নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি এবং নতুন ড্যাপে স্থবির আবাসন খাত
একদিকে নির্মাণ সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে হুমকির মুখে আবাসন শিল্প। তার মধ্যে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঢাকা শহরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) গেজেট।
এই দুইয়ের কারণে রাজধানী ঢাকাতে আবাসন শিল্পের নির্মাণ কাজে মারাত্বক স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। নতুন ড্যাপে যে নির্দশনা দেওয়া হয়েছে ছোট প্লটের মালিকরা এককভাবে বাড়ি নির্মাণ করতে পারবেন না। তাদেরকে বাড়ি নির্মাণ করতে হলে পাশের প্লটের মালিকের সঙ্গে একত্রিত হয়ে বাড়ি নির্মাণ করতে হবে। এ কারণে এখন বাড়ি নির্মাণের কাজে হাত দিতে কেউই সাহস পাচ্ছেন না।
জটিল এই পরিস্থিতিতে ড্যাপ সংশোধন করা হতে পারে বলে ইঙ্গিতও মিলেছে সরকারে পক্ষ থেকে।
সম্প্রতি ড্যাপ রিভিউ বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নগর পরিকল্পনাবিদ ও ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম দুজনই প্রয়োজনে ড্যাপ সংশোধনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি শামসুল আলামিন বলছেন, সমাধানে আসতে রাজউক, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে রিহ্যাব।
জানা যায়, শুধু যে রিহ্যাবের কাজ স্থবির বিষয়টি তেমন নয়। রাজউকের সংশ্লিষ্ট শাখায় গিয়েও দেখা যায়, ভবন নির্মাণে নকশা অনুমোদন জন্য আবেদন তেমন একটা জমা পড়ছে না। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ড্যাপে যেহেতু ছোট প্লট মালিকরা এককভাবে বাড়ি করতে পারবেন না, এমন নির্দেশনা আছে সেই কারণেই নকশা অনুমোদনের আবেদন পড়ছে না।
রাজউক সূত্র বলছে, বড় প্লটের ক্ষেত্রেও ড্যাপে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে নতুন ড্যাপের কার্যকরের কারণে আগের ড্যাপের তুলনায় ভবন অর্ধেকে নেমে আসবে।
রাজউকে গিয়ে দেখা যায়, ছোট প্লট মালিকরা তো অপেক্ষা করছেনই, বড় প্লটের ক্ষেত্রেও আবেদন তেমন জমা পড়ছে না। কারণ, ঢাকা শহরের জমির দাম বেশি। সেই তুলনায় ভবনের আকার যদি অর্ধেক কমে যায় তাহলে লাভ হয় না। এ জন্য তারাও অপেক্ষায় আছেন ড্যাপ সংশোধন হওয়ার।
এ ছাড়া, ড্যাপ সংশোধনের দাবিতে একটি রিটও হয়েছে হাইকোর্টে। রিটকারী আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ন্যয়বিচার পাব। অবশ্যই ড্যাপ সংশোধনের পক্ষেই রায় হবে। এটাই ন্যয়।
রিহ্যাবের সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ঢাকা শহরের বেশির ভাগ প্লটই তো ছোট ছোট। আবাসিক প্লটের কথা বলা হচ্ছে। কাজেই তারা তো প্ল্যানই পাবেন না। আবেদন কীভাবে করবেন?
কামাল মাহমুদ বলেন, ছোট প্লটের ক্ষেত্রে ২/৩ জন প্লট মালিক একত্র হয়ে তারপর প্ল্যান করতে পারবেন এমন বিধান রাখা হয়েছে। ভাইয়ে ভাইয়েই বিবাদ লেগে থাকে। সেখানে অন্যের সঙ্গে জমি শেয়ার করে কীভাবে প্লট করবে?
জানা যায়, রাজধানীতে জমির নিবন্ধন ফি পরিশোধ করা যেত মৌজা ভিত্তিক দর অনুযায়ী। নতুন ড্যাপে সেটিকে পরিবর্তন করে বাজার মূল্য অনুযায়ী মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এটিও আবাসন শিল্পের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে নির্মাণ সামগ্রীর উচ্চ মূল্যের কারণে এমনিতেই সংকটে রয়েছে নির্মাণ খাত। তার সাথে যুক্ত হয়েছে নতুন ড্যাপ নিয়ে শঙ্কা। বিষয়টির সুরাহা না হলে এখাতে গতি আসবে না।
গত ২৩ আগস্ট ড্যাপের প্রজ্ঞাপন জারি করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ওই দিনই ২০ বছর মেয়াদি নতুন ড্যাপ কার্যকর হয়। যা ২০১৫ সাল থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত চলবে। আর এরমধ্য দিয়ে ২০১০ সালে পাস হওয়া ড্যাপ স্বাভাবিকভাবেই অকার্যকর হয়ে যায়।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ড্যাপের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের আগ পর্যন্ত ২০১০ সালের ড্যাপের অধীনে যেসব কাজ সম্পন্ন হয়েছে বা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বৈধ বলে গণ্য হবে।
প্রজ্ঞাপন জারির পরপরই আগে জমা দেওয়া প্ল্যানগুলো পাসের হিড়িক পড়ে যায়। আগে জমা দেওয়া প্ল্যনের ক্ষেত্রে যেহেতু নতুন ড্যাপ প্রয়োজ্য হবে না তাই তড়িঘড়ি করে প্ল্যান পাসের জন্য তদবির করেন সংশ্লিষ্টরা।
এনএইচবি/এমএমএ/