‘বঙ্গবন্ধুর মামলায় বিচারপতিরা বিব্রত হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের ক্ষতি হয়েছে’
আনিসুল হক। বর্তমান সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রধান কৌশলী। যে মামলায় তার বাবা সিরাজুল হকও ছিলেন প্রধান কৌশলী। তার বাবার মৃত্যুর পর তিনিই হাল ধরেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার। শেষ পর্যন্ত মামলায় খুনীদের ফাঁসি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) বিকালে সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে বসে ঢাকাপ্রকাশ এবং দুটি টেলিভিশন চ্যানেলকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া, প্রতিবন্ধকতা, রায় কার্যকর হওয়া, বিচারপতিদের বিব্রত হওয়া নিয়ে কথা বলেছেন। সেই কথোপকথনের পুরোটা তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: আপনারা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন, সেই প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে যে প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে বিচারকাজ শেষ করতে সময় লেগেছিল, সেই প্রক্রিয়াটা যদি বলতেন…
আনিসুল হক: প্রথম কথা হচ্ছে যে, সেটা যদি ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করি তাহলে প্রথম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে যে, একটা সন্দেহ ছিল, যারা এই মামলা নিয়ে হ্যান্ডেলিং করছিলেন তাদের মধ্যে একটা সংশয় ছিল যে, ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স থাকলে এই মামলা করা যাবে কি না। আর ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স তুলে এই মামলা করতে হবে কি না। মামলা প্রথম প্রধান কৌশলী মরহুম সিরাজুল হক সাহেব। তার মতামত ছিল যে, ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স থাকলেও এই মামলা চলবে, চলতে পারে। তার কারণ হচ্ছে ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্সের দু’টি প্যারাগ্রাফ আছে।
একটায় বলা আছে যে, যারা বঙ্গবন্ধুকে এবং তার পরিবারকে হত্যা করেছে তাদের কোনো বিচার হবে না। কোনো আদালতে এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
দ্বিতীয় প্যারাগ্রাফে বলা ছিল, এই বিচারের আওতায় যারা আসবেন না রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে তাদের একটা সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। সেই সার্টিফিকেট তাদের হাতে থাকলে বোঝা যাবে যে তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তখন তারা এই মামলার আওতায় আসবেন না।
এই সার্টিফিকেটটা খুনী খন্দকার মোশতাক দিয়ে যেতে পারেনি। যেহেতু কারও সার্টিফিকেট নাই সেহেতু মামলা চলতে পারে।
তারপরও ১৯৯৬ সালের নভেম্বর মাসে, খুব সম্ভব ১২ নভেম্বর এই ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্সটা বাতিল করা হয়। কিন্তু আপনারা জানেন যে ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর কিন্তু এফআইআরটা করা হয়, এজহারটা দাখিল করা হয়।
এজহার দাখিলের পরের যে প্রতিবন্ধকতা সেটা হচ্ছে যে, ২১ বছর আগের একটা ঘটনা। আর যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা তো তখন অনেকেই পালিয়ে গেছে। জিয়াউর রহমান সরকার ও এরশাদ সরকারের বদৌলতে। তথ্যাদি এবং এই ঘটনা সম্পর্কে এর চিত্রটা সম্পূর্ণ অঙ্কন করতে যারা মামলাটি তদন্ত করেছেন তাদেরকে চার হাজারেরও বেশি…আমি তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তিনি আমাকে বলেছেন, সব মিলে চার হাজার লোককে তিনি ইন্টারভিউ করেছেন। তার থেকে তিনি ৬১ জনকে সাক্ষী হিসেবে নিয়েছেন।
ইত্যবসরে যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন হলো তখন অনেক আর্মি অফিসার বই লেখা শুরু করে দিলেন নিজেদেরকে বাঁচানোর জন্য। একজন এ বলছে, আরেক জন বি বলছে, একজন যায় পশ্চিম দিকে তো আরেকজন যায় পূর্ব দিকে। তাদেরকে সমন্বয় করে এনে এই ঘটনাটা…।
যতই আত্মস্বীকৃত অপরাধী হোক না কেন আদালতের সামনে যখন এটা উপস্থাপন করা হয় তখন তো এটাকে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে উপস্থাপন করতে হবে। এটা তো মামলা, আইনের প্রক্রিয়ায় যাবে। সেখানেও প্রতিবন্ধকতা ছিল। তারপরও আলহামদুলিল্লাহ বলব।
১৯৯৭ সালের জানুয়ারিতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মার্চ মাস থেকে ট্রায়াল শুরু হয়। তারপর আর প্রতিবন্ধকতা নয়, মামলার পদে পদে …প্রথম দেখেন খুনী রশীদের স্ত্রী জুবায়দা রশীদ একটা কনফেশন করেছেন, কনফেশনের মধ্যে একটা জায়গায়, একটা শব্দ একটু ওভাররাইটিং আছে। এই যে ওভাররাইটিংয়ের কারণে তাকে হত্যা মামলার দায় থেকে মুক্ত করে দিল হাইকোর্ট। বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী ও বিচারপতি নঈম এর বেঞ্চ রায় দিলেন। এটা গেল…।
তারপর মামলা শুরু হহওয়ার পর তারা দুই তিনবার হাইকোর্টে এই মামলার বিরুদ্ধে...এই মামলা চলতে পারে না, এই মামলা...। সবকিছু...তাদেরকে সব সুযোগ দিয়েই আমরা ১৯৯৮ সালে মামলাটি শেষ করলাম। মামলায় আসামিদের সাজা হলো।
শেষ হওয়ার পর আসলাম হাইকোর্টে। হাইকোর্টে যখন মামলা রেডি হয়ে গেল, তাও কি… মামলা রেডি করার জন্য হাইকোর্টের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নিজের পয়সায় ফটোস্টেট মেশিনসহ এইটা-সেইটা সবকিছু কিনে হাইকোর্টকে দিয়ে দিলেন। অর্থাৎ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে দায়িত্ব পালন করার কথা সেই দায়িত্ব তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে পালন করলেন।
মামলা রেডি হলো। সাত সাতজন বিচারপতি এই মামলা শুনতে বিব্রত বোধ করলেন। জানি না কেন? অবাক কাণ্ড। ঠিক আছে, সেটাও পার হয়ে গিয়ে প্রধান বিচারপতিকে অর্ডারে লিখতে হলো এই মামলা জাস্টিস এম রুহুল আমীন এবং জাস্টিস খায়রুল হক শুনবেন। এটা অর্ডারশিটে আছে।
তারপর তো আপনারা দেখলেন বিভক্ত (ডিসেন্টিং) রায় হল। এরপর গেলাম তৃতীয় বিচারকের কাছে। থার্ড জাজ শেষ হলো। চলে আসল নির্বাচন। নির্বাচনে ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দিল।
তারপর আসল এই পাঁচ বছর। মওদুদ সাহেবকে অনুরোধ করেছি যে, আপনি আপিল বিভাগে জাজ নিয়োগ দেন। বলেছি, সংবিধানে কিন্তু অ্যাডিশনাল জাজ দেওয়ারও বিধান আছে। সেটাকে অ্যাপ্লাই করেন। তবুও মামলাটার শুনানি হোক। একদিন হঠাৎ খুব সম্ভবত ২০০২ সালের ৭ মার্চ, (আমার মনে আছে এই কারণে যে, আমার বাবা সেকেন্ড লাস্ট টাইম কোর্টে গেলেন)। ওই দিন জাস্টিস মাহমুদুল আমীন চৌধুরী একলা বসে বললেন যে, জাস্টিস মোদাচ্ছের আর জাস্টিস আবু সাঈদ আহমেদ, উনারা বিব্রত। সেই জন্য মামলাটা শুনানি করতে পারিছ না।
আমার মনে হয়, এটা না হওয়ায় ভালোই হয়েছে।
তারপর ২০০৭ আসল। ভাগ্যচক্রে আরেক মহিউদ্দিনকে যুক্তরাষ্ট্র ডিপোর্ট করে দিল। উঠল লিভ পিটিশন। জাস্টিস তোফাজ্জল ইসলাম, জাস্টিস হাসান আমীন আর জাস্টিস জয়নাল আবেদিন এই তিনজন। তখন আমার উপর দায়িত্ব পড়ল।
২০০৩ থেকেই আমার উপরে দায়িত্ব পড়েছিল। কারণ জেল হত্যা মামলার প্রধান কৌশলী করা হলো আব্বার মৃত্যুর পর। ওইখানে বিচার পাব না বলে আমি রিজাইন করলাম। ২০০৭ সালে যখন মামলাটা উঠল তখন বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো যে, কে মামলাটা করবে? আই অ্যাম গ্রেটফুল টু অনারেবল প্রাইম মিনিস্টার আমাকে দায়িত্বটা দিয়েছেন। তখন আমি শুরু করলাম। তখন আবার লিভ। ঠিক আছে লিভ দিলাম। ওনারা চলে গেল।
তারপর আবার ২০০৯ সালে এই মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানি শুরু হলো। পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে রায় হলো। পূর্ণাঙ্গ শুনানিতে ছিলেন জাস্টিস তোফাজ্জল ইসলাম এবং…প্রথমবারের মত…আপিল বিভাগের অবস্থা হলো…আপিল বিভাগে যারা আছে তাদের মধ্যে দুই জন জাজ হচ্ছেন, যারা শুনেছেন তারমধ্যে একজন হচ্ছেন জাস্টিস ফজলুল করিম, আরেকজন হচ্ছে জাস্টিস খায়রুল হক। আর বাকি যারা তারা বিব্রত হয়েছেন। প্রধান বিচারপতি এম এম রুহুল আমীন বিব্রত হয়েছেন, জাস্টিস মতিন বিব্রত হয়েছেন। আরও দুইজন কে…উনারাও বিব্রত হয়েছেন।
ফলে এখানে মামলাটা করা গেল না। সো এটা সম্প্রসারণ করে ১১ জনের একটা বেঞ্চ করা হল। ১১ জনের বেঞ্চ করে পাঁচ জনকে দেওয়া হল বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানি করার জন্য। জাস্টিস তোফাজ্জল ইসলাম, জাস্টিস বি কে দাস, জাস্টিস এম এ আজিজ, জাস্টিস মোজাম্মেল হোসেন, জাস্টিস এসকে সিনহা। এই পাঁচ জনের বেঞ্চে মামলাটা করলাম, মামলার রায় হলো বোধ হয় ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি। ওরা আবার রিভিউ পিটিশন করল ২৭ জানুয়ারি। সেই রিভিউ পিটিশন শুনানি হল ২৮ জানুয়ারি। তারপর ফাঁসি কার্যককর হলো।
এই হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। দেখেন আনন্দ যেটুকু, সেটিসফ্যাকশন…। এর আগে আমি একটা কথা বলি, দেখেন রায় আদালত দিয়েছে, রায় হয়েছে, সাজা হয়েছে। এতে কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করার যে কলঙ্ক, সেই কলঙ্ক কিন্তু মুছে নাই। এই কলঙ্ক মুছবে না। এই দায়ভার বাংরাদেশের জনগণের বহন করতে হবে। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে এই দায়ভার ততোদিন থাকবে।
হয়তো আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে কিছুটা হয়তো পাপমোচন হবে। কিন্তু দায়ভার যাবে না। এই কলঙ্কের দায়ভার যাবে না। আজকে পর্যন্ত কিন্তু…এই যে মহাত্মা গান্ধীকে কে খুন করেছে তার জবাব নাই। এই দায়ভার থাকবে। কারণ, যদি আমরা এই হত্যার বিচারটা ১৯৭৬ সালে করতাম তাহলে কিন্তু দায়ভারটা এত থাকত না। আর আরেকটা কারণ হচ্ছে আপনি কাকে মেরেছেন। আই থিংক যে আপনারা বলছেন যে, নতুন প্রজন্মকে এটা নতুন করে দেখতে হবে যে, সেই সময়ে কাকে মারা হয়েছে। সেই সময়ে কিন্তু একটা লোক যিনি জীবনের প্রথমদিন থেকে, বুদ্ধি হওয়ার প্রথমদিন থেকে এই দেশের মানুষের সেবা করে গেছেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।
এই লোকটা না থাকলে...আপনারা ইতিহাস দেখেন কত নেতা এসেছে, কত নেতা গেছে। তারা সকলেই কিন্তু পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো না কোনো পর্যায়ে আপস করেছে। বঙ্গবন্ধু করেননি।
প্রশ্ন: যখনই মামলাটা করলেন তখন অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। আপনারা যারা মামলাটা লড়লেন আপানাদের উপর কি কোনো চাপ ছিল?
আনিসুল হক: দেখেন এই মামলা করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই হয়তো জীবনে হুমকি ধামকি আসতে পারে। এখনো তো বেঁচে আছি। আমার বাবা মারা গেছেন, স্বাভাবিক। বয়স হয়েছে মারা গেছেন। যারা এই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তারা সবাই স্বাভাবিকভাবে মারা গেছেন। আর যারা বেঁচে আছেন। হুমকি ধামকি যদি দুই একটা এসে থাকে আই ডোন্ট টেক দিস।
হুমকি ধামকি তো স্টাবলিসমেন্ট থেকে আসছে। হুমকি ধামকি তো…আমি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা শুনতে বিব্রত, এরচেয়ে বড় হুমকি আর কী হতে পারে? তখন সেই জায়গা থেকে ওই হুমকি ধামকি ইমমেটেরিয়াল।
প্রশ্ন: মামলার রায় যেদিন কার্যকর হলো সেদিন আপনার অনুভূতিটা কেমন ছিল?
আনিসুল হক: চোখে পানি তো আসবেই। চোখে পানি আসলেও সেটা আনন্দের পানি ছিল না। চোখে যদি পানি এসে থাকে সেটা দুঃখ এবং একটা বিচার হয়েছে, সেই তৃপ্তির হয়ত…চোখে জল ছিল। অস্বীকার করব না। (এ সময় আনিসুল হকের দু’চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল) ।
কিন্তু আপনারা যদি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বলেন, জিজ্ঞস করেন যে এই বিচার করে যে…তাহলে বলব, একটা ক্লোজার হয়েছে। আজকে এই বিচার শেষ হওয়ার কারণেই কিন্তু আমরা পরের ধাপে গিয়েছি। সেটা হচ্ছে নেপথ্যে কারা ছিল সেই জন্য একটা কমিশন করার রূপরেখা প্রায় তৈরি করেছি। তো সেই ক্ষেত্রে আমি বলব, দেখেন কষ্ট যায়নি। সত্য কথা। কষ্ট যায়নি।
সুনামি তো আপনারা দেখেছেন। আমাদের মধ্যে কিন্তু আগস্টের ১৫ তারিখে একটা সুনামি বয়ে গেছে। যেই ঢেউ…।
এই দেখেন একটা কথা মনে পড়ে গেল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমি আমার বেড রুমে ঘুমিয়ে আছি। আব্বা-আম্মা তাদের বেড রুমে ঘুমিয়ে আছেন। ছোট ভাই ওর বেড রুমে। বড় বোন তখন দেশে নেই।
ভোরবেলা হঠাৎ বিকট একটা আওয়াজ…এই আওয়াজ এমন আওয়াজ ধুম করে একটা আওয়াজ…। আমার মনে হয়েছে আমার পাশে কিছু নাই। আমি চোখ খুলি নাই। না খুলেই একটা চিৎকার দিয়েছি। আম্মা, আব্বা কোথায়? আম্মা তখন বলছেন, তোমার আব্বা আমার পাশেই আছে। তখন বুঝলাম আমার পাশে সব ঠিক আছে। আম্মা বললেন, তুমি চলে আস আমার পাশে।
আমি, আব্বা, আম্মা তিন তলার ছাদে গিয়েছি। আম্মা সিড়ি ঘরে। আমি আর আব্বা ছাদে গিয়েছি। দুই জনে গবেষণা করছি কি হলো। তখন শুনলাম টেটা টেট…টেট টেট আওয়াজ। আমাদের বাসা তখন মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডে।
আমি এরমধ্যে বলে ফেলছি, আব্বা, আপনার বন্ধুকে মেরে ফেলছে। আর আব্বা তো আমাকে গালি, তুমি বেশি বুঝো, তুমি মাতবর হয়ে গেছ।
তারপর আমরা নিচে চলে আসি। আমার বয়স কত, ১৯ বছর তখন। নিচে যাওয়ার পর সামনের বাসার প্রতিবেশি আসছেন। বসে আমরা কথা বলছি। আমাদের পাশে অভিনেতা সোহেল রানার বাবা থাকতেন। তিনি আসলেন। উনি আব্বার ডাক নাম ধরে বলতেছেন বাচ্চু ভাই বাচ্চু ভাই মুজিব ভাইকে তো মেরে ফেলছে। আপনি রেডিও শুনেন। তখন গিয়ে আমরা ডালিমের অ্যানাউন্সমেন্ট শুনছি। তখন একটা বৃষ্টি হয়। এই তো সুনামিটা হয়ে গেল। আমরা দিকবিদিক শুন্য হয়ে গিয়েছিলাম। সেদিন যদি বঙ্গবন্ধুর লাশটা ঢাকায় জানাজা হতো তাহলে দেখতাম… কে থাকে। সেদিন যদি খোলা জায়গায় একটা জানাজা হতো তাহলে খন্দকার মোশতাক, ডালিমরা এখানে থাকত না। বঙ্গোপসাগরে থাকত।
প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি হল, কিন্তু নেপথ্যে যারা থাকল…
আনিসুল হক: দেখেন নেপথ্যে যারা ছিল তাদের, সেইসব কুশিলবদের আইডেন্টিফাই করতে এবং সেই জন্য একটা কমিশনও হবে। সেই জন্য একটা রূপরেখাও আমরা তৈরি করেছি। কিন্তু এখন বেসিকেলি আমরা কি করতে পারব। আইডেন্টিফাই করতে পারব। যারা ছিলেন তারা অনেকে মরে গেছে। কিন্তু আইডেন্টিফাই করে যেতে পারব। সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী সব সময় চেয়েছেন, সেটা হচ্ছে বিচারটা হয়ে যাক। বিচারটা হলে পরে এটা যে একটা খুন, সারা দেশের জনগণ যে এটার সঙ্গে সম্পৃক্ত না, এটাই প্রমাণিত হয়ে যাক। এবং সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।
প্রশ্ন: কমিশন গঠন কোনো পর্যায়ে আছে?
আনিসুল হক: এটা ভেরি সুন হবে। আমরাও চাই মানুষ জানুক।
প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধুর খুনী যারা পালিয়ে আছেন তাদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া কতদূর?
আনিসুল হক: দেখেন এটা প্রক্রিয়াধীন। আলোচনা চলছে।
প্রশ্ন: এই যে সাতজন বিচারপতি এবং পরে আরও একাধিকজন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা চালাতে বিব্রত হলেন, এটা কেন হলেন?
আনিসুল হক: আমি জানি না। আমি তাদের মাইন্ড তো রিড করতে পারিনি। উনারা কেন বিব্রত হয়েছেন। এটা কেন… আমি যখন জানি না...। তবে এইটুকু আমি বুঝতে পারি তাদের বিব্রত হওয়াতে এই যে সুপ্রিম কোর্ট নামে প্রতিষ্ঠান তার কিছুটা হলেও ক্ষতি হয়েছে।
এমএমএ/