তিন শতাধিক এলাকায় বিশেষ নজরদারি বৃদ্ধি ডিএমপির
রাজধানীর ৩ শতাধিক এলাকায় বিশেষ নজরদারী বৃদ্ধি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। পুলিশ বলছে, নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রমজানের মধ্যে কেনাকাটা ও ঈদকে সামনে রেখে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সাদা পোশাকেও গোয়েন্দারা বিশেষ টহল দিচ্ছে।
সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেও এমন তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। পেট্রল পাম্প, মার্কেট এলাকা, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ নজরদারি করছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠ পর্যায়ের পুলিশসহ সরকারী বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করতে একটি বিশেষ মহল নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত হতে পারে বা হচ্ছে এমন তথ্য পেয়ে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে রমজানের কেনাকাটা ও ঈদকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় প্রস্তুতির কথা বলছে পুলিশ।
ডিএমপির সদরদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশেষ করে পুরো রাজধানীর প্রায় ৩ শতাধিক স্থান চিহ্নিত করে পুলিশের অতিরিক্ত নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। অবশ্য এসব বিষয় নিয়ে সম্প্রতি পুলিশ সদরদপ্তরের মাসিক ক্রাইম কনফারেন্সে আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনও বিশেষ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে।
জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, রোজা এবং ঈদকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে নাশকতা করতে না পারে সে জন্য সারা ঢাকাতে প্রায় ৩ শতাধিক স্থানে অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে কোন গোষ্ঠি যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না করতে পারে সে জন্য তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, এক্ষেত্রে পুলিশ পেট্রল পাম্প, মার্কেট এলাকা, ও স্কুল-কলেজসহ জনসমাগম হয় এমন সব স্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকের গোয়েন্দারাও মাঠে রয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৩ সাল জাতীয় নির্বাচনের বছর। ঈদের পর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ সময়টাতে রাজধানীসহ সারাদেশেই একটি চক্র অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করে। সম্প্রতি গোয়েন্দা গোয়েন্দা সংস্থা এ রকম আশঙ্কার কথা জানিয়ে প্রতিবেদন দাখিলের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, চিহ্নিত ৩ শতাধিক স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-মহাখালী, মিরপুর, কাফরুল, পল্লবী, শাহআলী, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, খিলগাঁও, সবুজবাগ, যাত্রাবাড়ী, কোতোয়ালি, লালবাগ, বাড্ডা, যাত্রবাড়ী ডেমরা থানা। এসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। মিরপুর এলাকায় মিরপুর, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর, ইব্রহীমপুর, মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ, কাঁটাসুর, বিহারিপট্টি এলাকায় অপরাধের মাত্রা এখন বেড়ে যাচ্ছে।
এছাড়া ৩ শতাধিক স্থানের মধ্যে রয়েছে ভাষানটেক, মানিকদী, কচুক্ষেত, পল্লবী থানার বাউনিয়া বাঁধ, বিহারি কলোনি, সবুজবাগ ও খিলগাঁও থানা এলাকার মান্ডা, ঝিল প্রজেক্ট এলাকা, নন্দীপাড়া, মানিকনগর, ত্রিমোহনী এবং নাসিরাবাদ।
এছাড়া, মতিঝিল থানার এজিবি কলোনি, শাহজাহানপুর, ফকিরাপুল, রেলওয়ে কলোনি, গোপীবাগ, টিটিপাড়া, রামপুরা থানার বনশ্রী, বাড্ডা থানা এলাকার নূরের চালা, বেরাইদ, ছোলমাইদ, শাহজাদপুর, খিলক্ষেতের নামাপাড়া, কুড়িল, নিকুঞ্জ এলাকা, উত্তরা থানার উত্তরা, উত্তরখান ও দক্ষিণখান থানা এলাকার মৈনারটেক, আটিপাড়া এলাকায় অপরাধ বেশি সংঘটিত হচ্ছে। ডেমরা, সানারপাড়, বড়বাড়ি, ভবনবাগিচা, মুরাদপুর, সারুলিয়া, টেংবা, কোনাপাড়া, শহীদনগর, শ্যামপুর ওয়াসা পুকুরপাড়, মিরহাজিরবাগ, ফরিদাবাদ, কুতুবপুর, আজিরপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছৈ।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সম্প্রতি বলেন, রমজানের মধ্যে কেনাকাটা ও ঈদ উপলক্ষ্যে নানা গোষ্ঠি অপতৎপরতায় লিপ্ত। পাশাপাশি ছিনতাই, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টিসহ অন্যান্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে বিশেষ নজরদারি বাড়াতে হয়েছে। কেউ যেন ধর্মীয় উসকানি দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে সেজন্য পুলিশের মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা স্পর্শকাতর স্থান চিহ্নিত করে নজরদারি বাড়িয়েছি। পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করছে। বিভিন্ন মার্কেট এলাকায় আমরা অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি।
শাহ আলী থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ পাওয়ার পর থানা এলাকায় বিশেষ নজরদারী বাড়নো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে আমরা পোশাকে ,সাদা পোশাকে টহল বাড়িয়েছি।
পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, মিরপুর বিভাগের মধ্যে অন্যতম পল্লবী থানায় নাশকতা রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চুরি ছিনতাই রোধে প্রতিদিন অভিযান চলছে। অপরাধপ্রবণ এলাকাকে ঘিরে নজরদারী বাড়ানো হয়েছে।
রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। থানা এলাকার রামপুরা বাজার, টিভি রোড, তিতাস রোডসহ আশপাশের এলাকায় বিশেষ নজরদারী বাড়ানো হয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে ডিএমপির শুধু ৩ শতাধিক এলাকায় নয়, প্রায় সকল স্থানে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা ও বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে নগরবাসী যাতে স্বাছন্দে কেনাকাটা ও চলাফেরা করতে পারে সেই জন্য এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ডিএমপি।
আরইউ/এএস