সোনাহাট সেতুর কাজ শেষ হবে কবে?
ছবি: অনিল চন্দ্র রায়, প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কাজ শেষ হয়নি কুড়িগ্রামের দুধকুমার নদীর উপর সোনাহাট সেতু নির্মাণের কাজ। এ কারণে দুই দফা সংশোধন করে কাজের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। টাকাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারপরও কাজ শেষ হয়নি। এ কারণে এলাকাবাসীর ভোগান্তি কমেনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নদী পারাপার হতে হয় মানুষকে।
প্রকল্প সুত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ। এই অবস্থায় বাকি কাজ শেষ করতে আরও এক বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব সড়ক বিভাগ থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, কাজ তদারকি করতে নিয়ম অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ে পিইসি ও পিআইসি মিটিং হওয়ার কথা থাকলেও সেটা হয়নি। ফলে কাজের গাফিলতি ছিল।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী–সোনাহাট স্থলবন্দর-ভিতরবন্দ-নাগেস্বরী মহাসড়কের দুধকুমার নদীর উপর সোনাহাট সেতু নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালে কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ও মানুষের ভোগান্তি কমাতে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকার ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর প্রকল্পটি অনুমোদনও দেয়।
প্রকল্পের আওতায় কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী-ভুরুঙ্গামারী-সোনাহাট স্থলবন্দর জাতীয় মহাসড়কে দুধকুমর নদীর উপর ৬৪৫ মিটার পিসি গার্ডার সেতুসহ ২ দশমিক ৩২ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও ১টি এক্সেললোড কন্ট্রোল স্টেশন নির্মাণ করার কথা।
প্রায় ২৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুনে বাস্তবায়ন করার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। এ জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে সংশোধন করে এক বছর সময় বৃদ্ধি করে ২০২২ সালের ৩০ জুন ধরা হয়। তাতে ব্যয় বৃদ্ধি পায় প্রায় তিন কোটি টাকা। অর্থাৎ ২৩৬ কোটি টাকা। তাতেও কাজের অগ্রগতি হয়নি।
গত মে পর্যন্ত এই প্রকল্পে কাজের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৯ শতাংশ ও বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ।
এই পরিস্থিতিতে আরেক দফা সময় বাড়ানোর জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে আইএমইডি সরেজমিন প্রকল্প পরিদর্শন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, কাজ তদারকি ও সুষ্ঠভাবে বাস্তবায়ন করতে তিন মাস পর মন্ত্রণালয়ে পিইসি ও পিআইসি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু এই প্রকল্পে তা হয়নি। সোনাহাটের মানুষের জন্য এ সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও দীর্ঘ সময়ে প্রকল্পের মাত্র ২টি পিএসসি ও একটি পিআইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যা মোটেই কাম্য নয়। সভাগুলো নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রকল্পের ব্যাপারে সমস্যায় পড়ে।
আইএমইডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণ ও হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। পর্যাপ্ত মালামাল ও জনবল সরবরাহ করে প্রকল্পের সব কাজ ২০২৩ সালের জুনে সমাপ্ত করার বিয়ষটি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে প্রকল্পের সমাপ্তি মূল্যায়ন প্রতিবেদন নির্ধারিত সময়ের (তিন মাস) মধ্যে আইএমইডিতে প্রেরণ করতে হবে।
কুড়িগ্রাম সড়ক বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, এই প্রকল্পের কাজ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের জুন মাসে। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটি আবারও সংশোধন করে এক বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
কিন্তু তারপরও এ বর্ধিত সময়েও এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে না বলে কর্তৃপক্ষের অভিমত। জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও কুড়িগ্রাম সড়ক বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণই প্রধান সমস্যা। রেলওয়ের ভূমি সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) পরিকল্পনা কমিশনে এ ব্যাপারে পর্যালোচনা সভা হয়েছে। অক্টোবর পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৩০ শতাংশ ও বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৪০ শতাংশ। তাই বাকি কাজ আগামী অর্থবছরের মধ্যে (জুনে) হবে না। দেড় থেকে দুই বছর লেগে যাবে। এটার সিদ্ধান্ত নিতে পরিকল্পনা কমিশনে আবার সভা হবে। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখেন, আমি মাত্র চার মাস থেকে এর দায়িত্ব নিয়েছি। দেরি তো যা হবার আগে হয়েছে। আমি তৎপর। তাই বিভিন্নভাবে দৌড়ঝাঁপ করছি। আশা করি রেলওয়ে জমি দিলে তাড়াতাড়ি কাজ হয়ে যাবে।’
এনএইচবি/আরএ/