একান্ত সাক্ষাৎকারে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক
মামলাজট কমিয়ে খেলাপি ঋণ কমানো হবে
করোনায় অনেক কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। অনেকে ঋণ নিয়ে ঠিক মতো কিস্তি দেননি। হচ্ছে মামলা। তারপর কমছে না খেলাপি ঋণ। তাই মামলার জট কমিয়ে খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চান অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহম্মদ শাম্স-উল ইসলাম। সম্প্রতি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব উদ্যোগের কথা বলেছেন তিনি। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকাপ্রকাশ-এর সিনিয়র রিপোর্টার জাহাঙ্গীর আলম। ঢাকাপ্রকাশের সঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহম্মদ শাম্স-উল ইসলামের আলাপ:
ঢাকাপ্রকাশ: তৃণমূলে ব্যাংকের সেবা পৌঁছে দিতে কী উদ্যোগ নিয়েছেন?
মোহম্মদ শাম্স-উল ইসলাম: অগ্রণী ব্যাংকের অগ্রযাত্রায় আমি বর্তমানে সফটওয়ারে গুরুত্ব দিচ্ছি। তা আপগ্রেডেশন করা হবে। আগের খুবই পুরোনো থেকে লেটেস্ট ভার্সনে আনা হবে। তাই এটাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বোর্ড অনুমোদন দিয়েছে। লেটেস্ট ভার্সন, ২০২১ এ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে সব কিছু অটো জেনারেট হবে। শুধু সফটওয়ার নয়, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সমস্যা তা সমাধান করা হবে।
ঢাকাপ্রকাশ: নতুন কী প্রডাক্ট আনার উদ্যোগ নিয়েছেন?
মোহম্মদ শাম্স-উল ইসলাম: আমরা কথার চেয়ে কাজে বিশ্বাসী। তাই মামলা জট থেকে সরে এসে বা মামলা না করে বিকল্প পন্থার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিকল্প পথ হিসেবে ঋণ রিকভরি করার জন্য মামলা জট কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের অগ্রযাত্রায় অগ্রণী ব্যাংক অগ্রণী ভূমিকায় থাকে। সেই লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। রোবাস্ট বা ভাইব্রেন্ট ব্যাংক হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছি।
ঢাকাপ্রকাশ: প্রবাসীদের জন্য কি কোনো বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?
মোহম্মদ শাম্স-উল ইসলাম: যারা প্রবাস থেকে দেশে ফিরে এসেছে, তাদের জন্য ‘ঘরে ফেরা ঋণ’ কর্মসূচি চালু করেছি। সাত শতাংশ সুদে তিন বছরের জন্য এ ঋণ দেওয়া হচ্ছে। প্রায় এক কোটি লোক বিদেশে আছে। তারা ৪২ বিলিয়ন (চার হাজার ২০০ কোটি) ডলার রিজার্ভে সাহায্য করছে। রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে। তারাও মালিক ব্যাংকের। তাই তাদের জন্য আমরা নিজেরা আড়াই থেকে দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে তিন শতাংশ প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছি। যেহেতু তারা ফরেন কারেন্সি মানি বিদেশ থেকে আনছে। তারা যেহেতু এ দেশের জনগণ। তাই পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু হয়েছে। কারণ ব্যাংকের মালিক জনগণ। সবুজ অর্থায়নেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ভর্তুকি অত্যন্ত জোরালো হচ্ছে। রপ্তানিকারকদেরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকাপ্রকাশ: খেলাপি ঋণ কমাতে কি কোনো বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন?
মোহম্মদ শাম্স-উল ইসলাম: ঋণ আদায় করতে চেষ্টা করা হচ্ছে। গুরুতর মামলা জট থেকে বিকল্প পথে আসা হচ্ছে। এজন্য খেলাপী ঋণ আদায়ে সবাইকে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। যারা ভালো করছে তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। যারা খারাপ করছে তাদের কাছে ব্যাখ্যা তলব করে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। অটো এনপিএল, নন পাফফর্মিং লোন (অলস ঋণ) এক অংকে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঋণ গ্রহিতার সঙ্গে জামিনদার থেকেও সিআইবি রিপোর্ট নেওয়া হচ্ছে। এটা নেওয়া খারাপ না, ভালো। ঋণীকে ভালো রাখতে জামিনদারের সিআইবি রিপোর্ট নেওয়া ভালো।
ঢাকাপ্রকাশ: গ্রাহক সেবা সহজ করতে কী উদ্যোগ নিয়েছেন?
মোহম্মদ শাম্স-উল ইসলাম: সরকারের নীতি মেনে গ্রাহক সেবা দেওয়া হচ্ছে। গ্রাহক সেবা সহজ করতে ইন্টারনেট ব্যাংকিং তাড়াতাড়ি চালু করা হবে। সব প্রস্তুত। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এর উদ্বোধন করা হবে। তখন ঘরে বসেই ই-অগ্রণীর মাধ্যমে সেবা পাওয়া যাবে।
ঢাকাপ্রকাশ: বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে কি কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?
মোহম্মদ শাম্স-উল ইসলাম: হ্যাঁ, অবশ্যই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মানসম্পন্ন ব্যবসার দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। সম্প্রতি রপ্তানি, আমদানি ঘাটতি বাড়ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে। রপ্তানিও বাড়াতে হবে। তাই রপ্তানিকারকদের উৎসাহিত করতে চা চক্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা ছাড়া রেমিট্যান্সে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রবাসীদেরও উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ঢাকাপ্রকাশ: সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে কীভাবে ভূমিকা পালন করছেন?
মোহম্মদ শাম্স-উল ইসলাম: বিভিন্নভাবে সরকার ব্যয় সংকোচ ও প্রণোদনার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করা হচ্ছে। করোনা মোকাবেলায় সিএসএমইতে প্রধানমন্ত্রী অগ্রাধিকার দিয়ে যে ডাক দিয়েছেন তাতে সাড়া দেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগে আমরা ভালো করছি। এরফলে প্রণোদনা, কৃষি ঋণেও পুরস্কার পেয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স পুরস্কারও পেয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ভালো করা হচ্ছে। শতভাগ লক্ষ্য অর্জনে চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই মোতাবেক প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতেও (এপিএ) ২০১৯-২০ বছরে প্রথম হয়েছি। এবারও চেষ্টা করা হচ্ছে।
ঢাকাপ্রকাশ: এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে কোন পর্যায়ে আসা সম্ভব হয়েছে?
মোহম্মদ শাম্স-উল ইসলাম: সরকার সারাদেশে ব্যাংক সেবা পৌঁছে দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে অগ্রণী ব্যাংকও তাতে অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা করছে। অগ্রণী ব্যাংকের শাখা নেই, এসব ইউনিয়নে অগ্রণী দুয়ার ব্যাংকিং নামে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
সাব-এজেন্ট নিয়োগ করে হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, ক্লিয়ারিং চেক গ্রহণ, ঋণের আবেদন গ্রহণ, বিতরণ ও কিস্তি সংগ্রহ, রেমিট্যান্স বিতরণ, বিদ্যুৎ বিল জমা, ভাতা বিতরণসহ যেকোনো ব্যাংকের হিসাবে টাকা পাঠানো যাচ্ছে। চারটি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হচ্ছে। আরও ২০০টি শাখার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শুধু এক দুয়ারে সীমাবব্ধ থাকব না। যে কেউ চাইলে আসতে পারে। সবার জন্য দুয়ার খোলা। কেউ যাতে মনোপলি করতে না পারে।
জেডএ/এসএন