ই-মেইল অ্যাকাউন্ট খোলার প্রকল্প এখন ১৭৮ কোটি টাকা!
সরকারি দুই লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য নিরাপদ ই-মেইল অ্যাকাউন্ট খোলার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এ জন্য ২০১৮ সালে ১১৬ কোটি টাকার তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প নিয়েছিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্ত বিভাগ।
কিন্তু সেই কাজ শেষ হয়নি গত পাঁচ বছরেও। বরং দুই দফায় প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়েছে। পাল্লা দিয়ে ব্যয় বেড়েছে। এখন এই প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় বেড়েছে ৫২ কোটি টাকা। ফলে ১১৬ কোটি টাকার প্রকল্প গিয়ে ঠেকেছে ১৭৮ কোটি টাকায়। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ: ভিশন ২০২১’ নিশ্চিত করতে সরকারি ‘কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপদ ই-মেইল ও ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। ১১৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি ২০১৮ সালে অনুমোদনও দেয় সরকার। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল দুই লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিরাপদ ই-মেইল অ্যাকাউন্ট প্রদান করা। প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে নিরাপদ ই-মেইল ও তথ্য সংরক্ষণ সেবা, জনসাধারণকে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে অবহিতকরণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া উন্মুক্ত তথ্য বিশ্লেষণ কেন্দ্র জনতার সরকার চালুকরণ।
প্রকল্পটির কাজ শেষ করার সময়কাল ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু পাঁচ বছরেও সেই কাজ শেষ হয়নি। বরং দ্বিতীয়বারের মত প্রকল্প সংশোধন করে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
ইতিমধ্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান দ্বিতীয় দফায় প্রকল্পের সংশোধিত অনুমোদন দেন গত বছরের ২৭ মার্চ। আর অনুমোদনের এক বছর পর অবগতির জন্য গত ১২ মার্চ প্রকল্পের সংশোধিত প্রস্তবাটি একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়।
এর আগে ২০২১ সালে ৭ এপ্রিল প্রকল্পটি প্রথম দফা সংশোধন করা হয়। তখন সময বাড়ানো হয় এক বছর। ব্যয়ও বাড়ে ২৮ কোটি টাকা। ওই সময়ও পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সংশোধনী প্রস্তাবটি অনুমোদনও দেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ডাটা সেন্টারের ইনচার্জ প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল আলম খান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এটি অনেক আগে সংশোধন হয়েছে। কাজও প্রায় শেষের দিকে। সুনির্দিষ্ট করে বললে ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের আওতায় দুই লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারির নিরাপদ ই-মেইল অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। সবার ই-মেইল কভার হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যেই এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কয়েকটি কারণে মাঝে সংশোধন করতে হয়েছে। এতে সময় ও অর্থ দুই বেড়েছে। এবার নির্ধরিত সময়েই কাজ শেষ হবে।'
এদিকে কম্পিউটার কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে বাস্তবায়ন অগ্রগতির ব্যাপারে বলা হয়েছে-প্রকল্পটি শেষ করতে নিরাপদ ই-মেইল এর প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার সংগ্রহের লক্ষ্যে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইতিমধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। শিগগির জাতীয় ডাটা সেন্টারে এ হার্ডওয়্যারের উন্নয়ন এর কাজ শুরু হবে। নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য আইটি সিস্টেম এবং রিলেটেড হার্ডওয়্যার সংগ্রহের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থার চাহিদা নিরূপনের জন্য আলোচনা চলমান রয়েছে। সেটিও শিগগির সংগ্রহ করা হবে।
ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার অ্যান্ড ওপেন ডাটা অ্যানালাইসিস এর টিওআর প্রস্তুতের জন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর রোবোটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স বিভাগ এবং অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি কাজ করছে। ওয়েবসাইটে এখনো প্রকল্পের ব্যয় ১১৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা ও মেয়াদ ২০২০ পর্যন্ত দেখানো হচ্ছে।
এদিকে পরিকল্পনা কমিশনের সূত্র বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের এক পর্যায়ে কিছু নতুন অঙ্গের অন্তর্ভূক্তি ও সমন্বয় করার ফলে ব্যয় বাড়ছে। তাই দ্বিতীয়বারের মতো সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়। তাতে ব্যয় বেড়ে দাঁয়িছে ১৭৮ কোটি টাকা। আর সময় বাড়ানো হয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তিন বছর বেশি সময় চেয়ে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়।
এনএইচবি/এমএমএ/