হাসপাতালে বেড়েছে জ্বর-সর্দি-কাশির রোগী
রাজধানীতে এখন ঘরে ঘরে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনে নগরীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলোতে এমন রোগীর ভিড় লেগে গেছে। রোগীদের বেশির ভাগ শিশু ও নারী।
মৌসুমি ভাইরাস জ্বর, সর্দি ও কাশি, থেকে শুরু করে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। তার উপর আছে করোনাভাইরাস। আক্রান্তদের অনেককে পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা বলছেন, বেশির ভাগ রোগী কোভিডের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তবে অন্যবারের তুলনায় মনে হচ্ছে এবারের জ্বরের রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগের মধ্যে মৃদু করোনাভাইরাসের লক্ষণ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে লক্ষণ-উপসর্গ দেখামাত্রই পরীক্ষার তাগিদ দিয়েছেন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, এসব রোগীদের পরীক্ষার পর দেখা গেছে করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু জ্বর, সাধারণ ভাইরাস জ্বর, টাইফয়েট জ্বর বা চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে চিকনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা কম। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে বলছেন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা ।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যারা করোনার বুস্টার ডোজ বা টিকা নিতে পারেনি তাদের টিকার আওতায় আসতে হবে। সবাইকে সচেতন ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে।
এক্ষেত্রে উদাসীন না হওয়ার তাগিদ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বর-সর্দি-কাশির মতো লক্ষণ দেখা দিলেই সঙ্গে সঙ্গে কোভিড পরীক্ষা করাতে হবে। যদি করোনার নমুনায় জ্বর ধরা না পড়ে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে অন্যন্য টেস্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের অবহেলা করা যাবে না।
রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুলের ছাত্রী ঋতু সুলতানা তিন-চার দিন ধরে ঠাণ্ডা জ্বরে ভুগছেন। এর আগে তার মা শানু বেগম ও জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। ঋতু বলেন, ঈদের পর আমি একদিন ও স্কুলে যেতে পারিনি। মা বলছে জ্বর সেরে গেলে স্কুলে যেতে।
ঋতুর মা শানু বেগম বলেন, ঋতু জ্বর অবস্থায় স্কুলে যেতে চাচ্ছে, আমি আপাতত যেতে দিচ্ছে না। মোটামুটি আমাদের পরিবারের সবার কমবেশি জ্বর-সর্দি, কাশি হয়ে সেরে গেছে। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন টেস্ট করেছি করোনাভাইরাস বা অন্য কিছু ধরা পড়েনি। চিকিৎসক বলছেন, এটা সাধারণ ভাইরাস জ্বর।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ বছরের শিশুকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজিয়া বেগম। তিনি বলেন, ঈদের আগে থেকেই আমাদের পরিবারের সবাই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছে। শুধু আমরা ছোট বাচ্চাটাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।
ঠাণ্ডা জ্বরের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, এখন কম বেশি সিজোনাল জ্বরে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। তবে ডেঙ্গু জ্বরের পরিমান একটু বেশি মনে হচ্ছে। ডেঙ্গু বা করোনায় যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের আমরা আলাদা রেখে চিকিৎসা দিচ্ছি।
খিলগাঁও তালতলা এলাকা চার বছরের শিশু রবিউল হাসান জ্বর-সর্দিতে ভুগছেন বেশ কিছু দিন ধরে। তার মা স্বপ্না বেগম গত পাঁচ দিন ধরে ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপতালে ভর্তি রয়েছেন। স্বপ্না বলেন, হঠাৎ বাচ্চার ব্যাপক জ্বর আসে, ওষুধ খেলে জ্বর পড়ে যায় পরে আবার ও আরও বেশি গতিতে জ্বর আসে। অবশেষে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে প্রথমে ডা. মাহাদী ও পরে নারী ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মালেক সাহেবের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছি।
মগবাজার মধুবাগ এলাকা থেকে শুধু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সাত দিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছে নয় বছরের শিশু জেনীয়া। শুক্রবার জেনীয়ার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সে বলে, আজ একটু ভালো লাগছে। তবে কিছু খেতে পারছি না। খেতে পারলে হয়ত সুস্থ হয়ে যাব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. মাহাদী হাসান বলেন, আমাদের হাসপাতালে সাধারণ জ্বরের রোগীর থেকে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। তিনি বলেন, আপাতত সংখ্যা বলতে পারছি না। তবে অসংখ্য মানুষ জ্বর নিয়ে প্রতিদিন আমাদের হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কেউ হয়ত ভর্তি হচ্ছেন আবার কেউ বা চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, শুধু আমাদের হাসপাতালে নয়, ঢাকার প্রায় সব হাসপাতালে জ্বরের রোগীর সংখ্যা মনে হচ্ছে একটু বেশি। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ যারা ডেঙ্গু, করোন বা অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের সর্তক থাকতে হবে। অন্যথায় তার আশেপাশের মানুষও আক্রান্ত হবেন।
নারী ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মালেক আহমেদ বলেন, বর্তমানে অসংখ্য মানুষ সাধারণ সর্দি-জ্বরের পাশাপাশি বিভিন্ন জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে পুরুষের তুলনায় বেশির ভাগ হচ্ছেন নারী ও শিশুরা।
এদিকে সিজনাল জ্বর,সর্দি, কাশি ছাড়াও রাজধানীতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোভিডের নমুনা পরীক্ষার বেড়েছে।
মালিবাগ এলাকায় অবস্থিত পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে করোন ভাইরাসের পরীক্ষাকারী স্বাস্থ্য কর্মী স্বাধীন লালন বলেন, ঈদের পর থেকে আমাদের হাসপাতালে করোনার পরীক্ষার সংখ্যা বেড়েই চলছে। তিনি বলেন, শুক্রবার (২২ জুলাই) অসংখ্য নমুনা এসেছে।
এনএইচবি/আরএ/