চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর
গুরুত্ব পাবে রোহিঙ্গা-তাইওয়ানসহ আঞ্চলিক ইস্যু
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঢাকা আসছেন আজ। সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে রোহিঙ্গা, তাইওয়ান ও বিভিন্ন আঞ্চলিক ইস্যু গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের সহযোগিতা ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এই বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ এক ধরনের সংকটেও আছে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের সামনে চীনের যেমন কোনো বিকল্প নেই, তেমনি বিশ্ব রাজনীতি ও পশ্চিমা বাণিজ্য মাথায় নিলে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের দিকে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই বাংলাদেশের সামনে।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলছেন, চীনের সমর্থন ছাড়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। এটাই বাস্তবতা। মিয়ানমারকে রাজিও করানো যাবে না চীনের সমর্থন না পেলে। বাংলাদেশের এ বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
এদিকে, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর যুক্তরাষ্ট্র-চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করেছে। মার্কিন স্পিকারের তাইওয়ান সফরকে কেন্দ্র করে টানাপড়েনের পরিপ্রেক্ষিতে চীন ‘আশা করেছে’ বাংলাদেশে তার সঙ্গে থাকবে।
ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর শেষ হতে না হতেই ঢাকার চীনা দূতাবাস একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। ওই বিবৃতিতে দেশটি আশা করেছে, বাংলাদেশ তাদের ‘এক চীন’ নীতি ও তাইওয়ান ইস্যুতে পাশে থাকবে।
এর জবাবে অবশ্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে যে ‘এক চীন’ নীতি সমর্থন করে ঢাকা। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশ কাকে সমর্থন করবে না করবে সেটি বাংলাদেশের একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। তবে চীন আমাদের বন্ধু। তাদের ‘এক চীন’ নীতি আমরা সমর্থন করি।
দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনায় গুরুত্ব পাবে আঞ্চলিক ইস্যুও। চীন দীর্ঘদিন থেকেই ‘ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ নিয়ে এগোচ্ছে। বাংলাদেশও এ উদ্যোগের সঙ্গে আছে। এর পাশাপাশি এশিয়ার ন্যাটো বলে পরিচিত কোয়াডে যোগ দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের চাপ রয়েছে বাংলাদেশের। কিন্তু বাংলাদেশ যাতে কোয়াডে যোগ দিতে না পারে সেই ‘প্রত্যাশা’ করে চীন।
কূটনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ ভূরাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে। ইন্দোপ্যাসিফিক অঞ্চল ঘিরে যে প্রতিযোগিতা তাতে বঙ্গোপসাগর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীন এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র-ভারতও বাংলাদেশকে চায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৭ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও রোহিঙ্গা ইস্যুর মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। এর বাইরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তাইওয়ান ও এক চীন ইস্যু, কোয়াড-আইপিএসের মতো বিষয়গুলো বৈঠক তুলতে পারে চীন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট এশিয়া স্টাডি সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, একই ধরনের সমস্যায় আছে মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, নেপাল। এ অবস্থায় কোনো কোনো দেশ আরও বেশি করে চীনমুখী হচ্ছে কোনো কোনো দেশ আবার ভারত বা কোয়াডমুখী হচ্ছে।
আজ আসছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এ অবস্থায় শনিবার (৬ জুলাই) দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৬ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকায় পৌঁছাতে পারেন ওয়াং ই।
বিমানবন্দরে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ওই সময় কম্বোডিয়ায় থাকায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাবেন।
রবিবার (৭ আগস্ট) বাংলাদেশ ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ওয়াং ই। ৭ আগস্ট তিনি ঢাকা ছেড়ে যাবেন।
এনএইচবি/এসএন