‘সিন্ডিকেটেই’ আটকে আছে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি
সিন্ডিকেটের কারণে তিন বছর বন্ধ থাকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি এখনো আটকে আছে। অথচ বন্ধ থাকার তিন বছর পর শ্রমবাজার খুলতে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছির। তারপর এক বছরের বেশি সময় চলে গেলেও এখন পর্যন্ত একই ইস্যুতেই আটকে আছে জনশক্তি রপ্তানি।
রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) আবার এ বিষয়ে বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার পরও যখন কর্মী পাঠানো গেল না, তখন ঢাকা ও কুয়ালালামপুরে বারবার মিটিং হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
এই ইস্যুতে মালয়েশিয়ার সদ্য সাবেক সরকারের মানবসম্পদমন্ত্রী ঢাকা সফর করেন। সেই সফরের পর মনে করা হয়েছিল জট খুলছে। কিন্তু তারপরও জট খোলেনি।
এরপর এলো মালয়েশিয়ার জাতীয় নির্বাচন। ডিসেম্বরে দেশটিতে নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়। সাধারণ রিক্রুটিং এজেন্টদের আশা ছিল নতুন সরকার হয়তো কিছু পদক্ষেপ নেবেন, যার ফলে সিন্ডিকেটের বিলুপ্তি ঘটবে।
এ অবস্থায় নতুন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছেন। শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে তিনি ঢাকায় এসেছেন।
রবিবার (৫ ফ্রেবুয়ারি) সকালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে বৈঠকে করবেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিন্ডিকেট ইস্যু এবং বিদ্যমান অচলাবস্থা নিরসনে আলোচনা করবেন দুই মন্ত্রী।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) যুগ্ম সম্পাদক টিপু সুলতান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, সিন্ডিকেটের কারণেই মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে এই স্থবিরতা চলছে। আমাদের দাবি পরিষ্কার, ১৫২০টি রিক্রুটিং এজেন্সিই যেন মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারে এমন ব্যবস্থা করা হোক।
যদিও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলছেন, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও রিক্রুটিং এজেন্টরা বলছেন, রেজিস্ট্রেশন উন্মুক্ত করার পর প্রতিদিন ১৫-১৬ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে রেজিস্ট্রেশন করছে। সরকারি অভিবাসন খরচও কম। কাজেই কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না বিষয়টি সত্য নয়।
রিক্রুটিং এজেন্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ছাড়াও আরও ১৩টি দেশ থেকে কিন্তু মালয়েশিয়া জনশক্তি নিচ্ছে। সেসব দেশে কিন্তু এমন সিন্ডিকেটের নিয়ম রাখা হয়নি। শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই কেন এই নিয়ম। অন্যদেশ থেকে যেভাবে মালয়েশিয়া জনশক্তি নেয় বাংলাদেশ থেকেও সেই একই প্রক্রিয়ায় জনশক্তি নেওয়ার দাবি রিক্রুটিং এজেন্টদের।
জনশক্তির বাজার ‘সিন্ডিকেটমুক্ত ‘ করার লক্ষ্যে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সমিতি বায়রাও কাজ করছে বলে জানান নেতারা। তবে এক্ষেত্রে পরস্পরের মধ্যে আস্থার সঙ্কট রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সিন্ডিকেটমুক্ত করার জন্য মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিল বায়রা। কিন্তু তুমল হট্টগোলের মধ্য দিয়ে অবশেষে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ হয়।
সাধারণ রিক্রুটিং এজেন্টরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এর আগে যারা সিন্ডিকেট করেছিল এবারও তারাই সিন্ডিকেট করে রেখেছে। মানুষগুলো একই। কিন্তু তাদেরও কেউ কেউ আবার সিন্ডিকেটমুক্ত করার কথা বলছেন। আর এখানেই আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে।
এনএইচবি/এমএমএ/