বিএনপির লক্ষ্য আগামী সেপ্টেম্বর!
সরকার পতনের আন্দোলনে কোনো গতি না আসলেও আগামী সেপ্টেম্বরকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে চূড়ান্ত আন্দোলনের কথা ভাবছে বিএনপি। ওই সময়েই সর্বশক্তি নিয়ে দলটি মাঠে নামবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই সরকারের পতন ঘটবে বলে সাম্প্রতিক সভা-সমাবেশে জোর দাবি করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ভোট-জোটের রাজনীতি। নির্বচানকে সামনে রেখে একদিকে চলছে বিএনপির সরকার বিরোধী আন্দোলন। অপরদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের দাবি, আন্দোলনের নামে বিএনপির নৈরাজ্য সৃষ্টির বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশ করছে তারা।
এসব শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন হবে। এখন এক চুলও নড়ার সুযোগ নেই। অপরদিকে, বিরোধী দল বিএনপি নেতারা বলছেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।
বিএনপি নেতারা বলছেন, বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক দল যার নির্বাচনের জন্য ঢাকঢোল পিটিয়ে আলাদা করে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। এই অবস্থায় বিএনপি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে চূড়ান্ত আন্দোলনের পথে হাঁটছে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী একাধিক নেতা ঢাকাপ্রকাশ-কে এসব কথা জানান।
সংশ্লিষ্ট নেতাদের ভাষ্য মতে, সরকারের কৌশল ও পদক্ষেপ ব্যর্থ করতেও ভিন্ন কৌশলে সংঘাত এড়িয়ে চলার পরিকল্পনা করছে বিএনপি হাইকমান্ড। সেক্ষেত্রে সব কৌশল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না করে ভেতরে ভেতরে ‘ডু অর ডাই’ প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলটির দায়িত্বশীল নেতাদের চূড়ান্ত আন্দোলন নিয়ে কথাবার্তায় অতিউৎসাহী না হয়ে উঠতে সতর্ক করা হয়েছে। মূল লক্ষ্য সরকারকে অপ্রস্তুত রেখে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে বড় ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। এবার নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার আরও আগেই আন্দোলনকে সফলতার দিকে পৌঁছাতে মনোযোগ দিচ্ছেন নেতারা। নেতারা মনে করছেন, আন্দোলন কখন ও কীভাবে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেবে তা আগে থেকে বলা যায় না। তবে এবার আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণ দেখে মনে হচ্ছে, খুব শিগগির গণঅভ্যুত্থান হবে, এই সরকার বিদায় নিতে বাধ্য হবে।
এদিকে বিএনপি ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন বয়কট করবে; নাকি শেষ সময়ে এসে ২০১৮ সালের মতো অংশ নেবে তাও এখনো স্পষ্ট নয়। আগামী নির্বচানের প্রস্তুতি ও প্রচারণায় দুই প্রধান দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপির অবস্থান এখনো ঠিক বিপরীতমুখী। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণার বিপরীতে বিএনপি ব্যস্ত সময় পার করছেন যুগপৎ আন্দোলনে চলমান কর্মসূচি পালনে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, জনগণের অধিকার আদায়ে চলমান আন্দোলনকে
‘চূড়ান্ত রূপ’ দিতে কাজ করছে বিএনপি। কোনো স্বৈরশাসক ক্ষমতা ছেড়ে দেয় না; ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। এই অনির্বাচিত আওয়ামী লীগও ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হবে। কবে, কখন সেই দিনক্ষণ হয়তো বলা যাচ্ছে না। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সকল পরিবেশ বলে দিচ্ছে এদের সময় খুব বেশিদিন নাই। বিদায় নিতেই হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি তার নিজস্ব গতিপথে রাজনীতি করছে। ধারাবাহিক কর্মসূচি থাকছে। কোন পথে এগোচ্ছে সেটা বলে দেওয়া উচিত নয়। রাজনৈতিক অনেক মেরুকরণ ঘটে, অতীতেও ঘটেছে। সংকট উত্তোরণে রাজনৈতিক দলগুলোর কমবেশি দায়িত্ব থাকে, আর যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের দায়িত্বটা একটু বেশি থাকে। সেই অর্থে সংকট সমাধানে তাদেরকে এগিয়ে আসার উদ্যোগ নিতে হবে। তবে এতটুকু আশ্বস্ত করতে পারি; বিএনপি হুটহাট এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না যা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ক্ষতি হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ নানা ষড়যন্ত্রের ফাঁদ আঁকছে।
এদিকে, বিএনপি সূত্র বলছে, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, মহানগরে ধারাবহিকভাবে কর্মসূচির পাশাপাশি একসঙ্গে সারা দেশে একদিনে কর্মসূচিতে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। ঢাকায় একটি মহাসমাবেশ করতে ঢাকামুখী বড় ধরনের কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে দলটি। চূড়ান্ত কর্মসূচিতে সফলতার ব্যাপারেও আশাবাদী বিএনপি নেতারা।
বিএনপি নেতারা জানান, দল ও আন্দোলন পরিচালনায় দলের বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।
এদিকে চলতি মাসজুড়েই জনগণকে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে নানা কর্মসূচি টেনে নেওয়া হবে পরবর্তী মাসে। তবে আসছে রমজানে কোনো বড় ধরনের কর্মসূচি থাকবে কি না সে বিষয়ে এখনো নীতিগতভাবেও সিদ্ধান্ত হয়নি। সংকট নিরসনে সংলাপ বা সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না ধরে নিয়ে সেপ্টেম্বরেই সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আন্দোলন অনেক সময় উপরে উঠে যায়, আবার নিচে নামে, আবার ওপরে উঠে লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। নদীর ঢেউয়ের মতো আন্দোলনের গতি। এই মুহূর্তে আমরা অতীত আন্দোলনে কোথায় কোথায় ঘাটতি ছিল সেগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। বিএনপি ব্যস্ত দলের সাংগঠনিক অবস্থা ঠিক রেখে জনগণের আস্থা অর্জনে। তাই দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। দাবি দাওয়া আদায়ের পথেই হাঁটছে দল।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ভোটের এখনো যথেষ্ট সময় রয়েছে। এর মধ্যেই ফয়সাল হবে কোনো পথে কোনো উপায়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন আদায় এবং আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় দিতে সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে। সেই চলমান আন্দোলন কর্মসূচিতে নেতা-কর্মী ছাড়াও দেশের সাধারণ মানুষ একাত্ম প্রকাশ করে অংশ নিচ্ছেন। ফলে চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে নেতা-কর্মীদের সক্রিয় রাখাতেই কর্মসূচিতে ভিন্নতা আনা হচ্ছে। বিএনপি কোনো ফাঁদে পা দেবে না, অবৈধপথে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতেও চায় না। বিএনপি জনগণের দল, আগামীতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে লক্ষ্য নির্ধারণ করবে।
এনএইচবি/এমএমএ/