সমঝোতার লক্ষণ নেই, মাঠে থাকবে বিএনপি
আপাতত বিএনপির লক্ষ্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়। বিএনপি নেতারা বলছেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতার কোনো লক্ষণ দেখছেন না তারা।
বিএনপি নেতারা এখন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা ও রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফার ভিত্তিতে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। চলমান পরিস্থিতিতে দলের কর্মীদের সাংগঠনিকভাবে চাঙা মনোভাব ধরে রাখতে চলতি বছর ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিতে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত বিএনপি নেতৃত্বের। আপাতত এর বাইরে কিছু ভাবছে না— বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ চায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে। কোনো কারণে বিএনপি যদি ভোটে নাও আসে সে ক্ষেত্রে নিবন্ধিত বেশিরভাগ দলকে ভোটে এনে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখাবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিএনপি নির্বাচনীমুখী দল। নির্বাচনের জন্য আলাদা কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে না। এখন কথা হচ্ছে নির্বাচনটা কীভাবে হবে? কার অধীনে হবে? শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনে যাবো না বলেই তো আমরা আন্দোলন করছি, মামলা হামলার শিকার হচ্ছি, গ্রেপ্তার হচ্ছি। ইতোমধ্যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে বেশকয়েকজন প্রাণ দিয়েছে। যদি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখেই বিএনপি নির্বাচনে যায় তাহলে তো আন্দোলন করার প্রয়োজন পড়ে না।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন আমরা বর্জন করেছি আবার অংশগ্রহণও করেছি। অতীত অভিজ্ঞতা বলে দিচ্ছে যে, দেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান বাধা শেখ হাসিনা। সেই কারণেই আমরা বলছি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ হলো আগামী নির্বাচনে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের পূর্বশর্ত। এই পূর্বশর্ত পূরণ হলে আমাদের সব শর্তই পূরণ হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, আশা করছি জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে এই সরকারের পতন করে বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেব। তারপর দেশের মানুষ যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেবে। এ লক্ষ্যে আমরা আন্দোলনে রয়েছি। আশা করি আমরা এই আন্দোলনে জয়লাভ করব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির নেতৃত্বে এই মুহূর্তে কোনো জোট নেই। আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও তাদের ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যজোট বিলুপ্ত। দলটি যুগপৎ কর্মসূচির মাধ্যমে সমমনাদের নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির পথে হাঁটছে। সেক্ষেত্রে বিতর্কিত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটে না থাকতে কৌশল নিয়েছে বিএনপি। যাতে জামায়াতের কারণে অন্য কয়েকটি দলের যুগপৎ আন্দোলনে আসতে সমস্যা না হয়।
চলতি বছর রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় থাকবে জাতীয় নির্বাচন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম। নির্বাচনের বাকি এক বছর। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন নিজেদের অবস্থান পুনরায় পাকাপোক্ত করতে এবং বিএনপি পনেরো বছরের খরা কাটাতে মরিয়া। গত বছর দেশব্যাপী গণ-সমাবেশ, গণ-মিছিলের মতো নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের দাবি আদায়ের আন্দোলন চালিয়েছে বিএনপি। চলতি বছরও ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিতে মাঠে থাকবে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিএনপির ১০ দফা দাবি ও ২৭ দফা রূপরেখার সঙ্গে ইতোমধ্যে একাত্মতা প্রকাশ করেছে ৩৩টি রাজনৈতিক দল। দাবি আদায়ে তারা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচি পালনেরও ঘোষণা দিয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনে আসার জন্য বিএনপি সব দলকেই আহ্বান জানাচ্ছে। সমমনা অনেক দলই সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলন করছে। তারাও যুগপৎ আন্দোলনে নেমে আসুক সেটেই চায় বিএনপি।
তৃণমূলে বিএনপি নেতারা
গত সোমবার (২ জানুয়ারি) থেকে শুরু করে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপী ৭১টি জেলা ও মহানগরে এই কর্মসূচি চলবে।
১০ দফা দাবি ও রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখার বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা প্রদান করতে গত ৩ জানুয়ারি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ঠাকুরগাঁও, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জামালপুর, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ফেনী, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী ঝিনাইদহ, ৪ জানুয়ারি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান নীলফামারী ও সৈয়দপুর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জ, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নওগাঁ এবং সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স শেরপুরের কর্মসূচিতে যোগ দেন।
এ ছাড়া ৫ জানুয়ারি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান মানিকগঞ্জ, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বগুড়া, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল-নোমান নরসিংদী, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান টাঙ্গাইল, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন দিনাজপুর, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বরগুনা, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া খাগড়াছড়ি, ৬ জানুয়ারি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন হবিগঞ্জ, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম পটুয়াখালী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান গাজীপুর মহানগর, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মিজানুর রহমান মিনু নাটোর, ইসমাইল জবিউল্লাহ রাজবাড়ী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মুন্সিগঞ্জ, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন-নবী-খান সোহেল ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত নড়াইলের কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।
অন্যান্য জেলা ও মহানগরে ৭ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হবে এবং কেন্দ্রীয় নেতারা সে সব কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এনএইচবি/আরএ/