আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে ‘পায়রা সমুদ্রবন্দর’
পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের পর এবার আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর। ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ। দ্রুততম সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পায়রা সমুদ্র বন্দর বাস্তবায়ন প্রকল্পটি বর্তমান সরকারের নেওয়া ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের অন্যতম। এটি বাস্তবায়ন করছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প নামে আটটি প্রকল্প সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেখভাল করা হচ্ছে। এই আটটি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি লাইন-৬), পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট, মহেশখালী-মাতারবাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ও দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার ডুয়েলগেজ রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প। এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে সরকার প্রতি অর্থবছরে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দও দিচ্ছে।
এসব প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে গত জুন মাসে। সর্বশেষ গত ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল লাইন-৬ এর একাংশ উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার উদ্বোধন হয়েছে।
জানা গেছে, রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকার মেট্রোরেল বাস্তবায়নেরও উদ্যোগ নেয়। কাজ শুরু হয় ২০১২ সাল থেকে। প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা। চলতি অর্থবছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে এই প্রকল্পে। নভেম্বর পর্যন্ত বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৬৫ শতাংশ।
ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের মধ্যে এবার এগিয়ে রয়েছে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় নির্মাণাধীন পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর। দেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি-রপ্তানির চাহিদা মেটাতে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব এই বন্দরের কাজ দ্রুত শেষ করতে চলতি অর্থবছরে ২৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দও দিয়েছে সরকার। ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ ২০ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু নানান প্রতিকূলতার মধ্যে প্রকল্পের কাজে ধীর গতি হওয়ায় এ পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ।
পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ক্যাপ্টেন এম মনিরুজ্জামান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রকল্পের কাজ লক্ষ্য অনুযায়ী এগুচ্ছে না। এ জন্য অগ্রগতি কম। বিশেষ করে জেলা প্রশাসনের জটিলতার কারণে গতি কমে আছে। কারণ যারা ভূমি অধিগ্রহণের সঙ্গে জড়িত তারা বদলী হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ঠিক মতো ভূমি অধিগ্রহণের কাজটা দ্রুত হচ্ছে না। তবে আশা করি সবার সহযোগিতা পেলে নির্ধারিত সময়ে আগামী জুনে তা শেষ করা যেতে পারে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র মতে জানা গেছে, পায়রা বন্দরটি বাংলাদেশের তৃতীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ার একটি সামুদ্রিক বন্দর। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় আন্ধারমানিক নদীর উপকণ্ঠ ধরে রামনাবাদ চ্যানেলের তীর বরাবর গড়ে ওঠা দেশের তৃতীয় এই সমুদ্রবন্দরটি মূলত লালুয়া, বালিয়াতলী, ধূলাসার, ধানখালী ও টিয়াখালী মৌজাব্যাপী বিস্তৃত।
২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া গ্রামে এর ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। তারপর বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেই ধারায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত হলে ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট সমুদ্রবন্দরটি প্রথমবারের মতো কন্টেইনার জাহাজ নোঙরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে কন্টেইনার টার্মিনাল, বাল্ক টার্মিনাল, মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট, মডার্ন সিটি, বিমানবন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলাসহ ১৯টি কম্পোনেন্টের কাজ চলমান রয়েছে।
গত বছরের ২৯ জানুয়ারি দুইশ মিটার দৈর্ঘ্যর সমুদ্রগামী জাহাজ ভিড়েছে পায়রাবন্দরে। ৭ দশমিক ৫ মিটার গভীর জাহাজটি বন্দরে ভিড়লে সবার চোখেমুখে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রামনাবাদ চ্যানেলের পোতাশ্রয় মুখ থেকে ৫ কিলোমিটার অভ্যন্তরে শিপিং-বান্ধব বিস্তীর্ণ এলাকাটিতে সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সর্বজনীন ও অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ অন্যান্য অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্যও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ উন্মুক্ত স্থান। ফলে কন্টেইনার, বাল্ক, সাধারণ কার্গো, এলএনজি, পেট্রোলিয়াম ও যাত্রী টার্মিনাল নির্মাণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল, তৈরি পোশাক শিল্প কারখানা, ঔষধশিল্প, সিমেন্ট, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, সার কারখানা, তৈল শোধনাগার ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পসহ আরও কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব কাজ শেষে ২০২৩ সালের জুনে পায়রাবন্দরকে বিশ্বমানের একটি আধুনিক বন্দর হিসেবে দেখবে বিশ্ববাসী।
এনএইচবি/এমএমএ/