সম্ভাবনার নতুন দুয়ার পদ্মা সেতু-৮
সেতু দেখতে যাতায়াতে গুণতে হবে ১৫০০ টাকা
পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের জন্য টোল গুণতে হবে। প্রস্তাবিত টোল হচ্ছে সর্বনিম্ন ১৫টাকা এবং সর্বোচ্চ ৩৩ টাকা ৭১ পয়সা। এই হিসাবে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দেখতে গেলে সর্বনিম্ন টোল হিসাবে যাতায়াতে গুণতে হবে ১৫০০ টাকা।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পরপরই টোল গুণতে হবে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে। দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ের টোল নির্ধারণের জন্য আগামী ৭ জুন সংশ্লিষ্ট সকল স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে বৈঠক করবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। ইতিমধ্যে টোলের হার নিয়ে বেশ কিছু প্রস্তাবনা প্রস্তুত করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) এবং মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে ঢাকা-মাওয়া ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় এবং এক্সেপ্রেসওয়ের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকার ‘কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন(কেইসি)’কে নিয়োগ দিচ্ছে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারী যানবাহনের জন্য সরকার টোল চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সড়কটি নির্মাণ করার সময়ই সরকার জানিয়েছিল, ঢাকা-মাওয়া- ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারীদের টোল দিতে হবে।
কিন্তু এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গেলেও সরকার এতোদিন এক্সপ্রেসওয়েতে টোল নির্ধারণ করেনি। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় এক্সপ্রেসওয়েতে টোল নেওয়া হবে না। এখন পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় সরকার টোল নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় উদ্বোধন হবে বাংলাদেশের স্বপ্ন, সমৃদ্ধির প্রতীক, অন্যতম স্থাপনা ‘পদ্মা সেতু’। এই সেতুর মাধ্যমে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে ২১ জেলা।
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়েতে টোল নির্ধারণের জন্য ইতিমধ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) এর পক্ষ থেকে একাধিক প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে সরকারের টোল নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি কিলোমিটারে ১৮ টাকা ৪০ পয়সা করে টোল আদায়ের একটা প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে টোল নীতিমালা সাত বছর পুরনো হওয়ার কারণে প্রতি বছর পাঁচ শতাংশ ধরে গুণিতক আসে এক টাকা ৪১ পয়সা। আর লেভেল অব সার্ভিস গুণিতক ধরা হয়েছে এক টাকা ৫ পাঁচ পয়সা। এই দুই গুণিতক হিসাবের গুণফল অনুযায়ী প্রতি কিলোমিটারে ৩৩ টাকা ৭১ পয়সা করার আরেকটি প্রস্তাব করা হয়েছে সওজ এর পক্ষ থেকে।
অপরদিকে ঢাকা-ভাঙ্গা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পর অন্তর্বর্তীকালীন টোল নির্ধারণ হয়েছিল প্রতি কিলোমিটারে ১০টাকা হারে। এটিকে ভিত্তি ধরে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে টোলের দুটি প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এর একটি হচ্ছে ১০ টাকার আড়াইগুণ অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে ২৫ টাকা। অন্যটি হচ্ছে ১০ টাকার দেড় গুণ ধরে প্রতি কিলোমিটারে ১৫ টাকা।
তবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারকারী যানবাহনের টোল নির্ধারণের জন্য আগামী ৭ জুন সকল স্টেক হোল্ডারদেরকে নিয়ে সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সভাকক্ষে বৈঠক করবেন সড়ক বিভাগের সচিব। ওই বৈঠকে টোলের হার কত হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এক্ষেত্রে সরকারি টোল নীতিমালা অনুযায়ী কিলোমিটার প্রতি ১৮ টাকা ৪০ পয়সা অথবা এক্সপ্রেসওয়ের অন্তর্বর্তীকালীন ১০টাকা কে ভিত্তি ধরে ২৫ টাকা কিংবা ১৫ টাকা করার সম্ভাবনাই বেশি। অবশ্য টোল আদায়ের ক্ষেত্রে পরিবহন ভেদে টোলের পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। এব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এক্ষেত্রে টোল যদি ১৮ টাকা ৪০ পয়সা নির্ধারণ করা হয় তাহলে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতু দেখতে গেলে ৫০ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের জন্য একটি যানবাহনকে গুণতে হবে ৯২০ টাকা। অর্থাৎ আসা যাওয়ায় ১৮৪০ টাকা। সেতু পার হলে তার জন্য আলাদা টোল দিতে হবে।
মোটরসাইকেলের জন্য টোল দিতে হবে ১০০ টাকা এবং প্রাইভেট কার ও জিপের জন্য ৭৫০ টাকা। মাঝারি বাসের জন্য ২ হাজার টাকা, বড় বাসের জন্য ২ হাজার ৪০০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া মিনিবাসকে দিতে হবে ১ হাজার ৪০০ টাকা এবং মাইক্রোবাসকে দিতে হবে ১ হাজার ৩০০ টাকা। ৫ টন পর্যন্ত ট্রাকের জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টনের ট্রাকের জন্য ২ হাজার ১০০ টাকা, ৮ থেকে ১১ টনের ট্রাকের জন্য ২ হাজার ৮০০ টাকা, বড় ট্রাকের জন্য (থ্রি এক্সেল পর্যন্ত) ৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং টেইলারের জন্য ৬ হাজার টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে টোল না দিয়েও মাওয়াতে গিয়ে পদ্মা সেতু দেখা যাবে এবং সে ক্ষেত্রে কেবল সেতুর টোল পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে যানবাহনকে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস লেন ব্যবহার করতে হবে।
টোল আদায়ে কোরিয়ান কেইসি
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষনের জন্য কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান ‘কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন’কে দায়িত্ব দিচ্ছে। এ জন্য ভ্যাট-ট্যাক্সসহ সরকারকে পাঁচ বছরের জন্য পরিশোধ করতে হবে ৭১৭ কোটি চার লাখ ৯৯৯ টাকা।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উত্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। বুধবার একনেক এর বৈঠকে প্রস্তাবনাটি উত্থাপন করা হবে। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে কেইসি এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পাবে।
এপি/