ডেপুটি স্পিকার হতে অনেকের তোড়জোড়!
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হবে আগস্টের শেষ সপ্তাহে। ওই সময় জানা যাবে কে হচ্ছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর টিমমেট। কিন্তু জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুর পর ওই পদে কে আসছেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে তোড়জোড়।
আলোচনা হচ্ছে একাধিক সংসদ সদস্যকে নিয়ে। এরমধ্যে আছেন বর্তমান সংসদের সরকার দলীয় হুইপ। আছেন সাবেক চিফ হুইপ। একাদশ সংসদ গঠনের সময় ডেপুটি স্পিকারের আলোচনায় থাকা সংসদ সদস্যের নামও শোনা যাচ্ছে।
তবে যত নামই আলোচনায় থাকুক না কেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারের শূন্য পদটি পূরণের ক্ষেত্রে স্পিকারের পছন্দ এবং সবশেষে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর নির্ভর করবে সবকিছু।
জাতীয় সংসদ পরিচালনায় স্পিকারের পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ ডেপুটি স্পিকার। সঙ্গত কারণেই এই পদ পেতে মুখিয়ে আছেন সরকার দলীয় অনেক সংসদ সদস্য। এক্ষেত্রে আলোচনায় ঘুরেফিরে কয়েকজনের নাম চলে আসছে।
এদের মধ্যে আলোচনায় সবেচেয়ে এগিয়ে নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার। একাদশ সংসদ গঠনের শুরুতে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে তার নাম আলোচনায় ছিল। শেষ পর্যন্ত ডেপুটি স্পিকার হয়েছিলেন অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। তাই এবারও শহীদুজ্জামান সরকারকে নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে।
সকল সংসদ সদস্যের নিকট শহীদুজ্জামান সরকার গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তি। পেশায় আইনজীবী হলেও এখন পুরো দোস্তর রাজনীতিবিদ। তিনবারের এই সংসদ সদস্যের রয়েছে জাতীয় সংসদে হুইপের দায়িত্বও পালন করেছেন। তাই ডেপুটি স্পিকার পদে তিনি আসলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাদশ সংসদ গঠনের গঠনের পূর্বে তিনি ছিলেন সবচেয়ে শক্ত ক্যান্ডিডেট। তাই এবার তার সম্ভাবনাই বেশি।
আলোচনায় আছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম। একাদশ জাতীয় সংসদের কয়েকটি অধিবেশনে তিনি স্পিকারের চেয়ারে বসে তিনি একাধিকবার সংসদ পরিচালনা করেছেন। অধিবেশনে প্যানেল সভাপতি হিসেবে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে তিনি সংসদ পরিচালনা করেছেন। তাই ডেপুটি স্পিকার পদে তারও আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডেপুটি স্পিকারের তালিকায় জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদেরও নাম শুনা যাচ্ছে। মৌলভীবাজার-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ, চিফ হুইপ। বর্তমানে তিনি সরকারি প্রতিশ্রুতি সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অভিজ্ঞ এই পার্লামেন্টারিয়ান এর সঙ্গে স্পিকারের বোঝাপড়া ভালো। ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী যখন প্রথমবার স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হন তখন সংসদের চিফ হুইপ ছিলেন উপাধাক্ষ আব্দুস শহীদ। তার সঙ্গে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতাও রয়েছে। ডিপুটি হিসেবে স্পিকারের পছন্দের তালিকায় তার নাম থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
এই তিন জনের বাইরে আলোচনায় আছেন বর্তমান সংসদের সরকার দলীয় হুইপ ও দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম। তিনি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সবচেয়ে আস্থাভাজন এবং তরুণ রাজনীতিবিদ। যেহেতু স্পিকারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে তাই সহকর্মী হিসেবে তাকেই হয়তো বেছে নিতে পারেন।
তবে যত আলোচনাই হোক সব কিছুই নির্ভর করছে সংসদ নেতার উপর। তিনি যাকে মনোনয়ন দিবেন তার কপালেই জুটবে ডেপুটি স্পিকারের পদ। এর সঙ্গে স্পিকারের পছন্দের বিষয়টি থাকবে।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, সংসদের পরবর্তী অধিবেশন বসতে পারে ২৮ আগস্ট। সেদিনই ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হবে। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের প্রক্রিয়া হচ্ছে: কোনো একজন সংসদ সদস্য ডেপুটি স্পিকার হিসেবে কারও নাম প্রস্তাব করবেন পরে সেই প্রস্তাব অন্য একজন সংসদ সদস্য সমর্থন করবেন। এরপর স্পিকার প্রস্তাবটি সংসদে কণ্ঠ ভোটে দেবেন। সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত সর্বাধিক সংসদ সদস্যের কন্ঠ ভোটে প্রস্তাবটি পাশ হবে। এরমধ্য দিয়েই নির্বাচিত হবেন নতুন ডেপুটি স্পিকার। এরপর রাষ্ট্রপতির নিকট তিনি শপথ গ্রহণ করবেন।
উল্লেখ্য, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিৎিসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর দুই দিন পর ২৫ জুলাই জাতীয় সংসদ সচিবালয় ফজলে রাব্বি মিয়ার আসনটি শূন্য ঘোষণা করে।
এসএম/এনএইচবি/