শিক্ষার মান উন্নয়নে এমপি ওমর ফারুকের অর্জন ‘সন্তোষজনক’!
একটি বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে চড়থাপ্পড়, কিল–ঘুষি মেরেছেন বলে অভিযোগ ওঠে রাজশাহী-১ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই এলাকায় অসেন্তাষ, উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনও হয়েছে।
রবিবার (১৭ জুলাই) সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকাপ্রাকশ-এর এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘যদি কোনো সংসদ সদস্য এ ধরনের কোনো কাজে যুক্ত থাকেন সেক্ষেত্রে সেই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আমরা মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। যেটা আমরা করতে পারি সেটা হল, স্পিকারের শরণাপন্ন হতে পারি এবং তার কাছে অভিযোগ উত্থাপন করে আমরা এটির একটি সমাধান চাইতে পারি। তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনে সেই পথ অনুসরণ করব।’
এদিকে সংসদ সদস্য ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে শিক্ষককে মারধর করার অভিযোগ উঠার পর তার বিরুদ্ধে নিজ সংসদীয় এলাকায় এবং সামাজিক মাধ্যমে সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আসছে নানা অভিযোগ-অসন্তোষ।
এ পরিস্থিতিতে ঢাকাপ্রকাশ চেষ্টা করেছে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর হলফনামা ঘেটে তার সম্পর্কে জানার।
হলফনামায় এই সংসদ সদস্য দাবি করেছেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে তার অর্জন ‘সন্তোষজনক’। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি নির্বাচন দপ্তরে জমা দেওয়া হলফনামায় এই দাবি করেন।
হলফনামায় ওমর ফারুক চৌধুরী উল্লেখ করেন, ‘আমি ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হইয়া ছিলাম। নির্বাচনের পূর্বে আমার দ্বারা ভোটারদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি এবং উহার কী পরিমাণ অর্জন সম্ভব হইয়াছিল তাহার বিবরণ’ ভূমিকা লেখা কলামে ২ নম্বর ক্রমিকে ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শিক্ষার মান উন্নয়ন’-এ অর্জন বিষয়ে লেখা আছে ‘সন্তোষজনক’।
এ ছাড়া ‘রাস্তা, ব্রীজ কালভার্ট উন্নয়ন’, বেকার যুবক/যুবতীদের কর্মসংস্থান’ এবং ’স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়ন’ বিষয়ে অর্জনের ঘরগুলোতেও লেখা আছে ‘সন্তোষজনক’।
হলফনামায় তার শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করা আছে ‘এলএলবি (সম্মান)’। হলফনামা দেওয়ার সময় তিনি কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন না বলেও উল্লেখ করা আছে। তবে বিশেষ ক্ষমতা আইন/১৯৭৪ এর ২৫(গ) এর ১(খ) ধারায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছিল। ওই মামলার অভিযোগ থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন হলফনামায়।
হলফনামায় তার পেশার বিবরণে লেখা আছে ‘রাজনীতি, সমাজ সেবা, ব্যবসা’। তার এবং তার উপর নির্ভরশীলদের বাৎসরিক আয়ের উৎস সম্পর্কে হলফনামায় লেখা হয়েছে, নিজের আয়’ কৃষি খাত (নীট আয়) তিন লাখ, ‘বাড়ি/এপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া’ ৪২ লাখ টাকা। ব্যবসা ‘২টি ট্রাকের অনুমিত আয় দেড় লাখ টাকা’। সংসদ সদস্য হিসেবে পারিতোষিক ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং ভাতাদি ১৭ লাখ ১০ হাজার ৩১৭ টাকা।
আর সংসদ সদস্যের স্ত্রীর বাৎসরিক আয় উল্লেখ করা হয়েছে তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা। এ ছাড়া হলফনামায় তিনি তার অস্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তির বিষয়সহ আরও অনেক বিষয় উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু তার এই হলফনামায় উল্লেখিত শিক্ষার মান উন্নয়নে তার অর্জন ‘সন্তোষজনক’ কথাটা নিয়েই নানা মহলে কৌতুহল। শিক্ষানুরাগীরা বলছেন, যদি তাই হবে তাহলে তো তিনি শিক্ষকের গায়ে হাত দিতে পারেন না।
সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ এবং হলফনামায় করা তার দাবি নজরে আনলে বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (বাকবিশিস) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. গোলাম ফারুক চৌধুরী শুক্রবার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিষয়টি গভীরভাবে দেখতে হবে। তবে আপাতত মনে হচ্ছে এটা সাংঘর্ষিক। এমনটি হওয়া উচিৎনয়। হলফনামায় দেওয়া তথ্যের সঙ্গে ব্যক্তিজীবনের মিল থাকা উচিৎ।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আরও শিক্ষক নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে শিক্ষকনেতা আরও বলেন, এসব শেষ হওয়া উচিৎ। এসব ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। ব্যবস্থা আরও তড়িৎ নেওয়া দরকার। রাজশাহীর ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেউই আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। সেখানেও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। এমনকি দায় ওই শিক্ষকের হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।
কলেজ অধ্যক্ষকে সংসদ সদস্যের মারধর ও লাঞ্ছিত করার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ২৪ নাগরিক। এই নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। হলফনামায় সংসদ সদস্যের করা দাবির বিষয়টি নজরে আনলে তিনি বলেন, হলফনামার সঙ্গে ব্যক্তিজীবনে তার যে ভূমিকা, তাতে বৈপরীত্য রয়েছে। তার সংসদ সদস্য পদ থাকার কোনো কারণ নাই। অসদাচরণের অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে আমরা জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে আবেদন করতে পারি।
আর সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী কলেজ অধ্যক্ষকে মারধর করার অভিযোগে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) সংবাদ সম্মেলন করে সেই অভিযোগ অস্বীকার করে হাতজোর করে সাংবাদিকদের কাছে তার সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, গত ৭ জুলাই রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী তার থিম ওমর প্লাজার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আরও কয়েকজন অধ্যক্ষের সামনে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে বুধবার (১৩ জুলাই) গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।
এনএইচবি/এমএমএ/