রাজনীতিবিদদের কারণে বিদেশি হস্তক্ষেপ
নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পশ্চিমা দেশগুলোর হস্তক্ষেপ ততোই বাড়ছে। সাধারণত কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের নিয়ম না থাকলেও বাংলাদেশে তা হচ্ছে। যদিও দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপের বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছে না সরকার। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে কূটনীতিকদের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করেন, রাজনীতিবিদদের কারণেই বিদেশিরা এমন হস্তক্ষেপের সুযোগ পাচ্ছেন। তারা বলছেন, আমাদের রাজনীতিবিদরা বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে যান এবং তাদের সালিশ মানেন বলেই তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলার সুযোগ পান।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, প্রয়োজন হলে বিদেশিদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদেশিদের হস্তক্ষেপে কোনো রাষ্ট্ররই কল্যাণ হয়নি মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এদেশের মানুষ যাকে মনে করবে তাকেই ভোট দেবেন।
বিদেশিদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক নানা বৈঠকে অংশগ্রহণ করছে। এ অবস্থায় নির্বাচনী ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আসবে না বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এ কে এম আতিকুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, রাজনীতিবিদরাই বিদেশিদের এমন সুযোগ করে দিচ্ছেন। আমাদের গর্ব করার মতো একটা জিনিস হলো আমদের স্বাধীনতা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। অথচ রাজনীতিবিদরা বারবার বিদেশি দূতদের কাছে ধরনা দেন। একটা কথা বলে রাখি— বিদেশিরা কিছুই করতে পারবে না। রাজনীতিবিদদের বুঝতে হবে যে জনগণ তাদের ভোট দেবে। তাই এই বিষয়টির উপর তাদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের রাজনীতিবিদরা কেন বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করেন না? কেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হককে অনুসরণ করে না? কেন মহাত্মা গান্ধীকে অনুসরণ করেন না? কেন আমাদের রাজনীতিবিদরা বিদেশিদের কাছে যান? এখানে তো আত্ম মর্যাদার কিছু নেই। বরং মাথা নোয়ানোর ব্যাপার আছে।
নিজের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, আমার ৩০ বছরের কূটনৈতিক জীবনে কখনো আামি কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করিনি। তারাও আমাদের কাছে কখনো আসেননি। আমাদের লক্ষ্য ছিল দুদেশের মধ্যে, দুদেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন। কিন্তু এখানে যেটা দেখছি সেটা লজ্জার।
এক প্রশ্নের জবাবে আতিকুর রহমান বলেন, আমরা তাদের কাছে যাই বলেই তারা মাথায় উঠে বসে। আমি একটি লেখাতেও বিষয়টি তুলে ধরেছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বিবাদের বিষয় তো আছেই। আমরা যদি তাদের কাছে যাই তাহলে তারা তো তাদের কথা বলবেই। এটাই তো স্বাভাবিক। আমরা তাদের কাছে যাই, তাদের সালিশ মানি। তাই তারাও তাদের কথা বলে।
এক প্রশ্নের জবাবে শান্তনু মজুমদার বলেন, তবে এত সরলীকরণ করলেও হবে না। কারণ শক্তিশালী দেশগুলোর উপরে আমাদের মতো দুর্বল দেশ নানাভাবে নির্ভরশীল। তার মধ্যে বাজার একটা ব্যাপার। এ ছাড়া ভূ-রাজনীতির কিছু ব্যাপার থাকে।
এনএইচবি/আরএ/