অনলাইনে জুয়া খেলা থামছেই না
জুয়ার ওয়েবসাইট বন্ধ করেও থামানো যাচ্ছে না অনলাইনে জুয়া খেলা। ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) দিয়ে ঠিকই ওয়েবসাইটগুলো দেখা যায়। ফলে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে শত শত কোটি টাকা।
অথচ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিটিআরসি) ইতোমধ্যে প্রায় দুই হাজারের মতো জুয়ার ওয়েবসাইট বন্ধ করেছিল। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, বিটিআরসির কার্যক্রম ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’র মতো।
এরকম একটি প্রক্সি ওয়েবসাইট হলো www.zalagam.net/az. বিটিআরসির গেটওয়েতে যেসব জুয়ার সাইট বন্ধ সেসব সাইটও এই প্রক্সিসাইটে গেলেই পাওয়া যাচ্ছে এবং ব্যবহারও করা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি একটি মাত্র উদাহরণ। আরও হাজার রকম ভিপিএন রয়েছে যেগুলো দিয়ে অনলাইনে জুয়া খেলা থেমে নেই।
জানতে চাইলে বিটিআরসির উপ-পরিচালক (মিডিয়া) জাকির হোসেন খান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, জুয়ার সাইট বন্ধ করতে বিটিআরসির কার্যক্রম চলমান। যেকোনো মাধ্যমে যদি জানা যায় যে জুয়ার সাইট চালু আছে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয় বিটিআরসি।
অন্যদিকে, ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভুঁইয়া ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ভিপিএন দিয়ে যদি কেউ কোনো ওয়েবসাইটে ঢোকে সেটা আসলে কেউ রুখতে পারে না। এটা না বিটিআরসি পারবে না আমরা পারব। বাস্তবে কেউই এটা পারবে না। ভিপিএন বন্ধ করলে ইন্টারনেটই বন্ধ হয়ে যাবে।
যেভাবে পাচার হচ্ছে টাকা
বেশির ভাগ বেটিং ওয়েবসাইটগুলোর এদেশীয় এজেন্ট আছে। এসব এজেন্টের মাধ্যমে এসব কার্যক্রম চলে। পুলিশ মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে এজেন্টদের গ্রেপ্তারও করে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মোবাইল নম্বর বা ই-মেলের মাধ্যমে জুয়ার সাইট বা অ্যাপে একাউন্ট খোলা হয়। একাউন্ট খোলা হয়ে গেলে ওই একাউন্টের বিপরীতে একটি ই-ওয়ালেট তৈরি হয়।
প্রথমে এই ওয়ালেটে ব্যালেন্স শূন্য থাকে। এই ওয়ালেটে ব্যালেন্স যোগ করার জন্য মোবাইল ব্যাংকিংসহ অনেক মাধ্যম রয়েছে। ন্যূনতম ৫০০ টাকা দিলে ওয়ালেটে যুক্ত হয়ে যায়। এই ব্যালান্স দিয়েই জুয়া খেলা হয়।
মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) এজেন্টরা জমা টাকা তুলে ‘বাইন্যান্স’ এর মাধ্যমে ক্রিপ্টো কারেন্সিতে রূপান্তর করে। পরে এই ক্রিপ্টোকারেন্সিই বিদেশে পাচার করা হয়।
যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে
এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজারের মতো ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে বিটিআরসি। এ ছাড়া গুগল, ফেসবুক ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষকেও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছে বিটিআরসি।
সম্প্রতি এমএফএস অপারেটরদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে অপারেটরদের প্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংককেও চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
জুয়ার সাইট বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিটিআরসিকে সহযোগিতা করছে জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিএ সেলের মহাপরিচালক ও ডিজিটাল ই-কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ব্লক করা কিছু ওয়েবসাইট ভিপিএনের মাধ্যমে খোলা যেতে পারে। এ ব্যাপারে বিটিআরসি গুগল বা ফেসবুককে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলে যাতে এগুলোর রিয়েলটাইম অবস্থাটা জানা যায়।
এনএইচবি/আরএ/