টিপু হত্যা: মুসার কাছ থেকে যেসব তথ্য পেলেন গোয়েন্দারা
মতিঝিলের আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজ ছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতি হত্যার ঘটনায় ওমান থেকে গ্রেপ্তার হওয়া সুমন সিকদার ওরফে মুসার কাছ থেকে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। বিশেষ করে বেশকিছু রাজনৈতিক তথ্য পাওয়া গেছে। অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখছেন গোয়েন্দারা। তবে তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে কিছু বলতে চাচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বর্তমানে মুসা ছয় দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। প্রথম দুই দিনের জিজ্ঞাসাবাদে মুসার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন ডিবি কর্মকর্তারা। ওই কর্মকর্তারা বলেছেন, আপাতত তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এসব তথ্য নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।
মামলার তদন্তকারী এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, টিপু হত্যা মামলার সার্বিক বিষয় নিয়ে বেশ কিছু রাজনৈতিক হত্যা মিশনের তথ্য পাওয়া গেছে। মুসার দেওয়া এসব তথ্যের সত্যতা খুঁজতে মাঠে কাজ করছে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক ইউনিট। দেশে ফিরিয়ে আনার পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেও মুসা বেশ কিছু গুরুত্ত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। এর আগে এ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আরেক আসামি মাসুম মোহাম্মদ আকাশের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। সেই তথ্যের ভিত্তিতে মুসাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি পুলিশের প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার ঢাকাপ্রকাশকে বলেছেন, আমরা টিপু হত্যার অন্যতম আসামি মুসার কাছ থেকে বেশকিছু গুরুত্বপর্ণ তথ্য পাবো বলে ইন্টারপোলের সহযোগিতায় ওমান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে দেশে ফিরিয়ে এনেছি। মুসা বাংলাদেশের মাফিয়া নিয়ন্ত্রণ করত। কাউকে খুন করতে চুক্তি করত এবং সেই অনুযায়ী সে কাজ করে।
হাফিজ আক্তার বলেন, শাহাজানপুর ডাবল মার্ডারের ঘটনায় বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মূল পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়কারী হিসেবে মুসার নাম আসে। পরে জানা যায়, মুসা ঘটনার আগেই ১২ মার্চ দেশ ছেড়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত চলে যায়। তার সন্ধান পেতে ৬ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখায় যোগাযোগ করা হয়। পরে প্রতিবেশী দেশসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ইন্টারপোলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়। একপর্যায়ে জানা যায়, মুসা গত ৮ মে দুবাই থেকে ওমান প্রবেশ করে। তখন ইন্টারপোলের ওমান পুলিশ এনসিবির সহযোগিতায় তাকে ১২ মে গ্রেপ্তার করে এবং গত ৯ জুন ওমান থেকে দেশ ফিরিয়ে আনা হয়।
তিনি আরও বলেন, এ মামলায় এর আগে মোট ১২ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবাই মুসার নাম বলছে। মুসাকে ৬ দিনের রিমান্ডে দিয়েছে পুলিশ। রিমান্ড শেষ হলে এ হত্যায় চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু রাজনৈতিক হত্যা মিশন সহ গুরুত্ব তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন এই কর্মকর্তা।
টিপু খুনের পরিকল্পনাকারী হিসেবে এর আগে গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ, নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির এবং মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশকে।
এ বিষয়ে র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল-মঈন বলেছেন, গ্রেপ্তার এই চারজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় সম্পৃক্ততা সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে। তাছাড়া তাদের কাছ থেকে আমরা আরও বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। সেগুলো সমন্বয় করে এই হত্যা মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে টিপুকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি হত্যাকাণ্ড দেশে হলেও তার নিয়ন্ত্রণ হয় দুবাইয়ে।
মুসার রিমান্ডের বিষয়ে ডিবি পুলিশের মিডিয়া শাখার একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুসা মূলত একজন মাফিয়া গ্যাং। সে বিভিন্ন সময় খুনের চুক্তি নেন। টিপু হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ তার সঙ্গে একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে। যা হয়তো তদন্তের স্বার্থে বলা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে ডিবি পুলিশ টিপু হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে যে সব নাম পেয়েছে তা এখনই বলতে নারাজ। পুলিশ বলছে, মুসার কাছ থেকে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (মিডিয়া) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, মুসা মূলত খুনের চুক্তি করত। তার পেশা ছিল খুন করা। তবে দেশের মাফিয়াদের অনেক কিছু জানে সে। রিমান্ডে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে যা আপাতত বলা যাচ্ছে না।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মুসা যেসব তথ্য দিয়েছে, সেই তথ্য সত্য কি-না এবং এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে সব রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে সেগুলোর সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বলেন, আমি টিপু হত্যার আসামিদের শাস্তি চাই এটাই আমার প্রত্যাশা।
প্রসঙ্গত, ২৪ মার্চ রাতে নিজের বাসায় ফেরার পথে রাজধানীর শাহজানপুর রেলগেটে সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে খুন হন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিুপ। এসময় পাশ দিয়ে রিকশায় করে যাওয়ার সময় গুলিতে খুন কলেজ ছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতি।
কেএম/এনএইচবি/আরএ/