বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ বিল দেয় সরকার
মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও সৈয়দপুরসহ দেশের বিভিন্ন বিহারি ক্যাম্পে বসবাসরত আটকেপড়া বিহারিদের ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে সরকার। এ খাতে সরকারকে কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। সরকারের পক্ষে এই বিল পরিশোধ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বছরের পর বছর এই বিল পরিশোধ করে আসলেও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় বলছে, এখন আর তারা এই বিল পরিশোধ করবে না। এতদিন মানবিক কারণে বিদ্যুৎ বিল দিয়ে আসলেও এই ঘানি আর টানতে চায় না মন্ত্রণালয়।
তবে সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ বিল পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে। বিষয়টির সুরাহা করতে আগামী মাসে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানেই সমাধান হবে বিদ্যুৎ বিল অবলোপন হবে নাকি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় পরিশোধ করবে।
কিন্তু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বলছে, যে শর্তে বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ বিল এতদিন পরিশোধ করা হয়েছে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যেহেতু তারা বাংলাদেশের ভোটার তাই তাদের নিজেদের বিদ্যুৎ বিল নিজেদেরকেই দিতে হবে। মন্ত্রণালয় আর দেবে না।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেনে এ বি তাজুল ইসলাম বলেছেন, বিহারিরা যদি বিনা অনুমতিতে ইন্ডাস্ট্রি চালায় সেক্ষেত্রে তাদেরকে পেনাল্টি করা উচিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এতদিন যে শর্তে দেওয়া হতো সেই বাস্তবতা আর নেই। তবুও বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বিল দিতে বলা হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে তাই সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা দিতে পারি না।
তিনি আরও জানান, প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বিহারি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ বিল মন্ত্রণালয় পরিশোধ করছে না।
একই বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক (ত্রাণ) মো. নূরুল হক চৌধুরী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, দুর্যোগ মন্ত্রণালয় বহু বছর এই বিল দিয়েছে। এখন তারা ভোটার, এই দেশের নাগরিক। তাই তাদের বিল তাদেরকেই দিতে হবে। এ বিষয়ে কোর্টের রায় রয়েছে। এখন শুধু প্রয়োজনীয় না, তারা লেদ মেশিনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক কাজে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। তাই এত টাকা তো আর মন্ত্রণালয় বহন করতে পারে না। তবুও বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বিল দিতে চিঠি দিয়েছে। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে মিটিং হবে। সেখানেই চূড়ান্ত হবে কারা বিল পরিশোধ করবে।
এদিকে, বুধবার (৩ আগস্ট) বিষয়টি নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় দীর্ঘ বৈঠক করেছে। সেই বৈঠকে সংসদীয় কমিটির সভাপতি স্পষ্ট বলেছেন, বিহারিদের পেনাল্টি করা উচিত।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘মোহাম্মদপুরের বিহারি কলোনির মালিকানা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হলে সেখানে বিদ্যুৎ বিল ও খাজনা প্রদান বিষয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে ব্যাখ্যা চান। জবাবে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান এনডিসি বলেন, এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিল না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ, বিরোধ নিষ্পত্তি বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের যে কমিটি রয়েছে সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে আর বিদ্যুৎ বিল দেওয়া হবে না। এটা নিয়ে কোর্টেও মামলা আছে বলে জানান তিনি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম সচিবের কাছে জানতে চান পূর্বে কেন বিদ্যুৎ বিল দেওয়া হতো? জবাবে সচিব বলেন, তখন দুর্যোগ মন্ত্রণালয় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল, বিধায় আইনগতভাবে নির্দেশিত হয়ে বিদ্যুৎ বিল দিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, মিরপুর ও মোহাম্মদপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যে জমি রয়েছে সেগুলোর নাম জারি ও খাজনাপত্র ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আছে কি না খতিয়ে দেখতে হবে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, বিহারিরা যেহেতু নাগরিকত্ব পেয়েছে, এ জমির উপর কমার্শিয়াল এন্টারপ্রাইজ করে উপার্জন করছে তাই তাদেরকে আর শরণার্থী বিবেচনা করা হচ্ছে না। এসব বিবেচনায় আর বিদ্যুৎ বিল না দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ চাচ্ছে আমরা বিদ্যুৎ বিল দিয়ে দেই। এই বিষয়টি কেবিনেটের আন্তঃমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত কমিটিতে নেওয়া হয়েছে। আগামী মাসে মিটিং হবে এবং সে মিটিং-এ সিদ্ধান্ত হবে যে বিদ্যুৎ বিল অবলোপন হবে নাকি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় দিবে।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি বলেন, রিফিউজি হিসেবে যখন তাদেরকে থাকতে দেওয়া হয়েছিল সেখানে এমন কোনো শর্ত ছিল কি না যে জীবিকার জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করে লেদ মেশিনসহ অন্য কোন ইন্ডাস্ট্রি তারা করতে পারবে? যদি তারা বিনা অনুমতিতে এসব ইন্ডাস্ট্রি চালায় সেক্ষেত্রে তাদেরকে পেনাল্টি করা উচিত বলে মত দেন তিনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ৮১টি ক্যাম্প আছে । এর মধ্যে ছিল ঢাকার মিরপুর (২৫টি) ও মোহাম্মদপুর (৬টি)। মোহাম্মদপুরের ৬টি ক্যাম্প হলো জেনেভা ক্যাম্প, টাউন হল ক্যাম্প, সিআরও ক্যাম্প, মার্কেট ক্যাম্প, কমিউনিটি সেন্টার ক্যাম্প এবং স্টাফ কোয়ার্টার ক্যাম্প। এ ছাড়া সৈয়দপুরে বিহারিদের সবচেয়ে বেশি বসবাস। ২০০৩ সালের জরিপ অনুযায়ী প্রায় ২ লক্ষ ৭৫ হাজার উর্দুভাষী বাংলাদেশের ৮১টি ক্যাম্পে বসবাস করছে।
এসএম/এমএমএ