মশার গানে উধাও হাতিরঝিলে বিনোদন
দেয়ালে আবদ্ধ জীবনের ক্লান্তি দূর করতে সামান্য খোলা হাওয়া খেতে ছুটির দিনগুলোতে আশপাশের বাসিন্দারা হাজির হন হাতিরঝিলে। কখনো কখনো অন্য এলাকা থেকেও আসেন লোকজন। কিন্তু সেখানে হাওয়ার সঙ্গে উপরি হিসেবে খেতে হয় মশার কামড়। মন ভালো করতে গিয়ে শরীর খারাপ করে ফিরতে হয় ঘরে। তারপর দৌড়াতে হয় হাসপাতালে। খোলা জায়গায় ছোট বাচ্চাদের খেলাধুলার সুযোগ দিতে গিয়ে মশার কামড়ে বরং ক্ষতির সম্মুখীন হন বেশি। তবুও কর্মক্লান্তি ও বদ্ধজীবন থেকে সাময়িক মুক্তির জন্য তো আসতেই হয়। ঘুরতে আসা লোকজন জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই মশার উৎপাত বাড়লেও, তা নিধনে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না।
তারা বলেন, শুধু হাতিরঝিল নয় মশার উপদ্রব ছড়িয়ে আছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। তবে হাতিরঝিলে একটু বেশি। এসব মশার কারণে নগরবাসী ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ার শঙ্কায় আছেন। হাতিরঝিলে মশার যন্ত্রণা এতটাই বেড়ে গেছে যে, পরিস্থিতি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক খারাপ। মশার এমন উপদ্রব এর আগে কখনো দেখা যায়নি।
শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সরেজমিনে রাজধানীর দর্শনীয় স্থান ও বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হাতিরঝিলে মশার উপদ্রব দেখা যায়।
রাজধানীর শনির আখড়া এলাকা থেকে হাতিরঝিলে ঘুরতে এসেছেন আবির রহমান। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, মাঝে মাঝে আমি পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরতে আসি। যেভাবে মশার উপদ্রব বেড়েছে তাতে আর হাতিরঝিলে আসা যাবে না।
হাতিরঝিল এলাকায় বসবাসরত মো. বজলুর ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, গত নভেম্বর থেকে ঝিল এলাকায় মশার উপদ্রব চরম আকার ধারণ করেছে। যা নিধনে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। কয়েক মাস ধরে মশার কামড়ে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মশা এত বেশি বেড়েছে যে দলবেঁধে কামড়ায়।
রাব্বি হোসেন নমে আরেক দর্শনার্থী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বেশ কয়েকমাস ধরে হাতিরঝিলে মশার উপদ্রব ব্যাপক হারে বেড়েছে। মশার যন্ত্রণায় এখানকার মানুষ অতিষ্ঠ। ঝাঁক বেঁধে মশা কামড়ায়, থাপ্পড় দিলে একসঙ্গে অনেকগুলো মশা মারা পড়ে। তা ছাড়া এখানকার মশাগুলো আকারে অনেক বড় মনে হচ্ছে।
ঝিল এলাকায় ভাসমান চা বিক্রেতা মাহফুজ মিয়া ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, মশার কারণে এক জায়গায় বেশি সময় ধরে দাঁড়াতে পারি না। হাতিরঝিলে প্রচুর মশা বেড়েছে। হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মশা এলোমেলোভাবে কামড় দেয় আর সারা শরীর জ্বলে। এখানে মশার জন্য টেকা যায় না! এখানে মশা দমনে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই বললেই চলে।
বনশ্রীর বাসিন্দা লক্ষ্মী রায় বলেন, বাসার পাশে হওয়ায় ছুটির দিনগুলোতে এখানে আসি প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে। কিন্তু এখানে বসা যায় না। ঝাঁক ধরে মাথার উপর মশা ঘুরে আর কোরাস গায়। শরীরের যেখানে কামড়ায় লাল হয়ে ফুলে যায়। কখনো চামড়া কালো হয়ে যায়। বাচ্চাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়। ইট-পাথরের এই শহরে মন ফ্রেশ করতে এসে অসুস্থ হতে হয়। কোনো উদ্যোগও দেখা যায় না মশা দমন করতে। শুধু মশাই নয় হাতিরঝিলের পরিবেশ ঋতু অনুযায়ী পরিবর্তন হয়। কখনো কখনো দুর্গন্ধে পাঁচ মিনিটও বসা যায় না। বর্ষাকালেও হাতিরঝিলের পানি পরিষ্কার থাকে না। হাতিরঝিলে মলমূত্রের গন্ধও তীব্র আকার ধারণ করে গ্রীষ্মকালে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোটি কোটি টাকার প্রকল্প যদি জনগণের কাজে না লাগে, শুধু দৃশ্যমানই থাকে তাহলে কী লাভ? শুধু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব বিনোদনকেন্দ্র থেকে বঞ্চিত হবে মানুষ? কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় এনে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মশার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান। তিনি বলেন, শীতে মৌসুমে ঋতুগত কারণে মশা একটু বেড়ে যায়। কারণ এডিস যেমন পরিষ্কার জমা পানিতে হয় তেমনি কিউলেক্স মশা নোংরা, অপরিষ্কার পানিতে হয়। শীতকালে এখন যে মশা সেটি মূলত কিউলেক্স মশা। অনেক জলাশয় শীতকালে শুকিয়ে যাওয়ায় সেখানে কিউলেক্স মশা হচ্ছে। আবার বর্ষাকালে জলাশয়ের পানি যেমন চলমান থাকে শীতকালে কিন্তু তেমন না। তাই এই সময়টাতে একটু মশা বেশি হয়ে থাকে। তবে আমরা এটি নিধনে প্রতিনিয়তই কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ঢাকার খালগুলো আমরা পরিষ্কার করছি। এসব খাল থেকে কচুরিপানাও পরিষ্কার করা হয়েছে। খাল ও কচুরিপানায় যেসব মশা থাকত তার একটি অংশ উড়ে লোকালয়ে যাচ্ছে বা হয়তো হাতিরঝিলে তারা বিস্তার করছে।
কেএম/এসএন