ভাঙ্গা-বেনাপোল চার লেন প্রকল্প
দৈর্ঘ্য কমলেও ব্যয় বেড়েছে ১২১৬ কোটি টাকা
ভাঙ্গা থেকে যশোর মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে দৈর্ঘ্য চার কিলোমিটার কমিয়েও ব্যয় কমানো যায়নি। বরং ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ২১৬ কোটি টাকা। আগে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এখন প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলি স্থানান্তর সংশোধিত প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই এই ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে সর্বমোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর সুফল কাজে লাগাতে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয় ২০২০ সালে। পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় যাচাইবাছাই শেষে বিভিন্ন অসঙ্গতি ধরা পড়ে। তাই জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ব্যয় প্রাক্কলনের তালিকা অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় নির্ধারণ ও ক্ষতিপূরণ ব্যয় আলাদা করাসহ কিছু সিদ্ধান্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করে প্রস্তাবটি ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু দীর্ঘ দুই বছর পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সংশোধিত ডিপিপি সম্প্রতি কমিশনে পাঠালেও কোনো সুপারিশই আমলে নেওয়া হয়নি। বরং সংশোধিত প্রস্তাবে ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। এই ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।
সংশোধিত প্রস্তাব যাচাই-বাচাই করতে পরিকল্পনা কমিশনে গত ৫ মার্চ দ্বিতীয় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভা থেকেও প্রকল্পটির প্রস্তাব সংশোধন করার কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রকল্পের স্বার্থে যেটুকু জমি দরকার সেটুকুই অধিগ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন বাধ্যতামূলক প্রতিপালন করতে হবে। এ ছাড়াও খরচের বিভিন্ন জায়গায় সংশোধন করতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর আগে প্রথম ডিপিপিতে চার লেনের সড়কের সঙ্গে ধীরগতির পৃথক লেনসহ মোট ছয় লেনের সড়কের এর দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছিল ১৩৩ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার। তাতে ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছিলো ৮১৬ একর। এজন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর সংশোধিত ডিপিপিতে চার কিলোমিটার কমিয়ে ১২৯ কিলোমিটার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ৪৫০ বিঘা বাড়িয়ে ৯৬৭ একর বা ২ হাজার ৯০১ বিঘা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১ হাজার ২১৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ৪ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এভাবে সিদ্ধান্ত না মানা অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে সব কিছুর খরচ কমাচ্ছে সরকার।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সাবেক সদস্য (সচিব) আরস্ত খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, দেখেন, সরকার প্রধান যা বলেন তা করতে হয়। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ না করলে খুবই দুঃখজনক। কারণ বৈশ্বিক কারণে সব ক্ষেত্রে সরকার ব্যয় কমাচ্ছে। যেহেতু আমি বিস্তারিত কিছু জানি না। তবে এই প্রকল্পে কেন ব্যয় বাড়ছে তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।
জানা গেছে, পিইসি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ব্যয় প্রাক্কলন সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে। একই সঙ্গে ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্রয় অঙ্গের পরিবর্তে শুধু ভূমি অধিগ্রহণ উল্লেখ করতে হবে। একইসঙ্গে ক্ষতিপূরণ ব্যয় জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করে ব্যয় প্রাক্কলনসহ ক্ষতিপূরণ অঙ্গটি আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হবে।
কিন্তু সংশোধিত ডিপিপিতে ক্ষতিপুরণ ও ভূমি অধিগ্রহণ একই সঙ্গে দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে ইউটিলিটি অপসারণের চাহিদা সংগ্রহ করে ব্যয় প্রাক্কলণের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও ইউটিলিটি স্থানান্তরে থোক ২১৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এ ছাড়া ১৩০ কিলোমিটার সীমানা পিলার স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও বৃক্ষরোপণে ২০ লাখ টাকা।
পিইসি সভায় আরও অনেক ক্ষেত্রে অসঙ্গতি তুলে ধরে সেগুলো সংশোধন করতে বলা হয়। এরমধ্যে মুদ্রণ ও বাঁধাই অঙ্গে ব্যয় কমিয়ে ৪ লাখ টাকা, স্টেশনারিতে ৮ লাখ, পিইসি, পিআইসিসহ বিভিন্ন কমিটির সম্মানির জন্য ৪ লাখ টাকা প্রাক্কলন করতে বলা হয়। প্রকল্পে পরামর্শক সেবা ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৪ কোটি টাকা।
সওজ সূত্র জানায়, ১২৯ দশমিক ১৭ কিলোমিটার সড়কটি ছয় লেনে নির্মিত হলে বেনাপোল হয়ে ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে বছরে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। একই সঙ্গে বেনাপোল হয়ে কলকাতা ও ঢাকার মধ্যে দূরত্ব ও সময় কমবে। বেনাপোল থেকে ঢাকার দূরত্ব কমবে ৮৬ কিলোমিটার। কিন্তু একনেক সভায় অনুমোদনের আগেই কেটে গেছে কয়েক বছর।
গুরুত্ত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের সংশোধিত প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, কনসালটেন্টের ডিজাইন অনুযায়ী ডিসি অফিসে একটা ধারণা চাওয়া হয়েছিলো। সেটাই পিডিপিতে উল্লেখ করা হয়েছিলো। কিন্তু এটা অধিগ্রহণকৃত দাম না। এটা করা হয়নি। কোনোক্রমেই বাড়তি জায়গা নেওয়া হবে না। ডিসি অফিস থেকে রেটটা বলে দিয়েছে। এটা কমতে পারে, আবার বাড়তেও পারে। কারণ সিস্টেম অনুযায়ী অধিগ্রহণ করার সময় তাদের অর্থ পরিশোধ করতে হবে। ৭ ধারার নোটিশ অনুয়ায়ী তারা মৌজার রেট দেয়। ভূমি অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধ করার ক্ষমতা আমাদের হাতে নেই। আমরা ডিসি অফিসকে টাকা পরিশোধ করব। তারপর ক্ষতিগ্রস্তরা সেই অর্থ পাবে। পরিকল্পনা কমিশনের পিইসি সভায় রিকাস্ট (সংশোধন) করতে বলা হয়েছে। জমির রেট ২ থেকে ৩টা মৌজার গড় ধরে দাম নির্ধারণ করা হয়। কাজেই বলা যায় বর্তমানে যেটা মূল্য ধরা হয়েছে তা থাকবে না।
এনএইচবি/এসএন