সাড়ে ৫ বছরেও শেষ হয়নি ৩২ কারাগারে সিসিটিভি কক্ষ স্থাপনের কাজ!
সাড়ে ৫ বছরেও দেশের ৩২টি কারাগারে সিসিটিভি কক্ষ স্থাপনের কাজ শেষ হয়নি। বরং চার দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে সাড়ে পাঁচ বছর। কিন্তু কাজ শেষ হয়নি। অথচ প্রকল্পের মেয়াদ ছিল মাত্র দুই বছর। এই অবস্থায় প্রকল্পের কাজ শেষ করতে আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের(একনেক) সভায় পঞ্চমবারের মতো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলো। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, কারাগারে থাকা বন্দীদের নিরাপত্তা, তাদের গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও বন্দীদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আসা দর্শনার্থীদের তল্লাশি, অবৈধ মালামাল কারা অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ রোধে সরকার ২০১৬ সালে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়।
‘কারা নিরাপত্তা আধুনিকায়ন, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্রগ্রাম বিভাগ’ নামের এই প্রকল্পের আওতায় দুই বছরের মধ্যে দেশের ৮টি কেন্দ্রীয় কারাগারসহ ৩২টি কারাগারের নিরাপত্তার জন্য ৩২টি সিসিটিভি কক্ষ নির্মাণ ও ১৩০টি নেটওয়ার্ক জ্যামার কিনে স্থাপন করার কথার ছিল। প্রথমে ৩২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিলেও পরবর্তীতে সংশোধন করে করা হয় ৫০ কোটি টাকা। এতে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ ৩২ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, কারা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পে গত জুন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। চার দফায় প্রকল্প সংশোধন করে কাজের মেয়াদ বাড়ানো হলেও শেষ না হওয়ায় পঞ্চমবারের মতো সংশোধন করে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার।
পরিকল্পনা কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা, চট্রগ্রাম, ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৩২টি কারাগারের মধ্যে ৮টি বিভাগীয় ও ২৪টি জেলা পর্যায়ে কারাগারের নিরাপত্তার বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও স্থাপনের লক্ষ্যে সরকার ২০১৬ সালের ২৪ মে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। ৫০ কোটি টাকার নিচে হওয়ায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রকল্পটি অনুমোদন দেন। ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর।
প্রকল্পের প্রধান প্রধান কাজ ধরা হয়েছিল বিদ্যমান ৩২টি কারাগারের মধ্যে ৮টি কেন্দ্রীয় কারাগারে একতলা ভিত বিশিষ্ট ২০ বাই ১৫ ফুট এবং ২৪টি জেলা কারাগারে ১৫ বাই ১৫ ফুট আয়তনের সিসিটিভি কক্ষ নির্মাণ ও ১৩০টি মোবাইল ফোন জ্যামার স্থাপন। এ ছাড়া ২ সেট বডি/ পারসোনাল/ ভিউ স্ক্যানার, ৭৪ সেট নেটওয়ার্ক ভিডিও রেকর্ডার (এনভিআর), ১ হাজার ১৪২টি আইপি বুলেট ক্যামেরা, ৪৩টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, ৬ সেট লাগেজ স্ক্যানার, ৩২ সেট সিকিউরিটি সাইরেন সিস্টেম কেনার কথা ছিল। একইসঙ্গে ৩৪টি আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর, ৮০টি হ্যান্ডমেটাল ডিটেক্টর ও ৩২সেট টেনয় সিস্টেম কেনারও সিদ্ধান্ত দিয়েছিল সরকার।
সূত্র আরও জানায়, ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কারাবন্দীদের নিরাপদ কারাবাস নিশ্চিতকরণ ও কঠোর শৃঙ্খলা বজায় রাখার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
তাই সরকার কারা নিরাপত্তার জন্য ও অপরাধীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় চার বার সংশোধন করে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। তাতেও কাজে অগ্রগতি হয়নি। ফলে জুন পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা ও বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৬০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পের জন্য এডিপিতে এক লাখ টাকা বরাদ্দও রাখা হয়েছে।
বারবার সংশোধন করেও কাজ শেষ না হওয়ায় আইএমইডি সংশোধনের ব্যাপারে ২০২২ সালের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা অনুসারে কাজ সমাপ্ত করতে সুপারিশ করে।
ছোট প্রকল্প হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের সময় বারবার বৃদ্ধি বিষয়ে জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আসলে সবকিছু জেনে শুনে প্রকল্পে মেয়াদ বৃদ্ধি করে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তারা বাস্তবায়ন করতে পারে না। তবে প্রধানমন্ত্রীও বারবার বলছেন প্রকল্প যেন সঠিক সময়ে বাস্তবায়িত হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) সত্যজিত কর্মকার প্রকল্পের কাজের সময় আরও ছয় মাস বৃদ্ধি করে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সুপারিশ করেছেন। এই সময়ের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা ও ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়ন করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য মতামত দিয়েছেন।
প্রকল্প প্রণয়ন, অনুমোদন ও সংশোধন গাইডলাইনে ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প পরিকল্পনামন্ত্রী অনুমোদন করতে পারেন। কিন্তু কোনো প্রকল্প চারবারের বেশি সংশোধন করতে হলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় উপস্থাপন করতে হয়। এ কারণে মঙ্গলবার একনেক সভায় উপস্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে অনুমোদন দেন।
প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে তথ্য অধিকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য প্রদানকারী ও সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. মাইন উদ্দিন ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এ ব্যাপারে জানতে হলে এআইজি (উন্নয়ন) মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি সব বলতে পারবেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রকল্প পরিচালক ও ঢাকা কারা উপ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। কিন্তু একাধিকবার চেষ্টা করে তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এনএইচবি/এসজি