গ্রীষ্মে লোডশেডিং সামাল দিতে নানামুখী পদক্ষেপ
শীত যেতে না যেতেই বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা। দেখা দিচ্ছে লোডশেডিংয়ের শঙ্কা। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার বেশকিছু আগাম পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের এসব পদক্ষেপের মধ্যে আদানির বিদ্যুৎ, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সচল রাখা এবং বন্ধ থাকার পর আবার এলএনজি আমদানির উদ্যোগ অন্যতম। এ ছাড়া ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ থেকেও আসছে বিদ্যুৎ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজার মেগাওয়াটেরও মত। কিন্তু কাঁচামাল সংকটের কারণে চাহিদা মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই সংকটকে আর ঘনীভূত করেছে। তবে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও বিপুল অঙ্কের অর্থ ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ সরকারকে পরিশোধ করতে হচ্ছে।
কয়লা সংকটের কারণে বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু একমাস পর আবার কেন্দ্রটিতে উৎপাদন শুরু হচ্ছে। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লাবোঝাই একটি জাহাজ ইতিমধ্যে বাংলাদেশে এসেছে। আগামী সপ্তাহেই রামপালে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে। এটি ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন।
এ ছাড়া, কয়লা সংকটের কারণে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সেটিও আপাতত ঠেকানো গেছে। নীতি নির্ধারকরা বলছেন, রামপাল ও পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সচল থাকলে লোডশেডিং বন্ধ হবে।
বিদ্যুৎ আসছে ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে
বর্তমানে ভারতের ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিদ্যুৎ আসছে বাংলাদেশে। পশ্চিমবঙ্গে বহরমপুর থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা দিয়ে দৈনিক ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে। এ ছাড়া ত্রিপুরার সূর্যমনি থেকে কুমিল্লা হয়ে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে।
ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানির মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। ২০১৬ সাল থেকে ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে সরকার। বিদ্যুৎ না লাগলেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ সরকারকে পরিশোধ করতে হলেও ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে।
মার্চে আসছে আদানির বিদ্যুৎ
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের মাথাব্যথা গ্রীষ্মে লোডশেডিং ঠেকানো। সে লক্ষ্যেই কাজ চলছে। ভারতের আদানি গ্রুপ যে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করবে সেই বিদ্যুৎও আগামী মাসেই আসছে। অন্তত এমনটাই জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। যদিও এই ডেডলাইন নিয়ে সংশয় আছে অনেকেরই।
সংশয়ের কারণ হলো এর আগে আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি নিজেই বলেছিলেন, ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হবে। সেই ডেডলাইন ঠিক থাকেনি।
২০১৭ সালে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশের পিডিবি ২৫ বছর মেয়াদী বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে। চুক্তিতে বলা হয়েছে, জ্বালানির আমদানি ও পরিবহন খরচ ক্রেতা দেশই (বাংলাদেশ) বহন করবে। ফলে এখানকার বিদ্যুতের দামে জ্বালানির খরচ একটা বড় ফ্যাক্টর বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনাও শুরু হয়েছে
স্পট মার্কেট বা খোলাবাজার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করেছে সরকার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এলএনজির দাম অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে আমদানি বন্ধ রেখেছিল সরকর।
এখন যদিও দাম আগের অবস্থায় ফেরেনি তারপরও অস্বাভাবিক বৃদ্ধির থেকে কমেছে। সরকার গ্রীষ্মের লোডশেডিং ঠেকাতে এলএনজি আমদানি শুরু করেছে। এলএনজি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
জানা যায়, ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কোম্পানি রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)। ঠিকাদারকে আগামী ১১ ও ১২ মার্চের মধ্যে এই এলএনজি সরবরাহ করতে হবে। দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় আগামীকাল ১২ ফেব্রুয়ারি।
এর আগে গত জানুয়ারির শেষদিকে স্পট মার্কেটে এক কার্গো এলএনজির ক্রয়াদেশ দেয় আরপিজিসিএল। ফেব্রুয়ারির শেষদিকে তা দেশে এসে পৌঁছাবে।
জ্বালানির দাম বাড়ার কারণেই সরকার ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রেখেছে। কারণ এগুলোর খরচ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে অনেক বেশি।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, দরপতন অব্যাহত থাকলে চলতি ফেব্রুয়ারি এবং আগামী জুনের মধ্যে ১২ থেকে ১২ কার্গো এলএনজি কিনবে বাংলাদেশ।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশ্বাস প্রসঙ্গে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এসব আশ্বাসের ভিত্তি নেই। এর আগেও সেপ্টেম্বরে লোডশেডিং কমার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি করতে পারেনি।
এনএইচবি/এমএমএ/