সম্ভাবনার নতুন দুয়ার পদ্মা সেতু-৩
দেশের সক্ষমতা বিশ্বে তুলে ধরবে: মোস্তাফিজুর রহমান
পদ্মা সেতু আর স্বপ্নের বেড়াজালে সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্ব ব্যাংকের দুর্নীতির অপবাদের জবাব দিয়ে এই সেতুর দ্বার খুলছে ২৫ জুন। ফলে বেড়ে যাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি দেড় থেকে দুই শতাংশ। শুধু দেশে নয়, বিশ্বেও বাংলাদেশের সক্ষমতার পরিচয় দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আরও এগিয়ে যাওয়ার পথ খুলে গেল। এভাবেই অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর অবদানের ব্যাপারে ঢাকাপ্রকাশ-এর সঙ্গে কথা বলেছেন অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জাহাঙ্গীর আলম।
ঢাকাপ্রকাশ: চালু হতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এটা জিডিপিতে কীভাবে অবদান রাখবে?
অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান: বিভিন্নভাবে যে প্রক্ষেপন করা হয়েছে পদ্মা সেতু চালু হলে বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) দেড় থেকে দুই শতাংশ বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। এটা আসবে ফেরিতে চলাচলে যে কালক্ষেপন হয়। এরফলে সময়ের সাশ্রয় হবে। পণ্য পরিবহনে সুযোগ বাড়বে। এর মাধ্যমে অর্থনীতি উন্নত ও এ সংক্রান্ত নানা কর্মকাণ্ডের সৃষ্টি হবে। এটার ফলে শিল্প পার্ক হবে। বিপনন ব্যবস্থা, বিতরণ ব্যবস্থার সুযোগ বাড়বে ও ব্যয় কমবে। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে উৎপাদন পর্যায়ে প্রতিযোগিতার সক্ষমতাও বাড়বে।
একইসঙ্গে উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে কিন্তু পদ্মা সেতুর সংযোগ থাকবে। সার্বিকভাবে শুধু পরিবহন করিডোর না, অর্থনীতির করিডোর হিসেবে যুক্ত হবে। কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অবদান বাড়বে। জিডিপিতে দেড় থেকে দুই শতাংশ অবদান রাখবে।
ঢাকাপ্রকাশ: আলোচিত ও সমালোচিত এ সেতু বিশ্বে কীভাবে বার্তা দেবে?
অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান: আমরা যেহেতু পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করছি। আমাদের নিজেদের ব্যবস্থাপনায় করা হয়েছে। প্রকৌশলীরা এর প্রকিউরমেন্ট থেকে শুরু করে এর নির্মাণ কাজও শেষ পর্যন্ত করছে। চালুও করা হচ্ছে। সুতরাং বাংলাদেশের যে সামর্থ্য আছে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সেটা ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরবে বিশ্বে বলে আমার মনে হয়। আর একটা বিষয় হচ্ছে এই সেতুটাও ভারত ও শ্রলিঙ্কার মধ্যে মটর পরিবহন কানেকটিভিতে আছে। এশিয়ান হাইওয়ে ও রেললাইন লিংকেও যুক্ত হবে। এটার পরিচিতি কেবলমাত্র যে বাংলাদেশে থাকবে তা না, এর বাইরে আঞ্চলিক ও উপ আঞ্চলিক পর্যায়ে চলে যাবে। এটার গুরুত্ব বাইরেও যাবে। অনেকে এর গুরুত্ব জানতে পারবে। সার্বিকভাবে অবশ্যই এটা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে একটা ইতিবাচক ও উজ্বল ভূমিকা পালন করবে।
ঢাকাপ্রকাশ: কোনো কোনো খাত বেশি অবদান রাখবে?
অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান: এটার উপর দিয়ে সড়কের সঙ্গে রেল লাইন যাবে। এগুলোর সবকিছুর সমন্বিত কর্মকাণ্ডের উপরই নির্ভর করবে। তখনই সুফল পাবে। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার উদ্বৃত্ত যে কৃষিপণ্য উৎপাদন হয় তা অন্যান্য অঞ্চলে পৌঁছতে কিন্তু বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হতো। পদ্মা সেতু চালু হলে কৃষকরা ভালো দাম পাবে। দ্রুততার সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় আসবে। পচনশীল পণ্য তাড়াতাড়ি আসবে। কৃষক ও ভোক্তা পর্যায়ে যে মধ্যস্বত্বভোগি তা দুর হবে। এ থেকে মুক্ত হয়ে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবে। এ ছাড়া কৃষি পণ্যের প্রক্রিয়াজাত শিল্প হবে। এটা করার মাধ্যমে বিভিন্ন শিল্প গড়ে উঠবে। সেই ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু ইতিবাচক অবদান রাখবে।
ঢাকাপ্রকাশ: রাজধানীতে কেমন প্রভাব পড়বে পদ্মা সেতু?
অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান: আমার মনে হয় ঢাকার বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে পদ্মা সেতু। কারণ ঢাকা কৃষিপণ্যের বড় বাজার। আগে ঢাকায় কৃষি পণ্য আসতে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হতো। সেতু না থাকায় পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পেত। বিভিন্ন পণ্য আড়তে আসত। এরপর ভোক্তা পর্যায়ে যায়। এতে মূল্যের উপর প্রভাব পড়ে। পদ্মা সেতুর চালুর ফলে দ্রুততার সঙ্গে ঢাকা আসবে। পচনশীল পণ্য রক্ষা পারে। খুচরা ও পাইকারি বাজারে ইতিবাচক অবদান রাখবে। পচবে না। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে পদ্মা সেতু হচ্ছে সাপ্লাই-চেঞ্চের অংশ। এটা ঠিক রাখতে। কোনো প্রতিবন্ধকতা যাতে না থাকে উৎপাদক ও ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছার ক্ষেত্রে।
জেডএ/এমএমএ/