সম্ভাবনার নতুন দুয়ার পদ্মা সেতু-১
২ ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে!
সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। রাজধানী থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্মৃতিবাহী এবং সমাধিস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ঘুরে আসা যাবে মাত্র দুই ঘণ্টায়। একইভাবে গোপালগঞ্জ এলাকার মানুষও রাজধানীতে পৌঁছে যেতে পারবে একই সময়ে। যেখানে এখন সময় লাগছে ৫ থেকে ৭/৮ ঘণ্টা।
স্বাধীনতার স্বপ্ন দ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মভূমি গোপালগঞ্জ এমনিতেই তাঁর অনুসারী ও পর্যটকদের কাছে তীর্থ স্থান। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু বাড়ি, যেখানে রয়েছে তাঁর বাল্যস্মৃতি। সেখানেই রয়েছে তার সমাধিসৌধ। গড়ে ওঠেছে স্মৃতি কমপ্লেক্স। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত নিদর্শন নিয়ে স্মৃতি জাদুঘর।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চ ও মৃত্যুবার্ষিকী ১৫ আগস্ট উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচি থাকে টুঙ্গিপাড়ায়। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান। সেখানকার বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায়িত্বগ্রহণের আগে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি অতিথিরা শ্রদ্ধা জানাতে যান সেখানে। সাধারণ পর্যটকরাও ছুটে যান সেখানে। ফলে বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচি ছাড়াও নানা উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুসারীদের অন্যতম গন্তব্য স্থান হয়ে ওঠে এই টুঙ্গিপাড়া।
ঢাকার গুলিস্তান থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার দূরত্ব ৯০ কিলোমিটারের বেশি নয়। পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে দুইটি রাস্তা ব্যবহার করে ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়া যায়। একটি হচ্ছে মুন্সিগঞ্জে মাওয়া ঘাট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা ঘাট দিয়ে; অপরটি মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট হয়ে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে। নদী পাড়ি দিতে গিয়ে দীর্ঘ বিড়ম্বনা পোহাতে হতো যাত্রীদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো ফেরিতে। কখনো যানজটের কারণে, কখনো ঝড়-বৃষ্টি-কুয়াশা-নাব্যতা সংকটের কারণে, আবার কখনো তীব্র স্রোতের কারণে যাতায়াতের ক্ষেত্রে দেখা দিত অনিশ্চয়তা। নদী পারাপারের এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় ব্যয় হতো। সেই একই জায়গার পুরো চিত্র শুধু পদ্মা সেতুর কারণে পাল্টে যাচ্ছে। সেতু দিয়ে এই দূরত্ব পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র ৭ মিনিট।
বঙ্গবন্ধুর সমাধীসৌধ। ছবি ঢাকাপ্রকাশ।
টুঙ্গিপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ শহর আসতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। গোপালগঞ্জ থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা ঘাটে আসতে সময় লাগে ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট। ফেরি পার হতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে রাজধানীতে আসতে সময় লাগে ৫০ মিনিট। ৯০ কি.মি পথ পাড়ি দিতে সময় লাগতো কমপক্ষে পাঁচ ঘণ্টা। কখনো সেটা ছয় থেকে সাত ঘণ্টা লাগতো।
অপর দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে টুঙ্গিপাড়া পৌঁছাতে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা সময় লাগতো।
এখন রাজধানী থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া পর্যন্ত ৫০ মিনিট, সেতু পার হতে সাত মিনিট, শরীয়তপুর থেকে টুঙ্গিপাড়ায় ৬৫ থেকে ৭০ মিনিট, মোট সময় লাগবে মাত্র দুই ঘণ্টা। অর্থাৎ মাত্র দুই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়া, টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকায় পৌঁছানো যাবে।
এই পথে যাতায়াত হবে খুবই মসৃণ। কোনো ঝক্কিঝামেলা থাকবে না। দেখা দেবে না কোনো যানজট। চারলেনের রাস্তায় কোনো সিগনাল নেই। ওভারপাস দিয়ে বাধাহীন গাড়ি চলাচল করবে। নিচের সড়ক দিয়েও অন্যান্য গাড়ি নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে।
কেউ চাইলে সকালে ঢাকা থেকে গাড়ী নিয়ে যাত্রা করে বঙ্গবন্ধুর সমাধীসৌধ দেখে বিকালে ঢাকায় পৌঁছাতে পারবে। যাত্রা পথও হবে আনন্দদায়ক।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের গ্যালারি ও বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত নিদর্শন। ছবি ঢাকাপ্রকাশ।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার খবরে দুই পারের মানুষ স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন। টুঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল মান্নান (৩৮) ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, `পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কথা শুনে খুব ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে এখন চাইলেই দিনে দিনে বাড়ি থেকে ঘুরে এসে ঢাকায় অফিস করতে পারবো। মন চাইলে যখন-তখন বাড়িতে যেতে পারবো। এটা দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিল। আগে নদী পার হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। পারিবারিক অনুষ্ঠান হোক আর সামাজিক উৎসব হোক সব কিছু ভুলে যেতে বসছিলাম। এখন আর সেই সমস্যা হবে না। এখন বাড়ি থেকে গাড়ীতে উঠলে ঘুম ধরার আগেই ঢাকা পৌঁছে যাব।'
তিনি বলেন, সব শেষ ঈদেও আমার ৮ বছরের বাচ্চা নিয়ে মাওয়াঘাটে কি যে দুর্ভোগে পড়েছি সেটা বলার মতো না। ঈদ এলে গ্রামে যাওয়াটা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু দুর্ভোগের চিন্তা করে অনেক সময় ঈদের সময়ও গ্রামের বাড়ি যেতে পারিনি। সেতু চালু হলে আর সমস্যা থাকবে না।’
বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হবে আগামী ২৫ জুন। এই সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ টি জেলার মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে।
এপি/