থান করছেন। সেখানে সাক্ষাৎকারটি নেন সাংবাদিক সুহাসিনী হায়দার। এখানে তা তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন: বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনি কি শুনেছেন আমাদেরকে যদি একটু বলেন। আপিলেট কোর্টের নতুন রায়ের পর দৃশ্যত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে...

ড. ইউনূস: বিষয়টি এমন না যে, আমি (অলিমিপকের বিশেষ অতিথি হিসেবে প্যারিসে) আসার পরে ঘটেছে। (ঘটনার সময়) আমি সেখানে ছিলাম। কারফিউয়ের মধ্যে আমি বিমানবন্দরে গিয়েছি। পরিস্থিতিকে সরকার এমনভাবে দেখাচ্ছে যেন বিদেশি কোনো সেনা বাংলাদেশে আগ্রাসন চালিয়েছে। তাই সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীকে বুলেটসহ নামানো হয়েছে বিক্ষোভকারীদের দমিয়ে রাখতে। তারা তাদেরকে (ছাত্র) পরাজিত করার মুডে ছিলেন, তারা শৃঙ্খলা ফেরানোর মুডে ছিলেন না। ফলে যা ঘটেছে, সেটা কি? কেন তারা সবরকম বাহিনীকে নামিয়েছে? সরকার কি একটি বিদেশি শক্তি যে বুলেট দিয়ে স্থানীয়দের দমন করছে? তারা তো আপনার নিজের দেশের নাগরিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তারা তো সমাজের শীর্ষ শতকরা একভাগ। তারা দেশকে পরিচালনা করতে প্রস্তুত। তারা যেন অন্য দেশের শক্তি হিসেবে বাংলাদেশে আগ্রাসন চালাচ্ছে, তাই তাদেরকে আপনি হত্যা করছেন। দেখামাত্র গুলি করা হচ্ছে। সুতরাং এটাই হলো পরিস্থিতি, যা বাংলাদেশে উদ্ভব হয়েছে। তাই আমি বিশ্বনেতাদের প্রতি অনুরোধ করেছি এটা দেখতে যাতে এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা যায়। এ দৃশ্য আমি আর দেখতে পারছিলাম না। বাংলাদেশের মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ সন্ত্রাসের মধ্যে বসবাস করছে., এটা দেখতে পারছিলাম না। গণতন্ত্র সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয় জনগণের জীবনে। গণতন্ত্র হলো জনগণকে সুরক্ষা দেওয়া। সব মানুষকে- ধর্ম, রাজনৈতিক মতামত অথবা অন্য যেকোনো মতবিরোধ থাকলেও তাদেরকে সুরক্ষা দেওয়া হলো গণতন্ত্র। যদি একজন নাগরিক অন্য একজনকে হত্যা করতে যায়, তাহলে যিনি হামলার শিকার হচ্ছেন তাকে সুরক্ষিত রাখা হলো রাষ্ট্রের প্রথম দায়িত্ব। হামলাকারীকে হত্যা করা হলো এক্ষেত্রে শেষ বিকল্প, প্রথম নয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার সেভাবেই সাড়া দিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা কাউকে হত্যা করতে যাননি। তাদের দাবি সরকারের জন্য সন্তোষজনক না-ও হতে পারে। কিন্তু তাতেও তাদেরকে হত্যা করার অনুমোদন দেয় না সরকারকে।

 

প্রশ্ন: এ ঘটনায় আপনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে, জাতিসংঘকে জড়িত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে তারা কি পদক্ষেপ নেবে বলে আপনি মনে করেন?

ড. ইউনূস: কোনোরকম আনুষ্ঠানিক সাড়া পেতে চাইনি। আমি আশা করেছিলাম, তারা (আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়) তাদের অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক এবং চ্যানেল ব্যবহার করে আমাদের নেতাদের বিরত রাখতে পারবেন। গণতন্ত্রের আদর্শ থেকে সরে যাওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে তাদের অবহিত করবেন। বন্ধুপ্রতিম অ্যাকশনের দিকে শুধু ফোন হাতে নিয়ে বলতে পারতেন- বাংলাদেশে কি ঘটছে? বন্ধু বন্ধুর জন্য যা করে তা হলো পরিস্থিতিকে ঠাণ্ডা করা, যা জনগণের জীবন রক্ষায় সহায়ক হয়। নেতাদের বন্ধু আছেন। বন্ধু হিসেবে কিছু করা যায়। সংকটের সময়ে যদি আপনি ভালো পরামর্শ না দেন, তাহলে আপনি কেমন বন্ধু?

প্রশ্ন: ভারত ও বাংলাদেশ ঐতিহাসিক বন্ধু। ভারত এরই মধ্যে একটি বিবৃতি দিয়েছে। তারা বলেছে, এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

ড. ইউনূস: সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে প্রকাশ্যে আপনি এভাবে বলতে পারেন। কিন্তু আপনার বন্ধুত্বকে প্রাইভেটলি ব্যবহার করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীরা একে-অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, যদি তারা দেখেন যে, অন্যায় কিছু ঘটছে। এখনো সার্কের স্বপ্ন আছে আমাদের। একে-অন্যকে সহায়তা করতে পারি আমরা। একে-অন্যের বিষয়কে সহজ করতে পারি। আমাদের মধ্যে প্রাকৃতিক বন্ধন আছে। যদি কোনো ঘটনা একটি দেশে ঘটে, তখন তা সহজেই অন্য দেশে দেখা দিতে পারে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনী এবং একটি বাহিনী হত্যা করছে নিরপরাধ মানুষকে। এ এক অত্যন্ত ভয়াবহ অবস্থা। ছাত্রদের বিক্ষোভকে মোকাবিলা করতে আপনাকে কেন সেনাবাহিনী নামানোর প্রয়োজন হলো। এখন আপনি বলতে পারেন, কিছু শত্রু ভেতরে ঢুকে পড়েছিল। এই শত্রু কারা? শিক্ষার্থীদের হত্যা না করে ওইসব শত্রুকে শনাক্ত করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। একটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন এমন হওয়া উচিত নয়।

প্রশ্ন: ১৯৭১ সালকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদীদের কোটা নিয়ে সুনির্দিষ্ট উদ্বেগ আছে। ভারতের উদ্বেগ হলো, এই প্রেক্ষাপটে ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা কতটুকু সত্য বলে মনে করেন আপনি?

ড. ইউনূস: এক্ষেত্রে কল্পনা সুদূরপ্রসারী হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোটা আন্দোলন একেবারে হালকা বিষয় নয়। ইস্যু হলো গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, বিচার বিভাগের ভূমিকা। মত প্রকাশের অধিকার থাকে জনগণের। তাদের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে হত্যা করার অধিকার নেই সরকারের।

প্রশ্ন: বিক্ষোভকারীদের যেভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে আপনি তাতে আপত্তি করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বলছে যে, বিক্ষোভকারীরা নিজেরাই সহিংস হয়ে উঠেছিলেন। তারা পুলিশ পোস্টগুলোতে পিকেটিং করছিলেন...

ড. ইউনূস: আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আপনি কি ব্যবস্থা নেবেন তার একটা প্রক্রিয়া আছে। কোথাও বলা নেই যে, আপনি একের পর এক তাদেরকে হত্যা করতে পারেন। বিশ্বে এটাই প্রথমবার নয়, যেখানে একটি সরকার বিক্ষোভকারীদের মোকাবিলা করছে। নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের হাত উত্তোলিত থাকা অবস্থায় তাদেরকে খুব কাছ থেকে গুলি করতে দেখেছি পুলিশকে। কারণ, এই পুলিশকে গুলি করে হত্যার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আমরা এ সবই দেখছি। বিক্ষোভকারীরা যদি আইনভঙ্গ করেন তাহলে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য মানসম্পন্ন প্রক্রিয়া আছে। বাংলাদেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র চর্চার মধ্যে কিছু ভয়াবহ ভুল আছে। আমাদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ঠিক হবে না। আমরা সার্কের সদস্য। আমরা প্রতিবেশী। কী ঘটছে তা দেখতে সব মিডিয়ার আসা উচিত ও দেখা উচিত। সবার আগে তারা (বাংলাদেশ সরকার) যেটা করেছে তা হলো সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছে, যাতে অন্ধকারে তারা সবকিছু ধামাচাপা দিতে পারে। দেশের বাইরে থেকে এমন কি দেশের ভেতর থেকে কেউ যেন কিছু দেখতে না পায়। কেন তারা নিজেদের জনগণ থেকে এত ভীত?

প্রশ্ন: শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিগুলোর একটি তালিকা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, তাদেরকে রাজাকার বলার কারণে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে, তার মন্ত্রীদের পদত্যাগ করতে হবে।

ড. ইউনূস: এসব হলো শিক্ষার্থীদের দাবি। এসব বিষয়ে সরকার সাড়া দিয়েছে। এটা সেভাবে হয়নি।

প্রশ্ন: এ বছর জানুয়ারিতে নির্বাচনে জয় পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখনই পদত্যাগের আহ্বান জানানো অগণতান্ত্রিক নয় কি?

ড. ইউনূস: গণতন্ত্রের প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতিবন্ধ এবং গণতন্ত্র নিয়েই থাকতে চাই। আপনি ফ্রেশ নির্বাচিত হোন বা না হোন, অথবা জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে আপনার পদের লঙ্ঘন করছেন, গণতন্ত্রে এটা কোনো বিষয় নয় যে- আপনি জনগণকে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাদেরকে হত্যার নয়। বিরোধী দলের কিছু মানুষকে তুলে নিয়ে যেতে পারেন না, যাতে তাকে গ্রেপ্তার করা যায়। একটি কল্পিত ক্রাইমে তাকে অভিযুক্ত করতে পারে সরকার, গ্রেপ্তার করতে পারে। তাকে জেল দেওয়া হতে পারে। এটা আইনের শাসন নয়। গণতান্ত্রিক আদর্শে কোনো প্রক্রিয়া চালানোর কিছু নিয়ম আছে।

প্রশ্ন: এর বাইরে এসব বিক্ষোভের ভবিষ্যৎ কি?

ড. ইউনূস: যদি গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়, তাহলে আপনি আবার জনগণের কাছে তাদের ম্যান্ডেট নিতে যেতে পারেন। সেটা জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য। কিন্তু এই মুহূর্তে সরকারের এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।

প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন সরকারের পদত্যাগ করা উচিত?

ড. ইউনূস: গণতান্ত্রিক কাঠামোর অধীনে এমন পরিস্থিতির উদয় হলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হয়। সব সমস্যার সমাধান আছে গণতন্ত্রে। এ বিষয়ে আপনাকে নতুন করে রায় দেওয়ার জন্য আমার কাছে কিছু নেই।

প্রশ্ন: পরিস্থিতির উন্নতি করার জন্য আপনি কি কোনো ভূমিকা রাখতে পারেন?

ড. ইউনূস: আমি এখন সেই ভূমিকাই রাখছি। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করছি।

প্রশ্ন: আপনার বিরুদ্ধে প্রায় ২০০ অভিযোগ আছে সরকারের। শ্রম আইন ইস্যুতে আপনাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আরও নতুন দু’টি মামলা আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াইটা কি (আপনার) ব্যক্তিগত?

ড. ইউনূস: এই মামলাগুলোও আইনের শাসনের ব্যর্থতা। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো হলো আত্মসাৎ, জালিয়াতি এবং অর্থ পাচার সম্পর্কিত। এর অর্থ হলো- আমার নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে আমি অর্থ চুরি করেছি। এসব সরকারের অভিযোগ। এ সবই বানোয়াট কাহিনী, সবই বানানো। অনেক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন বলেছে, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। এসব মামলা করা হয়েছে আমাকে হয়রানি করার জন্য। শ্রম অধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কিত মামলায় এরই মধ্যে আমাকে ৬ মাসের জেল দেওয়া হয়েছে। এটিও একটি বানোয়াট মামলা।

প্রশ্ন: আপনি বলছেন গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। কি এমন আছে আপনি মনে করেন যে, তা এই অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে, গণতন্ত্রে আনতে পারে?

ড. ইউনূস: জনগণের ম্যান্ডেট নিন, অবাধে এবং সুষ্ঠুভাবে। এটাই। জনগণের নির্দেশনায় গণতন্ত্রের সমস্যার প্রতিকার সম্ভব। কারণ, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, সরকারে থাকা কিছু মানুষের জন্য নয়।

প্রশ্ন: আপনি কি আরেকটি নির্বাচনের কথা বলছেন?

ড. ইউনূস: অবশ্যই, সব রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হলো নির্বাচন। যখন কোনো বিষয় কাজ করে না, তখন আপনাকে জনগণের কাছে যেতে হয় তাদের নির্দেশনা পেতে। আদতে তারাই দেশের মালিক। নিশ্চিত করতে হবে যে, সেই নির্বাচন একজন জাদুকরের নির্বাচন না হয়ে হবে একটি খাঁটি নির্বাচন।

প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে এবং বিক্ষোভ আবার ফিরতে পারে। আপিল আদালত তো কোটা কমিয়ে এনেছেন?

ড. ইউনূস: সরকার দাবি করছে যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, মৌলিক রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। অস্থায়ী ভিত্তিতে হয়তো থেমে আছে। কিন্তু রাজনৈতিক ইঞ্জিন দৌড়াতেই থাকবে। তা মুহূর্তের নোটিশে নতুন করে শুরু হয়ে যেতে পারে। আজ বাংলাদেশে যা ঘটছে এমনও হতে পারে ভারতেও তা ঘটতে পারে। যদি আপনি এখন কথা না বলেন, তাহলে এই দিনকে আপনি ভারত, নেপাল, পাকিস্তান অথবা সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলোর খুব কাছে নিয়ে যাচ্ছেন।

জালিমদের ব্যাপারে ইসলাম যা বলে

ছবি: সংগৃহীত

জুলুম অর্থ অত্যাচার হলেও এর অর্থ ইসলামে ব্যাপক। সাধারণত কারও ওপর অন্যায় আচরণ করা, কারও হক নষ্ট করাকে জুলুম বলা হয়। ব্যাপক অর্থে জুলুম মানে হলো কোনো জিনিসকে এমন জায়গায় রাখা যেখানে তা থাকার কথা ছিল না।

আল্লাহ রাব্বুল আলআমিন পবিত্র কোরআনে বলেছেন ‘আমি জালিমদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি অগ্নি, যার বেষ্টনী তাদের পরিবেষ্টন করে রাখবে, তারা পানীয় চাইলে তাদের দেয়া হবে গলিত ধাতুর মতো পানীয়, যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে, এটি কত নিকৃষ্ট পানীয়, জাহান্নাম কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয়।’ (সুরা কাহফ ২৯)

যে ব্যক্তি জুলুম করে তাকে জালেম বলা হয়। আল্লাহ তা‘আলা জালেমদের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘জালিমদের কোনো বন্ধু নেই এবং সুপারিশকারীও নেই, যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে।’ (সুরা মুমিন: ১৮)

জুলুমকে আল্লাহ তা‘আলা নিজের জন্য হারাম করে নিয়েছেন মর্মে হাদিসে কুদসিতে নবীজি ঘোষণা করেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজের জন্যে জুলুম করা হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও জুলুম হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা একজন অন্যজনের উপর জুলুম করো না।’ (মুসলিম, তিরমিজি)

জালেমদের প্রতি সতর্কবার্তা

জালেমরা এত জুলুম করেও কেন পার পেয়ে যায়, সে ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তুমি কখনও মনে করো না যে, জালিমরা যা করছে সে বিষয়ে মহান আল্লাহ উদাসীন। আসলে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদের অবকাশ দেন, যেদিন সব চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। ভীত-বিহ্বল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে তারা ছুটাছুটি করবে, আতঙ্কে তাদের নিজেদের দিকেও ফিরবে না এবং তাদের অন্তর হবে (ভয়ানক) উদাস।’

সেদিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক করো যেদিন তাদের শাস্তি আসবে, যেদিন জালিমরা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের কিছুকালের জন্য অবকাশ দাও, আমরা তোমার আহ্বানে সাড়া দেব এবং রসুলদের অনুসরণ করব। (তখন তাদের বলা হবে,) তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের কোনো পতন নেই? (সুরা ইবরাহিম ৪২-৪৪)

জুলুমের শাস্তি

জালেমদের শাস্তির ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমি জালিমদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি অগ্নি, যার বেষ্টনী তাদের পরিবেষ্টন করে রাখবে, তারা পানীয় চাইলে তাদের দেয়া হবে গলিত ধাতুর মতো পানীয়, যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে, এটি কত নিকৃষ্ট পানীয়, জাহান্নাম কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয়।’ (সুরা কাহফ ২৯)

এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, ‘তাদের সতর্ক করে দাও আসন্ন দিন (কেয়ামত) সম্পর্কে যখন দুঃখকষ্টে তাদের প্রাণ কণ্ঠাগত হবে। জালিমদের জন্য কোনো অন্তরঙ্গ বন্ধু নেই এবং যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে এমন কোনো সুপারিশকারীও নেই।’ (সুরা মুমিন ১৮)

আর্টিকেল: মাওলানা নোমান বিল্লাহ

সর্বশেষ সংবাদ

সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৪তম জন্মদিন আজ
বাংলাদেশে নতুন নির্বাচনের দাবি ড. ইউনূসের
জালিমদের ব্যাপারে ইসলাম যা বলে
ডিবি হেফাজতে নাহিদসহ কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক
আগামীকাল চালু হতে পারে মোবাইল ইন্টারনেট
'আমাকে নিয়ম শেখানোর দরকার নেই, ওরাই শিখে নিক'
‘দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা’
দুর্নীতির দায়ে রাশিয়ার সাবেক প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী গ্রেপ্তার
আজও ঢাকাসহ চার জেলায় কারফিউ শিথিল
আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
সহিংসতার অভিযোগে ঢাকায় ২০৯ মামলায় গ্রেপ্তার ২৩৫৭
‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার বাইরে বাকি ৯৫ শতাংশ নিয়ে আদালতে বোঝাপড়া করব’
কোটা আন্দোলনে নিহত রুদ্রের নামে শাবিপ্রবির প্রধান ফটকের নামকরণ
সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসা-রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী
এক সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৬ কোটি টাকা লোকসান
পাকিস্তানের ইসলামাবাদ-পাঞ্জাবে ১৪৪ ধারা জারি
রিমান্ড শেষে কারাগারে নুরুল হক নুর
ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই সরকারের: মির্জা ফখরুল
নরসিংদী কারাগার থেকে লুট হওয়া ৪৫ অস্ত্র উদ্ধার
বাংলাদেশকে ১০ উইকেটে হারিয়ে নারী এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারত