পানি সম্মেলন
বাংলাদেশ গুরুত্ব দিচ্ছে আন্তঃসীমান্ত নদীর উপর
জাতিসংঘের পানি সম্মেলনে এবার বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে আন্তঃসীমান্ত এবং আন্তর্জাতিক পানি সহযোগিতা ও ক্রস সেক্টরাল সহযোগিতার উপর। পানির জন্য সহযোগিতা এই থিমে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের এজেন্ডা জুড়ে বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা চায়।
আগামী ২২ থেকে ২৪ মার্চ তিন দিন নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে জাতিসংঘ পানি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
এই সম্মেলনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পাঁচটি ইস্যুতে গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে আন্তঃসীমান্ত এবং আন্তর্জাতিক পানি সহযোগিতার উপর। এই ইস্যুতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে ভয়েস রেইস করতে চাচ্ছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুলে মোমেন এর নেতৃত্বে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান পত্র তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন। এরই অংশ হিসেবে পাঁচটি থিম ঠিক করা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। যেগুলো আগামী ২২-২৪ মার্চ পানি সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে যেসব আন্তর্জাতিক নদী প্রবেশ করেছে তার সবকটিই হচ্ছে নেপাল, ভারত ও চীন থেকে আসা। কিন্তু এ সব নদীর উজানে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো নিজেদের স্বার্থে বাঁধ তৈরি করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করেছে। ফলে বাংলাদেশ তার ন্যায্য পানির হিস্যা পাচ্ছে না। এই অবস্থায় এবারের সম্মেলনে আন্তর্জাতিক নদীসমূহের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ বেশি জোর দিচ্ছে।
বাংলাদেশ বলছে, আন্তঃসীমান্ত নদীকে বাঁচিয়ে রেখে নদীর পানিসহ যেসব সম্পদ রয়েছে ওই নদী সংশ্লিষ্ট সকল দেশ সেগুলো তার সর্বোচ্চটা ব্যবহার করবে। আন্তর্জাতিক নদীর পানি নিয়ে সবার জন্য সমান সহযোগিতা নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে ক্রস সেক্টরাল সহযোগিতা করবে। নেপাল, ভারত ও চীনের সমন্বিত সহযোগিতায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নদী যেগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে সেগুলোর পানিসহ অন্যান্য সবকিছুর সর্বোচ্চ সুবিধা যেন বাংলাদেশ পায় তার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। সে লক্ষ্যেই বাংলাদেশ এবারর পানি সম্মেলনে নিজেদের অবস্থানপত্র উপস্থাপন করবে।
এবারের পানি সম্মেলনে বাংলাদেশ তার অবস্থানপত্রে আন্তঃসীমান্ত ও আন্তর্জাতিক পানি সহযোগিতার জন্য নেপাল, ভারত ও চীনের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নদীকে বাঁচিয়ে রেখে কীভাবে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায় সে জন্য এই তিন দেশের সঙ্গে আলোচনা করার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী দিনগুলোতে বিশ্বব্যাপী পানি একটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে। পানির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুরো বিশ্বকেই নজর দিতে হচ্ছে। এই ইস্যু থেকে বাংলাদেশ তথা এই অঞ্চলও বাদ যাচ্ছে না। সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশ পানি ইস্যুতে ভয়েস রেইস করতে চায়।
বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, জেনারেলি যদি বলি তাহলে বলতে হচ্ছে, পৃথিবীতে পানির সম্পদের পরিমান ফিক্সড। এটা বাড়বেও না, কমবেও না। কিন্তু মানুষ বাড়ছে। মানুষের পানির চাহিদা বাড়ছে। সেচের জন্য পানির চাহিদা বড়েছে। খাবারের জন্য পানির চাহিদা বাড়ছে। শিল্পের জন্য পানির চাহিদা বাড়ছে।
দ্বিতীয়ত হচ্ছে, বছরের একসময় প্রচুর পানি আছে। অন্যসময় পানির প্রবাহ কম। এই সমস্যা যে নদীটা দুই বা তিন দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তাদের সকলের জন্যই। কিন্তু অববাহিকাভিত্তিক পরিকল্পনা করে এ সমস্যাটা বহুলাংশে সমাধান করা সম্ভব।
তৃতীয়ত হচ্ছে, অভিন্ন নদীর ব্যবস্থাপনাতে দুই দেশের মধ্যে কিংবা দুই বা ততোধিক দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সিদ্ধান্তটাই প্রধান। আর দুই দেশের মধ্যে শক্তি যদি অসম হয় তহালে বিষয়টা আরও জটিল হয়। সেজন্য কিছু বৈশ্বিক নিয়মকানুন থাকলে ভাটির দেশের জন্য সুবিধা হবে। বৈশ্বিক নিয়মকানুন তো নাই। এটা খুব প্রয়োজন। সবকিছু নির্ভর করে রাজনীতির উপরে। সেটার সঙ্গে যদি কিছু গাইডলাইন থাকে তাহলে সমস্যা সমাধান সম্ভব।
তিনি বলেন, আর সর্বশেষ হচ্ছে নদীর পানির সঙ্গে জীববৈচিত্র্যের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কাজেই শুধুমাত্র সেচের জন্য পানি কিংবা উজানের দেশ, ভাটির দেশ তাদের পানির চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিরও একটা পানির চাহিদা আছে। এটা ধরে রাখা উচিত। প্রকৃতিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
এনএইচবি/আরএ/