৪৭ বছরের মধ্যে জনশক্তি রপ্তানিতে রেকর্ড
গত ৪৭ বছরের মধ্যে চলতি বছরে জনশক্তি রপ্তানিতে রেকর্ড হয়েছে। এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে ১০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪ জন।
জনশক্তি কর্মসংস্থা ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয় ১৯৭৬ সাল থেকে। ওই বছর ৬ হাজার ৮৭ জন কর্মী বিদেশে যান। তারপর থেকে প্রায় প্রতি বছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়মিত জনশক্তি রপ্তানি হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মী গেছেন ১০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪ জন। ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান প্রস্তুত হলে ১১ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দীর্ঘ ৪৭ বছরের মধ্যে শুধুমাত্র ২০১৭ সালে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে আগের রেকর্ড ছিল। চলতি বছর ছাড়া ২০১৭ সালেই শুধু ১০ লাখের মাইলফলক পার করেছিল বাংলাদেশ। সেই বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন কর্মী গিয়েছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলছেন, জনশক্তি রপ্তানিতে মধ্যপ্রাচ্য নির্ভরতা কাটানোর চেষ্টা চলছে। এর ফলে বিকল্প শ্রমবাজার হিসেবে ইউরোপকে ভাবছে সরকার।
যুগোস্লাভিয়া, আলবেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও রোমানিয়ায় কিছু সংখ্যক কর্মী ইতিমধ্যে গেছেন। এই দেশগুলো ভবিষ্যতে বিপুল সংখ্যক কর্মী নেবে। এ ছাড়া গ্রিস, মাল্টা, আলবেনিয়া ও সার্বিয়াও বাংলাদেশি কর্মী নেবে বলে জানিয়েছে। সম্প্রতি ইতালির সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে চুক্তি হয়েছে।
এ ছাড়াও, মধ্য ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর দিকেও নজর রয়েছে সরকারের। উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং হংকংয়ে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়টি ভাবছে সরকার। ফলে সামনের দিনগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলছেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) করার চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে বৈধভাবে কর্মী পাঠানো যায়। এর অংশ হিসেবে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের ভাষা শেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে জাপানে বৈধভাবে কর্মী প্রেরণের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্টদূত ইতো নাওকি। বৈঠকে জাপান বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে কর্মী নিতে রাজি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, জাপান ২০২৫ সালের মধ্যে সারা বিশ্ব থেকে ৫ লাখ কর্মী নেবে। জাপানী ভাষা জানলেল অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এই বাজার বাংলাদেশকে ধরতে হবে।
হুন্ডির কারণে কমেছে রেমিট্যান্স
তবে বিএমইটির হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর জনশক্তি রপ্তানিতে রেকর্ড হলেও রেমিট্যান্স প্রাপ্তির দিক থেকে রেকর্ড বছর ছিল ২০২১ সাল। ওই বছর ২ হাজার ২০৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।
অন্যদিকে, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ৯৫৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। তবে ডিসেম্বরের মাসের হিসাব যোগ হলে রেমিট্যান্সেও রেকর্ড হতে পারে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, জটিলতা এড়াতে অনেক কর্মীই বৈধ চ্যানেলে টাকা না পাঠিয়ে হুন্ডির আশ্রয় নেয়। এ কারণেই জনশক্তি রপ্তানিতে রেকর্ড হলেও রেমিট্যান্স অপেক্ষাকৃত কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক এ প্রসঙ্গে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, প্রপাগান্ডার কারণে হুন্ডির প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় গত কয়েক মাস থেকে রেমিট্যান্স কম আসলেও গত নভেম্বর থেকে রেমিট্যান্স আবারও বাড়তে শুরু করেছে।
এনএইচবি/এমএমএ/