নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে, আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি: রিজভী
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ২০১৬ সালে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে তিনি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে মনোনীত হন। এ ছাড়াও তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে (চলতি দায়িত্ব) দায়িত্ব পালন করছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল ও ইতিহাস এ দুই বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন রিজভী। বামপন্হী ছাত্রসংগঠন ‘বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন’র মাধ্যমে ছাত্র রাজীতিতে প্রবেশ করেন। ছিলেন সংগঠনটির রাজশাহী সরকারি কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক।পরবর্তীতে তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে যোগদান করেন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান ও পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করা রিজভী ১৯৮৯ সালের সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। বর্তমানে রাজনীতির মাঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে তিনি নতুন নতুন শব্দমালার কারিগর।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) ঢাকাপ্রকাশ-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন বিএনপির এ প্রভাবশালী নেতা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকাপ্রকাশ-এর স্টাফ রিপোর্টার মোক্তাদির হোসেন প্রান্তিক।
ঢাকাপ্রকাশ: দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
রুহুল কবির রিজভী: ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমার মূল্যায়ন হচ্ছে, এখন চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি, আর্থিক খাত ধসে গেছে, আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে- যেখানে মায়ের পেট ফেটে বাচ্চা বের হয়, মায়ের কোলে শিশুর মাথা পুলিশের গুলিতে ছিন্ন ভিন্ন হয়।
এসব ঘটনায় বোঝা যায় দেশের পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে? আর্থিক খাতের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি গোটা জাতিকে ভয়াবহভাবে ঋণগ্রস্ত করেছে। এ ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ সব চলে যাবে। প্রতিটি শিশুকে ঋণী করেছে এ সরকার। অন্যান্য খাত যেমন শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য খাত- এগুলো তো আগেই ধসে গেছে। সুতরাং আমি মনে করি সার্বিকভাবে দেশের পরিস্থিতি নৈরাজ্যকর ও অন্ধকারময়।’
ঢাকাপ্রকাশ: দল পুনর্গঠন কোন পর্যায়ে? পরবর্তী কাউন্সিল হচ্ছে না কেন?
রুহুল কবির রিজভী: ‘দলের পুনর্গঠন বেশ জোরেসোরেই চলছে। সাংগঠনিক কার্যক্রম বছরব্যাপী চলে। যেখানে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে সেখানে নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হচ্ছে। গঠিত আহ্বায়ক কমিটিগুলো আবার নতুন করে উপজেলা কমিটি দিচ্ছে, ওয়ার্ড পর্যায়েও কাউন্সিল হচ্ছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে থানা থেকে জেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যেসব কমিটির মেয়াদ দুই বছর-তিন বছর অতিবাহিত হয়নি সেই কমিটি আছে। আর যেখানে সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে সেখানে কমিটি পুনর্গঠন করা হচ্ছে। তবে জাতীয় কাউন্সিল করার বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’
ঢাকাপ্রকাশ: নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির সুনির্দিষ্ট দাবিগুলো কী?
রুহুল কবির রিজভী: ‘নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির দাবি একটাই শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। সংবিধানে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা আবার সন্নিহিত করতে হবে। সেই সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায় আসবে তারা সরকার গঠন করবে, দেশ পরিচালনা করবে।
কিন্তু শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হবে না- সেটার প্রমাণ তিনি নিজেই দিয়েছেন। উনার দুই নির্বাচন সম্পর্কে একটাকে বলা হয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন আরেকটা হচ্ছে নিশিরাতের নির্বাচন। যার মাধ্যমে তিনি দেশে-বিদেশে এ খ্যাতি পেয়েছেন। তাই তার অধীনে নির্বাচনের কোনো যৌক্তিকতা নেই বরং সেই নির্বাচন হবে জনগণকে প্রতারণা করার আরেকটা ধাপ্পাবাজির নির্বাচন।
ঢাকাপ্রকাশ: ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের পক্ষ থেকে আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান কোন পথে?
রুহুল কবির রিজভী: আমরা নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচনে যাব না। এ ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান সুস্পষ্ট।
ঢাকাপ্রকাশ: যদি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয় সেক্ষেত্রে বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি কেমন হবে? যদি জনগণের ভোটে জয়লাভ করে ক্ষমতায় যায় তাহলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন?
রুহুল কবির রিজভী: আমাদের যেকোনো মুহূর্তেই নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে। আন্দোলনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে আমাদের একটাই প্রস্তুতি নিতে হবে সেটা হচ্ছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা। সেই প্রস্তুতিই নিতে শুরু করেছি। আর প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সিরিয়াল আছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন, তারপর তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন।
ঢাকাপ্রকাশ: অতীতে একাধিকবার আন্দোলন করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। এবার আন্দোলন সফল করতে বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন কী?
রুহুল কবির রিজভী: আমরা প্রতিনিয়ত আন্দোলনে আছি, আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। জনদাবির উপর ভিত্তি করে কর্মসূচি দিচ্ছি এবং এটাই এক সময় সর্বোচ্চ চূড়ায় অবস্থান নেবে।
ঢাকাপ্রকাশ: দলীয় কর্মসূচির বাইরে বিএনপি জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে মাঠে সক্রিয় থাকে না বলে রাজনীতিতে অভিযোগ রয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে জনগণ কী আপনাদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসবে বলে আপনি মনে করছেন?
রুহুল কবির রিজভী: কথার কথা অভিযোগ কেউ করেন, এগুলো অবান্তর কথা। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। যদি তাই হয় তাহলে লোডশেডিংয়ের উপর তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি কেন নেওয়া হলো? এটা তো জনদাবির উপর ভিত্তি করে কর্মসূচি। বিএনপি গণভিত্তিক রাজনৈতিক দল, বিপুল জনসমর্থন। আর এ কারণেই আজ সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দেয় না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় যে নির্বাচনে কোনো সরকারের হস্তক্ষেপ থাকবে না তা দিতে ভয় পায় কেন? ভয় পায় এজন্য যে, শেখ হাসিনা জানে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে জনগণের যে ঢেউ হবে...জানে বলেই দিতে চাচ্ছেন না।
ঢাকাপ্রকাশ: রাজনীতির মাঠে আলোচনায় প্রায়ই উঠে আসে বিএনপিতে নেতৃত্ব সংকট, আসলেই কি বিএনপিতে নেতৃত্বের সংকট আছে বলে মনে করছেন?
রুহুল কবির রিজভী: বিএনপির নেতৃত্বে কোনো সংকট নেই। যৌথ নেতৃত্বে বিএনপি চলছে। বিএনপির নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার নেতৃত্বে ও নির্দেশে দল পরিচালিত হচ্ছে।
ঢাকাপ্রকাশ: বেশকয়েক বছর ধরে আন্দোলন করে আসা বিএনপি ঢাকায় আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে, এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে বিএনপির হাইকমান্ডের মনোভাব কী?
রুহুল কবির রিজভী: আন্দোলন গড়ে তুলতে যা করার তাই করবে বিএনপি। তবে বিএনপির তো র্যাব পুলিশ নেই, আওয়ামী লীগের র্যাব পুলিশ আছে। সরকারের সশস্ত্রবাহিনীর সঙ্গে তো খালি হাতে লড়াই করা যায় না। এখানে সংগ্রাম হয়েছে, তা না হলে আন্দোলন শুরু হলে দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়? রিমান্ডের পর রিমান্ডে রাখে। এসব অবস্থা দেখে সরকারের আন্দোলনকে দমন করার মাত্রাটা বুঝা যায়। তাই দমনের মাত্রা নিয়েই কথা বলতে হবে। বিএনপি পারে কি পারে না সেটা পরের ব্যাপার। পারে বলেই তো সরকারের দমনের মাত্রা বিবেচ্য।
ঢাকাপ্রকাশ: ঢাকাপ্রকাশ-কে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
রুহুল কবির রিজভী: ঢাকাপ্রকাশ পরিবার ও আপনাকে ধন্যবাদ।
এনএইচবি/এসএন