মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো এখনো অধরা
মালয়েশিয়ায় এখনো বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো শুরু করা যায়নি। কর্মী পাঠানোর প্রাথমিক কাজগুলো এখনও পর্যন্ত সম্পন্ন করতে পারেনি বাংলাদেশ।
বিশেষ করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এখনও চিকিৎসা কেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্ত করতে পারেনি। চাহিদাপত্রের বিপরীতে নিয়োগের অনুমোদনও দেয়নি মন্ত্রণালয়। এমনকি মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন কোম্পানিগুলোর সত্যায়ন সম্পন্ন করেনি এবং নতুন কোনো সত্যায়িত চাহিদাপত্রও পাঠায়নি।
অথচ দুই মাস আগে মালয়েশিয়ান মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান ঢাকা সফর করে তার দেশে বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ‘জট’ খুললেও দুই মাসে একজন কর্মীও মালয়েশিয়াগামী বিমানে চড়তে পারেননি। এখনও বাংলাদেশি কর্মীদের কাছে অধরাই থেকে গেছে মালয়েশিয়া।
এই পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা ও তাদের মনোনীত বাংলাদেশি এজেন্সিগুলো এবং অভিবাসী শ্রমিকরা হতাশা প্রকাশ করেছে।
অবশ্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, শিগগিরই মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরু হবে। ইতোমধ্যে সাতটি রিক্রুটিং এজেন্সিকে এক হাজার কর্মী পাঠানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয়ে মন্ত্রণালয় সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করছে। তারপরও ইচ্ছুক কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল সেন্টারের তালিকাই চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন ১৫টি মালয়েশিয়ান কোম্পানি পরিদর্শন করে ৮৮২টি চাহিদাপত্র প্রত্যয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় এখনও চাহিদাপত্রগুলোর একটিরও অনুমোদন দেয়নি।
বিষয়টি নিয়ে সরাসরি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কেউ কথা বলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) মালয়েশিয়া সরকারের কেন্দ্রীয় অনলাইন নিয়োগ ব্যবস্থার সঙ্গে বিদেশি কর্মীদের সংযুক্ত করতে কাজ করছে। সবকিছু যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে কারণ কর্মী পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াটি সংবেদনশীল।
এদিকে, কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র জানায়, নতুন কোনো মালয়েশিয়ান কোম্পানি তারা পরিদর্শন করতে পারেনি। তাই নতুন কোনো চাহিদাপত্রও তারা ঢাকায় পাঠাতে পারেনি।
রিক্রুটিং এজেন্সি এবং কর্মীরা বলছেন, জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়ার ধীর গতিতে তারা হতাশ। মাইগ্রেশন খরচ নির্ধারণ করা ছাড়া উল্লেখযোগ্য আর কোনো অগ্রগতি নেই।
একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক রায়হান শরীফ ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, আমরা যদি আরও সময় নিই তাহলে নিয়োগকর্তারা বাংলাদেশি কর্মীদের প্রতি আগ্রহ হারাবেন। নেপাল ইতোমধ্যে কর্মী পাঠানো শুরু করেছে।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম এবং সিন্ডিকেট করে কর্মীদের কাছ থেকে জনপ্রতি চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে মালয়েশিয়া।
তারপর দীর্ঘ তিন বছর মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো বন্ধ ছিল। এরপর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত সমঝোতা স্মারক সই হয়। তখন থেকেই বলা হচ্ছে মালয়েশিয়াতে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকল না।
কিন্তু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের একটি শর্তের কারণে আবারও আটকে যায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া। মালয়েশিয়া শর্ত দেয় তাদের মনোনীত ২৫টি বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিই শুধুমাত্র কর্মী পাঠাতে পারবে। কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্টদের সংগঠন বায়রার অধিকাংশ নেতা এতে আপত্তি জানিয়ে বলেন, সিন্ডিকেটের কারণেই তিন বছর দেশটিতে কর্মী পাঠানো বন্ধ ছিল। তাই বৈধ সব রিক্রুটিং এজেন্সিই কর্মী পাঠাতে পারবে এমন নিয়ম চান তারা।
এ অবস্থায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদও চিঠি লিখে জানিয়ে দেন, কুয়ালালামপুরের শর্ত ঢাকার পক্ষে মানা সম্ভব নয়।
এ অবস্থায় মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান গত ২ জুন ঢাকায় আসেন এবং প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ইমরান আহমদ সাংবাদিকদের জানান, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জট কেটে গেছে। সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিই কর্মী পাঠাতে পারবে।
তখন মন্ত্রী বলেন, আমরা ১৫২০ টি রিক্রুটিং এজেন্সির তালিক দেবো। এই তালিকা থেকে তারা রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়োগ করবে।
কিন্তু বায়রার নেতারা ওই সময় সিন্ডিকেট বহাল থাকার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।
২০ জুন মালয়েশিয়া জানায়, তারা ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে নিয়োগ দিয়েছে। এই ২৫টি এজেন্সি ১০টি করে অর্থাৎ ২৫০টি সাব-এজেন্সি নিয়োগ দিতে পারবে। এর বাইরে আর কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি সুযোগ পাবে না।
মালয়েশিয়ার এমন সিদ্ধান্তে বায়রার আশঙ্কাটাই সত্যিই প্রমাণিত হল।
এনএইচবি/আরএ/