শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

সংবাদ বিশ্লেষণ

পাচার হওয়া অর্থের বৈধতা কাদের উৎসাহিত করবে

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিদেশে থাকা সম্পদের দায়মুক্তির দিয়ে দেশে আনার সুযোগের ঘোষণা দিয়েছেন। এনিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ১৫ থেকে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি দেশে সরকারের খাতায় বৈধ আয়ের তালিকায় যুক্ত করা যাবে। সেই অর্থ দেশেও আনা যাবে। কিন্তু পাচার করা অর্থের উৎস জানতে চাওয়া হবে না। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে টাকা পাচার করা তো আইনত অপরাধ। এ সুযোগ কি অপরাধকে প্রশ্রয় দিচ্ছে? পাচার করা অর্থ যদি দেশে আনার উদ্যোগ হয় তবে পাচারকরা অর্থের উৎস কেনই বা জানানো হবে না? আর দেশে যদি ওই অর্থ আসেও সেটা কী বিনিয়োগ হবে? না, ব্যক্তির নামেই থাকবে? আরও প্রশ্ন উঠে টাকা পাচার হওয়ার পথ বন্ধ না করে পাচার হওয়া অর্থ বৈধতা দিয়ে কি ফায়দা আসবে, এটা কী অর্থপাচারকে উৎসাহিত করবে না?

অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণা ব্যবসায়ী মহল থেকে শুরু করে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ এবং সুধীসমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের সংগঠনি এফবিসিসিআই এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে আনা হলে ভালো ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হবেন। এটা ব্যবসায়ীরা চান না। বাজেটে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ও সুশাসনের কথা বলা হলেও পাচার করা কালো টাকা সাদা করার যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা সমর্থনযোগ্য নয়।

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) এর প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন রশিদ বলেছেন, ‘মাত্র ৭ শতাংশ কর প্রদান করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকলে নিয়মিত করদাতাদের আরও নিরুৎসাহিত করা হবে। ঢালাও সুযোগ না দিয়ে এর সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘পাচার করা টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন করা হবে না-এ ধরণের এমনেষ্টি (ক্ষমা) প্রদান করা হলে অর্থনীতিতে নীতি নৈতিকতার ভারসাম্য মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও চুক্তিকারীদের সঙ্গে প্রতিবাদের সম্মুখীন হতে হবে।’

প্রস্তাবিত বাজেটকে সময়োপযোগী বললেও পাচারকৃত টাকা ফেরানোর উদ্যোগকে নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়।

ইনিস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এর নেতারা বলছেন, সরকার যে উদ্যোগটি নিয়েছে এটি ইউনিক না বা এবারই প্রথম না। জাস্টিস এন্ড ইকিউটির জায়গা বা নৈতিকতার দিক থেকে ঠিক না।

এদিকে ১৬ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্য আবদুস শহীদ বলেন, ‌‘অপ্রদর্শিত টাকা থেকে থাকলে তা কোনো কাজে লাগছে না। সেটা ব্যবহারের যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে সেটা অর্থ পাচারের বিষয় নয়। অর্থ পাচারের জন্য যে আইন আছে সেটা অবশ্যই প্রয়োগ করা হবে। প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থায় আনা যাবে। হলে টাকা কাজে লাগবে। অপ্রদর্শিত আয়কে যদি প্রকাশ বা বিনিয়োগ করা না যায় তাহলে সমৃদ্ধি সম্ভব হবে না।'

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো রূপরেখা অর্থমন্ত্রী দেননি। তিনি টাকা পাচার করে তা হালাল করারা সুযোগ দিয়েছেন। ৪০ বছর যাবৎ বিভিন্ন সরকার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছেন, কিন্তু লাভ হয়েছে খুব কম। ব্যবসা করলে ২৫ শতাংশ কর দেওয়া লাগে। আর টাকা পাচার করে ৭ শতাংশ কর দিয়ে তা আবার ফিরিয়ে আনা যাবে। এতে মানুষ টাকা পাচারে উৎসাহী হবে। শুধু এটাই না, এটি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, মানি লন্ডারিং আইন, সংবিধানের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এসব আইন সংশোধন করা না হলে টাকা কীভাবে আনবেন? কোনো সুযোগ নেই।

বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী ভাষ্য ছিল, সব টাকাই ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত কালো টাকা নয়। পদ্ধতিগত কারণেও টাকা কালো হয়। অপ্রদর্শিত অর্থ দেশে আনলে প্রশ্নবিদ্ধ হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, পাচার করা অর্থ যেকোনো আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফেরত আনা হবে। এতে কোনো ধরনের বাধা কাম্য নয়।

অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে একাত্ব হয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ট্রুথ কমিশনের কার্যক্রম কোনো আইন দ্বারা বৈধ ছিল না। এবার বিদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার সিদ্ধান্ত সংসদে আইন দ্বারা প্রণীত হবে।

আইনে কী আছে:

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ঢাকাপ্রকাশে একটি নিবন্ধে বলেছেন , অর্থপাচার রোধ আইন ২০১২ এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অর্থপাচার গুরুতর অপরাধ। দেশের আইন অনুযায়ী যার শাস্তি পাচারকৃত অর্থ বাজেয়াপ্ত করা এবং তার দ্বিগুণ জরিমানা ও ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড নির্ধারিত রয়েছে।

এবার বাজেটে যে সুযোগ দেয়া হয়েছে অর্থ পাচার তথা সার্বিকভাবে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে, যা সংবিধান পরিপন্থী এবং প্রধানমন্ত্রীর ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’ ঘোষণার অবমাননাকর বলে মন্তব্য করেছেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।

 Anti-money laundering measures webinar - YouTube

মানিলন্ডারিং অপরাধ ও দণ্ড

৪। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, মানিলন্ডারিং একটি অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে।

(২) কোন ব্যক্তি মানিলন্ডারিং অপরাধ করিলে বা মানিলন্ডারিং অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা, সহায়তা বা ষড়যন্ত্র করিলে তিনি অন্যূন ৪ (চার) বৎসর এবং অনধিক ১২ (বার) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুন মূল্যের সমপরিমাণ বা ১০ (দশ) লক্ষ টাকা পর্যন্ত, যাহা অধিক, অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। 

তবে শর্ত থাকে যে, আদালত কর্তৃক ধার্যকৃত সময়সীমার মধ্যে অর্থদণ্ড পরিশোধে ব্যর্থ হইলে আদালত অপরিশোধিত অর্থদণ্ডের পরিমাণ বিবেচনায় অতিরিক্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।

(৩) আদালত কোন অর্থদণ্ড বা দণ্ডের অতিরিক্ত হিসাবে দণ্ডিত ব্যক্তির সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে যাহা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানিলন্ডারিং বা কোন সম্পৃক্ত অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত বা সংশ্লিষ্ট।

8[ (৪) কোন সত্তা এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটন করিলে বা অপরাধ সংঘঠনের চেষ্টা, সহায়তা বা ষড়যন্ত্র করিলে ধারা ২৭ এর বিধান সাপেক্ষে, উপ-ধারা (২) এর বিধান অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে এবং অপরাধের সহিত সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মূল্যের অন্যূন দ্বিগুণ অথবা ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা, যাহা অধিক হয়, অর্থদণ্ড প্রদান করা যাইবে এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধণ বাতিলযোগ্য হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত সত্তা আদালত কর্তৃক ধার্যকৃত সময়সীমার মধ্যে অর্থদণ্ড পরিশোধে ব্যর্থ হইলে আদালত অপরিশোধিত অর্থদণ্ডের পরিমাণ বিবেচনায় সত্তার মালিক, চেয়ারম্যান বা পরিচালক যে নামেই অভিহিত করা হউক না কেন, তাহার বিরুদ্ধে কারাদন্ডে দন্ডিত করিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।]

(৫) সম্পৃক্ত অপরাধে অভিযুক্ত বা দণ্ডিত হওয়া মানিলন্ডারিং এর কারণে অভিযুক্ত বা দণ্ড প্রদানের পূর্বশর্ত হইবে না।

 

আইনে আরও আছে:

 ১৭। (১) এই আইনের অধীন কোন ব্যক্তি বা সত্তা মানিলন্ডারিং অপরাধে দোষী সাব্যস্থ হইলে আদালত অপরাধের সহিত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত দেশে বা দেশের বাহিরে অবস্থিত যে কোন সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।

(২) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন এই আইনের অধীন মানিলন্ডারিং অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন অনুসন্ধান ও তদন্ত বা বিচার কার্যক্রম চলাকালীন সংশ্লিষ্ট আদালত প্রয়োজনবোধে দেশে বা দেশের বাহিরে অবস্থিত যে কোন সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।

 

(৩) এই আইনের অধীন মানিলন্ডারিং অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্থ কোন ব্যক্তি পলাতক থাকিলে বা অভিযোগ দাখিলের পর মৃত্যুবরণ করিলে আদালত উক্ত ব্যক্তির অপরাধের সহিত সম্পৃক্ত সম্পত্তিও রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।

 পাচারকৃত অর্থের পরিমান কত?

বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে পাচার হচ্ছে ৬৪ হাজার কোটি টাকা। গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতি বছর দেশের এসব টাকা পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ডসহ ১০টি দেশে।

আমদানি-রফতানিসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কারসাজি আর হুন্ডির আড়ালে অর্থপাচার করছে পাচারকারী সিন্ডিকেট। এমনটাই বলছে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ পাচার মনিটরিং সংস্থা- বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বিআইএফইউর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২০, ৫ বছরে পাচারকারীরা ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। যার মধ্যে শুধু ২০১৫ সালে ১ বছরেই দেশ থেকে পাচার হয়ে যায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। পাচারকৃত টাকার পরিমাণ বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় পাচারকারী দেশ হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ।

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।

এদিকে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নাগরিকদের জমা করা টাকার পরিমাণ এক বছরের ব্যবধানে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বেড়েছে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১ সালে সুইটজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আট হাজার দু'শ ৭৫ কোটি টাকা। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালে, এই অর্থের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার তিনশ ৪৭ কোটি টাকা। সুইস ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে কয়েক বছরের যে পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে তাতে এই বৃদ্ধি এক বছরের ব্যবধানে সর্বোচ্চ। এই হিসেব অনুযায়ী, এক বছরেই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ দু'হাজার নয়শ ২৮ কোটি টাকা বেড়েছে।

এই যখন পরিস্থিতি তখন যে পথে টাকা পাচার হচ্ছে সেপথগুলো বন্ধের ব্যবস্থা না করে পাচার হওয়া অর্থের বৈধতা প্রদান কতটুকু যৌক্তিক তাই প্রশ্ন করছেন বিশিষ্ট মহল।

আরও প্রশ্ন আছে। পাচারকৃত অর্থ দেশে আনার মাধ্যম কি হবে? যারা অর্থ পাচার করেছেন তাদের নাম কেউ জানতে পারবে না কেন? জানলে ক্ষতি কী? পাচার করা টাকা দেশে এনে কি করা হবে সেবিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগে। এই অর্থ কি বিনিয়োগ করা হবে না আবার অন্য কোনো দেশে স্থানান্তর করা হবে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর আছে ২০২১ সালে কিছু অর্থপাচারকারীর নাম আসার খবর ছিল গণমাধ্যমে। কিন্তু ওই পাচারকারীদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।

পাচারকৃত অর্থ বৈধ করার সুযোগ প্রদান বিগত বছরগুলোর মতই কালো টাকা সাদা করার বেআইনি ও অন্যায় সুযোগের ধারাবাহিকতা মাত্র, যা স্থানিক থেকে বৈশ্বিক করা হলো—এমন মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

আরও পড়ুন: পাচারকৃত অর্থ দেশে আনার সুযোগ বিদ্যমান আইনে সাংঘর্ষিক

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিদেশে অর্জিত অর্থ ও সম্পদ দেশের অর্থনীতির মূলধারায় সংযুক্তির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ ও আয়কর রাজস্ব বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে, বারবার সুযোগ দিয়েও দেশের অর্থনীতিতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রত্যাশিত ফল বয়ে আনেনি, সরকারও আকাঙ্ক্ষিত রাজস্ব পায়নি। তাই নতুন এই বিশেষ বিধানের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে তা না বললেও চলে। কারণ যারা অর্থ পাচার করেছেন তারা এধরনের প্রণোদনায় উৎসাহিত হয়ে পাচারকৃত অর্থ ফেরত নিয়ে আসবে, এরকম দিবাস্বপ্নের কোনো ভিত্তি নেই। বিশেষ করে, যেখানে পাচারকৃত দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের দেশের পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি ব্যতিরেকে এই অর্থ বা সম্পদ ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। বরং এর মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ ও অর্থপাচারকারীরাই শুধু স্বস্তি বোধ করবেন, পুলকিত হবেন। অর্থপাচারকে এভাবে লাইসেন্স দেওয়া হলে দেশে দুর্নীতি ও অর্থপাচার আরও বিস্তৃতি ও গভীরতা লাভ করবে।

তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিভিন্ন দেশে এ ধরণের সুযোগ দেওয়া হয়। আমরা সেই সুযোগটা দিচ্ছি। এই সুযোগে যদি সুফল না আসে তাহলে এ সুযোগ রাখব কেন? বাজেটে একটা সুযোগ দেওয়া হয়েছে, এর থেকে সুফল পেতে পারি এই সম্ভবনাকে সামনে রেখেই করা হয়েছে।

 

 

 

Header Ad
Header Ad

ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ জানানো যাবে দুই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে

ছবি: সংগৃহীত

ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হলে এখন সরাসরি ই-মেইলে অভিযোগ জানানো যাবে স্থানীয় সরকার ও যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে। অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে এবং যথাযথ প্রমাণসহ অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি এবং ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে সরাসরি অভিযোগ জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, দুই মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ যেকোনো সংস্থা বা দফতরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়া, দুর্নীতি, অনিয়ম কিংবা সেবা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হলে তা ই-মেইলে জানাতে পারবেন সেবা গ্রহীতারা।

অভিযোগ পাঠানোর ঠিকানা:
advisorasifofficial1@gmail.com

পোস্টে বলা হয়, অভিযোগের সঙ্গে যথাযথ তথ্য ও প্রমাণ সংযুক্ত করলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোনো অভিযোগ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে এবং অভিযোগকারীর পরিচয় সম্পূর্ণরূপে গোপন রাখা হবে।

"জনস্বার্থে এই উদ্যোগ। ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে সক্রিয় নাগরিক অংশগ্রহণ আমাদের সবচেয়ে বড় প্রেরণা।"

এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকে। তারা মনে করছেন, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এটি একটি সাহসী পদক্ষেপ।

Header Ad
Header Ad

টঙ্গীতে দুই শিশুকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা, মায়ের স্বীকারোক্তি

টঙ্গীতে দুই শিশুকে কুপিয়ে হত্যার শিকার করেছে মা। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের টঙ্গীর আরিচপুর এলাকায় দুই শিশু সন্তানকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তাদের মা সালেহা বেগম। নিহতরা হলেন মালিহা আক্তার (৬) ও আবদুল্লাহ বিন ওমর (৪)। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি ফরিদুল ইসলাম জানান, আরিচপুরের জামাইবাজার রুপবানের টেক এলাকার সেতু ভিলা ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘর থেকে রক্তমাখা একটি বঁটি জব্দ করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় ঘরে ছিলেন শুধু সালেহা বেগম। সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা গেছে, বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে অন্য কেউ ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেনি। ঘটনার পর সালেহা নিজেই তার দুই দেবরকে ডেকে আনেন এবং তার কথাবার্তা অসংলগ্ন ছিল।

পরে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হলে মধ্যরাতে সালেহা স্বীকার করেন, তিনিই বঁটি দিয়ে দুই সন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। তবে তিনি কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, তা এখনো অস্পষ্ট।

নিহত শিশুদের বাবা আবদুল বাতেন মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তাতুয়াকান্দি এলাকার বাসিন্দা। পরিবার নিয়ে তিনি ওই ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন।

সালেহার মা শিল্পি বেগম জানান, সালেহা দীর্ঘদিন ধরে মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছেন। তবে কখনও অস্বাভাবিক আচরণ করেননি। পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং সালেহার মানসিক অবস্থা যাচাই করতে চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে।

এদিকে দুই শিশুর মরদেহ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ বলছে, ঘটনাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং বিস্তারিত তদন্ত শেষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Header Ad
Header Ad

টানা ৫ দিন দেশজুড়ে বৃষ্টি, তাপমাত্রা বাড়ার পূর্বাভাস

ছবি: সংগৃহীত

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী পাঁচ দিন দেশের সব বিভাগেই বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে এই সময়ে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে। শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বিরাজ করছে। পাশাপাশি মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ রয়েছে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে।

এই পরিস্থিতিতে শনিবার চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো অথবা বৃষ্টি হতে পারে। রোববারও একই রকম আবহাওয়া বিরাজ করতে পারে।

সোমবার সিলেট বিভাগে কিছু কিছু জায়গায় এবং দেশের অন্যান্য বিভাগের দু-এক জায়গায় বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে।

মঙ্গলবার ও বুধবারও দেশের বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। তবে বুধবার দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পাঁচ দিনের বর্ধিত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা ধীরে ধীরে কমে আসতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এ সময়ে জনসাধারণকে সচেতন থাকতে এবং বজ্রপাতের সময় নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ জানানো যাবে দুই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে
টঙ্গীতে দুই শিশুকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা, মায়ের স্বীকারোক্তি
টানা ৫ দিন দেশজুড়ে বৃষ্টি, তাপমাত্রা বাড়ার পূর্বাভাস
বাফুফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সরফরাজের পদত্যাগ
ভর্তুকি মূল্যে পাটের তৈরি বাজারের ব্যাগ সরবরাহ করা হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা
রবিবার সারা দেশে মহাসমাবেশের ঘোষণা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের
দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!
জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাবাদী দল নয়: জিএম কাদের
প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসিইউতে পরিচালক সৃজিত মুখার্জি
জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয় : নাহিদ ইসলাম
আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ
হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন
নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার
লাল কাপড়ে ঢাকা হবে দেশের সব পলিটেকনিকের ফটক
৬০ বছর বয়সে বিয়ে করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ১২ কেজি রূপার গয়না জব্দ
ফয়জুল করীমকে বরিশালের মেয়র ঘোষণার দাবি