ইত্যাদি’র বিশেষ নাটিকা ফেলে দিল বিটিভি!
বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ দেশের অন্যান্য টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে যেসব ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় তার মধ্যে ‘ইত্যাদি’র জনপ্রিয়তা শীর্ষে। ইত্যাদি দেখার জন্য সবাই উন্মুখ হয়ে থাকে। প্রায় তিনযুগ ধরে নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠানটি দর্শকদের বিনোদনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে নিয়মিত সচেতনতামূলক বিভিন্ন বার্তা দিয়ে আসছে। অথচ এবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে করা নাটিকা ফেলে দিল বিটিভি!
জনপ্রিয় উপস্থাপক ও নির্মাতা হানিফ সংকেতের রচনা, পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় এটি নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)তে প্রচারিত হয়ে আসছে। ‘ইত্যাদি’ নিয়ে দর্শকদের আগ্রহও থাকে তুঙ্গে। ফেসবুক, ইউটিউব ও বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয় বিভিন্ন অ্যাপস-এর যুগে তিল পরিমাণও ভাটা পড়েনি এর জনপ্রিয়তা। এটি নির্মাণ করেছেন ফাগুণ অডিও ভিশন। জাতীয় কবির ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকীকে সামনে রেখে ও তার প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’র শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ত্রিশালে নির্মিত হয়েছে ‘ইত্যাদি’।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছাত্র জীবনের স্মৃতি বিজড়িত ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে তারই শ্রেণিকক্ষের সামনে মঞ্চ নির্মাণ করে ইত্যাদির বিশেষ পর্ব ধারণ করা হয়েছে ১৭ জুলাই।
এবারের ‘ইত্যাদি’ বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচারিত হয়েছে ২৯ জুলাই রাত ৮টার সংবাদের পর। এরপর ফাগুণ অডিও ভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে ‘ইত্যাদি’।
বিটিভিতে প্রচারিত ও ইউটিউবে প্রকাশিত ইত্যাদি’র মাঝে বিস্তর ফারাক। অনুষ্ঠানের ভেতর থেকে দুর্নীতি নিয়ে করা বিশেষ নাটিকাটি ঝেড়ে ফেলল বিটিভি। আবার ইউটিউবে আপলোড হওয়া ইত্যাদিতে সেই নাটিকা দেখে দর্মকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
দর্শকরা বলছেন, দুর্নীতি নিয়ে ইত্যাদির নাটিকাটি ছিল সময়োপযোগী। যা মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার বিশেষ বার্তা দেয়। আবার সরকার প্রধান এবং সরকারের সব মহল থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বারবার জিরো টলারেন্স দেখানো হচ্ছে। সংগত কারণে নাটিকাটি বিটিভিতে প্রচার হলে ইচিবাচক সাড়া পাওয়া যেত।
কিন্তু, নাটিকাটি বিটিভি কর্তৃপক্ষের পছন্দ হয়নি। এ কারণে ২৯ জুলাই প্রচারিত ইত্যাদি থেকে কর্তন করা হয়েছে নাটিকাটি।
বিষয়টি জানার জন্য হানিফ সংকেতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তবে ফাগুণ অডিও ভিশনের মুখপাত্র মিঠু এ সম্পর্কে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘বিটিভির প্রিভিউ কমিটির নির্দেশেই প্রচারিত ইত্যাদি থেকে নাটিকাটি বাদ দেওয়া হয়েছে। টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ যদি আমাদেরকে কোনো অংশ ফেলে দিতে বলেন তবে আমাদের কিছুই করার থাকে না। কিন্তু যে অংশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সেটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছিল। সরকার যেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে সেখানে এই অংশটুকু ইত্যাদিতে প্রচারিত হলে আরও ভালো হতো।’
এ বিষয়টি নিয়ে জানতে বিটিভির অনুষ্ঠান ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক জগদীশ এষ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আমাদের প্যাকেজের বাইরের প্রোগ্রামগুলো আমাদের প্রিভিউ কমিটি হয়ে যায়। প্রিভিউ কমিটি যখন দেখে ঠিক করে কোন জিনিসটা যাওয়া উচিত, বা কোন সংলাপটা যাবে না। তখন তারা সেটা ফেলে দেয়। আমরা এভাবেই সেন্সর করে অনুষ্ঠান বিটিভিতে চালাই। তারপরে যদি হানিফ সংকেত সাহেব উনার পার্সোনাল ইউটিউব চ্যানেলে কিছু দেয় সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয় এটা নিয়ে আমাদের বিটিভির কিছু বলার নাই।’
যে নাটিকা ফেলে দেওয়া হয়েছে সেটা কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে করা হয়েছিল। একটা পজিটিভ জিনিস প্রিভিউ কমিটি ফেলে দিল এমন প্রশ্নের জবাবে জগদীশ এষ বলেন, ‘আমাদের প্রিভিউ কমিটিতে নানামত থাকে। এটা যখন প্রিভিউ হয় আমি ছিলাম না। আমি তখন দেশের বাইরে ছিলাম। কেন ফেলে দিয়েছে, কি কারণে ফেলে দিয়েছে, সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। এটা আমি খোঁজ নেব। বিটিভি আসলে এতদিন ট্র্যাডিশনাল চিন্তাধারা নিয়ে বসে ছিল। টেলিভিশন তো বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে জনগন থেকে। কেনো করা হয়েছে। কারণটা হচ্ছে আপনি যদি চোখ বুজে বসে থাকেন বালির মধ্যে তা হলে কি কিছু যায় আসে? এখন আমি যেটা চেষ্টা করতেছি তা হলো-আমি একটা স্লোগান সামনে এনেছি ‘সমস্যা আপনার কথা বলবে বাংলাদেশ টেলিভিশন’। এখন বিটিভির অনেক অনুষ্ঠানে আমরা অনিয়মসহ নানা ধরনের বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করছি। সব জায়গায় তো আর পেরে উঠি না। মাঝে মাঝে সমস্যা হয়ে যায়।’
এদিকে বিটিভির প্রিভিউ কমিটি নিয়েও উঠেছে অভিযোগের আঙুল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিভির একাধিক কর্মকর্তা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আসলে প্রিভিউ কমিটিতে যারা আছেন তারা অনেকে না বুঝেই এমন কাজ করে। অনেক সময় তারা অতিরিক্ত ভক্তি দেখাতে গিয়ে সরকারকেই বিপাকে ফেলছে। কারণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো বিশেষ বার্তা ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে আসলে সুনিপণভাবে সরকারের বিরুদ্ধেই কাজ হচ্ছে।
এবারের অনুষ্ঠানে একটি জনপ্রিয় নজরুলসংগীত গেয়েছেন বাপ্পা মজুমদার ও প্রিয়াংকা গোপ। আর তাদের সহযোগিতা করেছেন আরও একদল নজরুলসংগীত শিল্পী। গানটির সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদি। এতে রয়েছে জাতীয় কবির তিনটি গান ও দু’টি কবিতার সমন্বয়ে সৃষ্ট একটি সংগীতের সঙ্গে স্থানীয় প্রায় শতাধিক নৃত্যশিল্পীর নাচ। সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদি, নৃত্য পরিচালনা করেছেন মনিরুল ইসলাম মুকুল।
এএম/এমএমএ/