বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২২ মাঘ ১৪৩১
Dhaka Prokash

সংবাদ বিশ্লেষণ

পাচার হওয়া অর্থের বৈধতা কাদের উৎসাহিত করবে

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিদেশে থাকা সম্পদের দায়মুক্তির দিয়ে দেশে আনার সুযোগের ঘোষণা দিয়েছেন। এনিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ১৫ থেকে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি দেশে সরকারের খাতায় বৈধ আয়ের তালিকায় যুক্ত করা যাবে। সেই অর্থ দেশেও আনা যাবে। কিন্তু পাচার করা অর্থের উৎস জানতে চাওয়া হবে না। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে টাকা পাচার করা তো আইনত অপরাধ। এ সুযোগ কি অপরাধকে প্রশ্রয় দিচ্ছে? পাচার করা অর্থ যদি দেশে আনার উদ্যোগ হয় তবে পাচারকরা অর্থের উৎস কেনই বা জানানো হবে না? আর দেশে যদি ওই অর্থ আসেও সেটা কী বিনিয়োগ হবে? না, ব্যক্তির নামেই থাকবে? আরও প্রশ্ন উঠে টাকা পাচার হওয়ার পথ বন্ধ না করে পাচার হওয়া অর্থ বৈধতা দিয়ে কি ফায়দা আসবে, এটা কী অর্থপাচারকে উৎসাহিত করবে না?

অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণা ব্যবসায়ী মহল থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ এবং সুধীসমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের সংগঠনি এফবিসিসিআই এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে আনা হলে ভালো ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হবেন। এটা ব্যবসায়ীরা চান না। বাজেটে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ও সুশাসনের কথা বলা হলেও পাচার করা কালো টাকা সাদা করার যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা সমর্থনযোগ্য নয়।

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) এর প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন রশিদ বলেছেন, ‘মাত্র ৭ শতাংশ কর প্রদান করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকলে নিয়মিত করদাতাদের আরও নিরুৎসাহিত করা হবে। ঢালাও সুযোগ না দিয়ে এর সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘পাচার করা টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন করা হবে না-এ ধরণের এমনেষ্টি (ক্ষমা) প্রদান করা হলে অর্থনীতিতে নীতি নৈতিকতার ভারসাম্য মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও চুক্তিকারীদের সঙ্গে প্রতিবাদের সম্মুখীন হতে হবে।’

প্রস্তাবিত বাজেটকে সময়োপযোগী বললেও পাচারকৃত টাকা ফেরানোর উদ্যোগকে নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়।

ইনিস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এর নেতারা বলছেন, সরকার যে উদ্যোগটি নিয়েছে এটি ইউনিক না বা এবারই প্রথম না। জাস্টিস এন্ড ইকিউটির জায়গা বা নৈতিকতার দিক থেকে ঠিক না।

এদিকে ১৬ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্য আবদুস শহীদ বলেন, ‌‘অপ্রদর্শিত টাকা থেকে থাকলে তা কোনো কাজে লাগছে না। সেটা ব্যবহারের যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে সেটা অর্থ পাচারের বিষয় নয়। অর্থ পাচারের জন্য যে আইন আছে সেটা অবশ্যই প্রয়োগ করা হবে। প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থায় আনা যাবে। হলে টাকা কাজে লাগবে। অপ্রদর্শিত আয়কে যদি প্রকাশ বা বিনিয়োগ করা না যায় তাহলে সমৃদ্ধি সম্ভব হবে না।'

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো রূপরেখা অর্থমন্ত্রী দেননি। তিনি টাকা পাচার করে তা হালাল করারা সুযোগ দিয়েছেন। ৪০ বছর যাবৎ বিভিন্ন সরকার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছেন, কিন্তু লাভ হয়েছে খুব কম। ব্যবসা করলে ২৫ শতাংশ কর দেওয়া লাগে। আর টাকা পাচার করে ৭ শতাংশ কর দিয়ে তা আবার ফিরিয়ে আনা যাবে। এতে মানুষ টাকা পাচারে উৎসাহী হবে। শুধু এটাই না, এটি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, মানি লন্ডারিং আইন, সংবিধানের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এসব আইন সংশোধন করা না হলে টাকা কীভাবে আনবেন? কোনো সুযোগ নেই।

বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী ভাষ্য ছিল, সব টাকাই ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত কালো টাকা নয়। পদ্ধতিগত কারণেও টাকা কালো হয়। অপ্রদর্শিত অর্থ দেশে আনলে প্রশ্নবিদ্ধ হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, পাচার করা অর্থ যেকোনো আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফেরত আনা হবে। এতে কোনো ধরনের বাধা কাম্য নয়।

অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে একাত্ব হয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ট্রুথ কমিশনের কার্যক্রম কোনো আইন দ্বারা বৈধ ছিল না। এবার বিদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার সিদ্ধান্ত সংসদে আইন দ্বারা প্রণীত হবে।

আইনে কী আছে:

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ঢাকাপ্রকাশে একটি নিবন্ধে বলেছেন , অর্থপাচার রোধ আইন ২০১২ এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অর্থপাচার গুরুতর অপরাধ। দেশের আইন অনুযায়ী যার শাস্তি পাচারকৃত অর্থ বাজেয়াপ্ত করা এবং তার দ্বিগুণ জরিমানা ও ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড নির্ধারিত রয়েছে।

এবার বাজেটে যে সুযোগ দেয়া হয়েছে অর্থ পাচার তথা সার্বিকভাবে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে, যা সংবিধান পরিপন্থী এবং প্রধানমন্ত্রীর ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’ ঘোষণার অবমাননাকর বলে মন্তব্য করেছেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।

 Anti-money laundering measures webinar - YouTube

মানিলন্ডারিং অপরাধ ও দণ্ড

৪। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, মানিলন্ডারিং একটি অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে।

(২) কোন ব্যক্তি মানিলন্ডারিং অপরাধ করিলে বা মানিলন্ডারিং অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা, সহায়তা বা ষড়যন্ত্র করিলে তিনি অন্যূন ৪ (চার) বৎসর এবং অনধিক ১২ (বার) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুন মূল্যের সমপরিমাণ বা ১০ (দশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত, যাহা অধিক, অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। 

তবে শর্ত থাকে যে, আদালত কর্তৃক ধার্যকৃত সময়সীমার মধ্যে অর্থদণ্ড পরিশোধে ব্যর্থ হইলে আদালত অপরিশোধিত অর্থদণ্ডের পরিমাণ বিবেচনায় অতিরিক্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।

(৩) আদালত কোন অর্থদণ্ড বা দণ্ডের অতিরিক্ত হিসাবে দণ্ডিত ব্যক্তির সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে যাহা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানিলন্ডারিং বা কোন সম্পৃক্ত অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত বা সংশ্লিষ্ট।

8[ (৪) কোন সত্তা এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটন করিলে বা অপরাধ সংঘঠনের চেষ্টা, সহায়তা বা ষড়যন্ত্র করিলে ধারা ২৭ এর বিধান সাপেক্ষে, উপ-ধারা (২) এর বিধান অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে এবং অপরাধের সহিত সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মূল্যের অন্যূন দ্বিগুণ অথবা ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা, যাহা অধিক হয়, অর্থদণ্ড প্রদান করা যাইবে এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধণ বাতিলযোগ্য হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত সত্তা আদালত কর্তৃক ধার্যকৃত সময়সীমার মধ্যে অর্থদণ্ড পরিশোধে ব্যর্থ হইলে আদালত অপরিশোধিত অর্থদণ্ডের পরিমাণ বিবেচনায় সত্তার মালিক, চেয়ারম্যান বা পরিচালক যে নামেই অভিহিত করা হউক না কেন, তাহার বিরুদ্ধে কারাদন্ডে দন্ডিত করিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।]

(৫) সম্পৃক্ত অপরাধে অভিযুক্ত বা দণ্ডিত হওয়া মানিলন্ডারিং এর কারণে অভিযুক্ত বা দণ্ড প্রদানের পূর্বশর্ত হইবে না।

 

আইনে আরও আছে:

 ১৭। (১) এই আইনের অধীন কোন ব্যক্তি বা সত্তা মানিলন্ডারিং অপরাধে দোষী সাব্যস্থ হইলে আদালত অপরাধের সহিত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত দেশে বা দেশের বাহিরে অবস্থিত যে কোন সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।

(২) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন এই আইনের অধীন মানিলন্ডারিং অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন অনুসন্ধান ও তদন্ত বা বিচার কার্যক্রম চলাকালীন সংশ্লিষ্ট আদালত প্রয়োজনবোধে দেশে বা দেশের বাহিরে অবস্থিত যে কোন সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।

 

(৩) এই আইনের অধীন মানিলন্ডারিং অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্থ কোন ব্যক্তি পলাতক থাকিলে বা অভিযোগ দাখিলের পর মৃত্যুবরণ করিলে আদালত উক্ত ব্যক্তির অপরাধের সহিত সম্পৃক্ত সম্পত্তিও রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।

 পাচারকৃত অর্থের পরিমান কত?

বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে পাচার হচ্ছে ৬৪ হাজার কোটি টাকা। গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতি বছর দেশের এসব টাকা পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ডসহ ১০টি দেশে।

আমদানি-রফতানিসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কারসাজি আর হুন্ডির আড়ালে অর্থপাচার করছে পাচারকারী সিন্ডিকেট। এমনটাই বলছে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ পাচার মনিটরিং সংস্থা- বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বিআইএফইউর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২০, ৫ বছরে পাচারকারীরা ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। যার মধ্যে শুধু ২০১৫ সালে ১ বছরেই দেশ থেকে পাচার হয়ে যায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। পাচারকৃত টাকার পরিমাণ বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় পাচারকারী দেশ হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ।

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।

এদিকে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নাগরিকদের জমা করা টাকার পরিমাণ এক বছরের ব্যবধানে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বেড়েছে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১ সালে সুইটজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আট হাজার দু'শ ৭৫ কোটি টাকা। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালে, এই অর্থের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার তিনশ ৪৭ কোটি টাকা। সুইস ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে কয়েক বছরের যে পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে তাতে এই বৃদ্ধি এক বছরের ব্যবধানে সর্বোচ্চ। এই হিসেব অনুযায়ী, এক বছরেই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ দু'হাজার নয়শ ২৮ কোটি টাকা বেড়েছে।

এই যখন পরিস্থিতি তখন যে পথে টাকা পাচার হচ্ছে সেপথগুলো বন্ধের ব্যবস্থা না করে পাচার হওয়া অর্থের বৈধতা প্রদান কতটুকু যৌক্তিক তাই প্রশ্ন করছেন বিশিষ্ট মহল।

আরও প্রশ্ন আছে। পাচারকৃত অর্থ দেশে আনার মাধ্যম কি হবে? যারা অর্থ পাচার করেছেন তাদের নাম কেউ জানতে পারবে না কেন? জানলে ক্ষতি কী? পাচার করা টাকা দেশে এনে কি করা হবে সেবিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগে। এই অর্থ কি বিনিয়োগ করা হবে না আবার অন্য কোনো দেশে স্থানান্তর করা হবে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর আছে ২০২১ সালে কিছু অর্থপাচারকারীর নাম আসার খবর ছিল গণমাধ্যমে। কিন্তু ওই পাচারকারীদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।

পাচারকৃত অর্থ বৈধ করার সুযোগ প্রদান বিগত বছরগুলোর মতই কালো টাকা সাদা করার বেআইনি ও অন্যায় সুযোগের ধারাবাহিকতা মাত্র, যা স্থানিক থেকে বৈশ্বিক করা হলো—এমন মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

আরও পড়ুন: পাচারকৃত অর্থ দেশে আনার সুযোগ বিদ্যমান আইনে সাংঘর্ষিক

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিদেশে অর্জিত অর্থ ও সম্পদ দেশের অর্থনীতির মূলধারায় সংযুক্তির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ ও আয়কর রাজস্ব বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, বারবার সুযোগ দিয়েও দেশের অর্থনীতিতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রত্যাশিত ফল বয়ে আনেনি, সরকারও আকাঙ্ক্ষিত রাজস্ব পায়নি। তাই নতুন এই বিশেষ বিধানের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে তা না বললেও চলে। কারণ যারা অর্থ পাচার করেছেন তারা এধরনের প্রণোদনায় উৎসাহিত হয়ে পাচারকৃত অর্থ ফেরত নিয়ে আসবে, এরকম দিবাস্বপ্নের কোনো ভিত্তি নেই। বিশেষ করে, যেখানে পাচারকৃত দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের দেশের পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি ব্যতিরেকে এই অর্থ বা সম্পদ ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। বরং এর মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ ও অর্থপাচারকারীরাই শুধু স্বস্তি বোধ করবেন, পুলকিত হবেন। অর্থপাচারকে এভাবে লাইসেন্স দেওয়া হলে দেশে দুর্নীতি ও অর্থপাচার আরও বিস্তৃতি ও গভীরতা লাভ করবে।

তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিভিন্ন দেশে এ ধরণের সুযোগ দেওয়া হয়। আমরা সেই সুযোগটা দিচ্ছি। এই সুযোগে যদি সুফল না আসে তাহলে এ সুযোগ রাখব কেন? বাজেটে একটা সুযোগ দেওয়া হয়েছে, এর থেকে সুফল পেতে পারি এই সম্ভবনাকে সামনে রেখেই করা হয়েছে।

 

 

 

Header Ad
Header Ad

খুলনায় ছাত্র-জনতার উচ্ছ্বাস, বুলডোজারের আঘাতে মাটিতে মিশে গেল ‘শেখ বাড়ি’

ছবি: সংগৃহীত

খুলনার ময়লাপোতা এলাকায় ‘শেখ বাড়ি’ নামে পরিচিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র আজ (বুধবার) রাতে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের আহ্বানে বিপুলসংখ্যক ছাত্র-জনতা সেখানে জড়ো হয়ে বাড়িটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং সিটি করপোরেশনের দুটি বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারীরা শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে গত ৪ আগস্ট ‘শেখ বাড়ি’তে প্রথম দফায় আগুন লাগানো হয়। সেদিন বাড়িটি খালি থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর আবারও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়। একসময় যেখান থেকে খুলনা অঞ্চলের আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হতো, আজ সেটির অস্তিত্ব ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলো।

প্রসঙ্গত, ‘শেখ বাড়ি’ ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচার মালিকানাধীন। এ বাড়িতে তাঁর চাচাতো ভাই, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সোহেল উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন পরিবারের সদস্য বসবাস করতেন। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে এ বাড়ি দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকা ছিল।

বুলডোজার চালানোর সময় ছাত্র-জনতার বিপুল উচ্ছ্বাস লক্ষ করা যায়। তাঁদের দাবি, বৈষম্যমূলক রাজনৈতিক শাসনের প্রতীক হয়ে উঠেছিল এই বাড়ি, তাই এটিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করাই ছিল তাঁদের লক্ষ্য।

Header Ad
Header Ad

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ছাত্র-জনতার ঢল, বুলডোজার ছাড়াই গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা

ছবি: সংগৃহীত

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ছাত্র-জনতার ঢল নেমেছে। আজ বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে, সন্ধ্যা ৮টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা জড়ো হয়। তারা স্লোগান দিতে দিতে জাদুঘরের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং ভাঙচুর শুরু করে। বিক্ষোভকারীরা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ জাদুঘরের বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত করে।

নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার ঘোষণার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। বিক্ষোভকারীরা শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণের বিরোধিতা করে এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

বিক্ষোভের আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'লং মার্চ টু ধানমন্ডি-৩২' নামে একটি কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়, যেখানে বিক্ষোভকারীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানায়। তবে, বুলডোজার ছাড়াই তারা নিজ হাতে ভাঙচুর চালায়।

এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও বিক্ষোভকারীদের থামাতে ব্যর্থ হয়। বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

উল্লেখ্য, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে পরিচিত, যেখানে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হওয়ার আগে বসবাস করতেন।

Header Ad
Header Ad

আমরা কী করলাম, সেটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিচার করবে : প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা কী করলাম বা করলাম না- ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেটি দিয়ে আমাদের বিচার করবে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ড. ইউনূস বলেন, দেশের রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে এবং এর ভিত্তিতেই সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। তিনি আরও বলেন, "এটি জাতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ। আমি জাতির পক্ষ থেকে কমিশনের দুই চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্যকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।"

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "এই দুটি প্রতিবেদন দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলবে। আপনি দরিদ্র, মধ্যবিত্ত বা ধনী যেই হোন না কেন, এই সংস্কারের প্রভাব থেকে কেউই বাদ যাবেন না।"

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, "কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে নাগরিকরা তাদের প্রকৃত অধিকার ফিরে পাবেন। আমরা যেন সত্যিকারের নাগরিক হিসেবে মর্যাদা পাই, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।"

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জনগণ, রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, "যাতে সবাই মনে করতে পারে, এখানে প্রকৃত সত্য বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে। আমাদের তো পণ্ডিত হতে হবে না এটি বোঝার জন্য, কারণ প্রতিদিনই আমরা নানা অবিচারের শিকার হই।"

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, "সংস্কার কমিশনের কাজ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এটি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বিশ্বের দরবারে এটি তুলে ধরতে হলে এর ইংরেজি অনুবাদ করা প্রয়োজন।"

কমিশনের সদস্যদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, "আপনাদের প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা ও গবেষণার সংমিশ্রণে এই প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় দলিল হয়ে থাকবে।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা কী করলাম বা করলাম না, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের সেই কাজের জন্যই বিচার করবে। তারা প্রশ্ন করতে পারে, আপনারা তো পেয়েছিলেন, তাহলে বাস্তবায়ন করেননি কেন? কারণ, সবকিছু তো বইয়ের পাতায় লেখা আছে। এই কাজ জাতির জন্য এক মূল্যবান স্মারক হয়ে থাকবে।"

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

খুলনায় ছাত্র-জনতার উচ্ছ্বাস, বুলডোজারের আঘাতে মাটিতে মিশে গেল ‘শেখ বাড়ি’
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ছাত্র-জনতার ঢল, বুলডোজার ছাড়াই গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা
আমরা কী করলাম, সেটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিচার করবে : প্রধান উপদেষ্টা
হাসিনার বিচারের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক রহমান
মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল নেতাকে কুড়াল দিয়ে কোপালেন আ'লীগের কর্মিরা
খুব দ্রুতই জবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে: ছাত্রদল সভাপতি
বগুড়ায় ৫০ টাকা অফারে টি-শার্ট কিনতে গিয়ে হুলস্থুল কান্ড, নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী
নওগাঁ সীমান্তে বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
মোহাম্মদপুরে বিড়াল হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা, তদন্তের নির্দেশ
চুয়াডাঙ্গায় সার কাণ্ডে বিএনপি ও যুবদলের ৫ নেতা বহিষ্কার
আজ বন্ধুর সাথে গোসল করার দিন
২ আলাদা বিভাগসহ দেশকে ৪ প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামিসহ সবাই খালাস
হাসিনার লাইভ প্রচারের আগেই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ উধাও
হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা
বিচারবিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর
গাজীপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সবজিবাহী পিকআপ খাদে, চালকসহ নিহত ৩
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে জনগনের মতামত চাইলো হাসনাত  
এই ফটো তোলোস কেন? আদালত চত্বরে শাহজাহান ওমর  
মনে হচ্ছে বিবিসি বাংলা গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার ভক্ত : প্রেস সচিব