আস্থার সংকটে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন
যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছলেও অবিশ্বাস আর আস্থার সংকটে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী সমমনা দলগুলো ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারছে না। জাতীয় সরকার গঠন ইস্যুতেই সংকট সবচেয়ে বেশি। সরকার পতনের আগেই জাতীয় সরকারের বিষয়টি ফয়সালা করতে চায় সমমনা দলগুলো।
কিন্তু বিএনপি এই ইস্যুতে নীরব। অপরদিকে সামনে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নানান হিসাব-নিকাশ হবে। এই অবস্থায় বিএনপি দেখতে চাচ্ছে চলমান যুগপৎ আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত কারা কারা তাদের সঙ্গী হিসেবে থাকছে। এসব কারণে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন খুব একটা গতি পাচ্ছে না।
এদিকে, বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন করে মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। পদ-পদবির বাইরে থাকা নেতা-কর্মীরা মাঠে নামতে চাচ্ছে না। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যেও আন্দোলন ইস্যুতে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রমজানে ইফতার কেন্দ্রিক রাজনীতিতে সক্রিয় বিএনপি আগামী ১ এপ্রিল থেকে নতুন কর্মসূচি নিয়ে আবার মাঠে নামবে। সেই কর্মসূচিতে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক দলগুলোর মাঠের কর্মসূচি নজরদারি করবে বিএনপি। নির্বাচন সামনে রেখে নানা মেরুকরণ মোকাবিলায় সর্তকভাবে এগোতে চাইছে বিএনপির হাইকমান্ড। আগামী ১ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে গৃহীত মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি সফল করতে দিক নির্দেশনা দিয়েছে দলে হাইকমান্ড।
যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল, এলডিপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, গণফোরামের একাংশসহ শরিক দলগুলো নিজ নিজ ব্যানারে কর্মসূচি পালন করে আসছে। এর মধ্যে লেবার পার্টি জোট থেকে বের হয়ে আলাদা ভাবে কর্মসূচি পালন করছে।
প্রথমদিকে বিএনপির যুগপৎ কর্মসূচিতে মাঠে ছিল জামায়াত। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল কর্মসূচী চলাকালে রাজধানীর মৌচাকে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ ও জামায়াতের কয়েকজন আহত হন। গ্রেপ্তার করা হয় দলটির কয়েকজন কর্মীকে। ওই ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেওয়া বা খোঁজখবর না নেয়ায় জামায়াত আবারো মনোক্ষুণ্ন হয়। নতুন করে ভাবতে শুরু করে জামায়াত। পরবর্তীতে যুগপৎ আর কোনো কর্মসূচিতে সারাসরি অংশ নেয়নি দলটি। এসব কারণে বিএনপির সঙ্গে জোট শরিকদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এই মুহূর্তে কর্মসূচিতে যে সব রাজনৈতিক দল একমত পোষণ করে মাঠে নেমেছে তারাই যুগপৎ আন্দোলনে থাকবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণতন্ত্র মঞ্চের একজন দায়িত্বশীল নেতা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, কর্মসূচি যাই ঘোষণা করা হোক না কেন? চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে হলে সরকারবিরোধী দলগুলোকে একে অপরের প্রতি আস্থা বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। এখনো আস্থার সংকট রয়েছে, এটা যতদ্রুত সমাধান হবে যুগপৎ আন্দোলনও তত দ্রুত একটি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে। কিন্তু চলমান কর্মসূচি দেখে আমার তো মনে হচ্ছে, জাতীয় সরকার ব্যবস্থা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হবে নাকি; নির্বাচনের পর সেই সিদ্ধান্তেই আটকে আছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলটির নেতারা যে বৃহৎ ঐক্য গড়ার কথা বলছেন, সেই যুগপৎ আন্দোলনের সাংগঠনিক ভিত্তি-কাঠামো কী হবে তাই চূড়ান্ত করতে পারছে না।
তিনি বলেন, এখন আন্দোলনকে চূড়ান্ত পথে নিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত সময়। কিন্তু বিএনপি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ইফতার রাজনীতিতে। দলগুলোকে এখনো এক জায়গায় নিয়ে আসতে পারছেন না বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। বরং দলটির ভেতরেই অভ্যন্তরীণ কোন্দল চলছে। দলের নেতারা আগামী নির্বাচন ও আন্দোলন ইস্যুতে আস্থা সংকটে ভুগছে বলে রাজনীতির মাঠে গুঞ্জন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। তাই যুগপৎ আন্দোলনকে চূড়ান্ত পথে টেনে নিতে বিএনপিকেই উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। আন্দোলন ইস্যুতে কথা বলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। আমি মনে করি, প্রত্যেকটি দল ও জোটের আলাদা স্বতন্ত্র অক্ষুণ্ন রেখেই কমন ইস্যুতে একটা যুগপৎ ও সমন্বিত ধারায় আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এখনো চূড়ান্ত কিছুই হয়নি। সার্বিক বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একে অপরের সঙ্গে আরও আলোচনা করতে হবে।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, চূড়ান্তভাবে যুগপৎ আন্দোলন যেতে একটু সময় লাগছে। কারণ, অনেক অভিন্ন ইস্যুকে এক ইস্যুতে রূপান্তর করতে হলে কিছুটা সময় নিয়েই বিভিন্ন দল ও জোটগুলোর সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে। এরপরে আন্দোলনের ধরন-কৌশল কেমন হবে-এ সব প্রস্তুতি নিতেও সময় লাগবে।
যদিও বিএনপি নেতাদের ভাবনায় এখন যুগপৎ আন্দোলন। তাই রাজনৈতিক জোট গঠনের চেয়ে যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে দলটি।
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আন্দোলনকে কীভাবে আরও গতিশীল করা যায়, তা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। যাতে করে একটি স্থির সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হওয়া সহজ হয়।
এনএইচবি/এমএমএ/