জনশক্তি রপ্তানিতে কাটছে না মধ্যপ্রাচ্য নির্ভরতা
জনশক্তি রপ্তানিতে মধ্যপ্রাচ্যের উপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করা হলেও কার্যত সেটি এখনো সফল হয়নি। চলতি বছরেও দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ বাংলাদেশি কর্মীর গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোই।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে ৭১ হাজার ১৭২ জন কর্মী সৌদি আরব, ১২ হাজার ৮৮৫ জন কর্মী আরব আমিরাতে, ১৪ হাজার ৫১৫ জন কর্মী ওমানে, ১ হাজার ৪৩১ জন কর্মী কাতারে, কুয়েতে ৭২১ জন, লেবাননে ২১ জন এবং ১ হাজার ৪৭৮ জন কর্মী জর্ডানে গিয়েছেন। অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের উল্লিখিত ৫টি দেশেই বাংলাদেশের কর্মী গেছেন ১ লাখ ২ হাজার ২২৩ জন।
অন্যদিকে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে মধ্যপ্রাচ্যের বাইরের দেশ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জাপান ও ব্রুনাইয়ে কর্মী গেছেন মাত্র ৪ হাজার ৯৯ জন।
একইভাবে ফেব্রুয়ারিতে মধ্যপ্রাচ্যের উল্লিখিত সাতটি দেশে বাংলাদেশি কর্মী গেছেন ৮৬ হাজার ৮৫২ জন। এসময়ে মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে দেশ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জাপান ও ব্রুনাইতে বাংলাদেশি কর্মী গেছেন মাত্র ৩ হাজার ২০০ জন।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় প্রতিমাসেই মধ্যপ্রাচ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর বাইরে দেশে কর্মী যাওয়ার পরিসংখ্যানে আকাশ-পাতাল তফাৎ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ওমান, কাতার, কুয়েত, লেবানন ও জর্ডানে মোট কর্মী গেছেন ৭ লাখ ৭৫ হাজার ২৬২ জন।
অন্যদিকে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে দেশ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জাপান ও ব্রুনাইতে বাংলাদেশি কর্মী গেছেন মাত্র ৬২ হাজার ৭৪২ জন।
শতাংশের হিসাবে মধ্যপ্রাচ্যের উল্লিখিত সাতটি দেশে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কর্মী গেছেন ৮৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অন্যদিকে, একই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে উল্লিখিত সাতটি দেশে বাংলাদেশি কর্মী গেছেন ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। বাকি ৪ দশমিক ২০ শতাংশ কর্মী বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন দেশে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ বিভিন্ন সময় মধ্যপ্রাচ্য নির্ভরতা কমিয়ে অন্যান্য দেশে জনশক্তি রপ্তানির উপর জোর দেওয়ার কথা বলেন। সে অনুযায়ী সরকার পদক্ষেপও নেওয়া শুরু করেছে।
নতুন সম্ভাব্য গন্তব্য যেসব দেশ
মধ্যপ্রাচ্যের বিকল্প শ্রমবাজার হিসেবে মূলত ইউরোপকে ভাবছে সরকার। ইতোমধ্যে যুগোস্লাভিয়া, আলবেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও রোমানিয়ায় কিছু সংখ্যক শ্রমিক গেছে। তবে এই দেশগুলো ভবিষ্যতে বিপুল সংখ্যক কর্মী নেবে। এ ছাড়া গ্রিস, মাল্টা, আলবেনিয়া ও সার্বিয়াও বাংলাদেশি কর্মী নেবে বলে জানিয়েছে।
এদিকে মধ্য ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর দিকেও নজর রয়েছে সরকারের। উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং হংকংয়ে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়টি ভাবছে সরকার।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) করার চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে বৈধভাবে কর্মী পাঠানো যায়। এর অংশ হিসেবে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের ভাষা শেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ইতোমধ্যে জাপানে বৈধভাবে কর্মী পাঠাতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্টদূত ইতো নাওকি। বৈঠকে জাপান বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে কর্মী নিতে রাজি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, জাপান ২০২৫ সালের মধ্যে সারাবিশ্ব থেকে ৫ লাখ কর্মী নেবে। জাপানি ভাষা জানলে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এই বাজার বাংলাদেশকে ধরতে হবে।
এনএইচবি/এসএন