হাতিরঝিলে বাণিজ্যিক সুবিধা রাখতে চায় রাজউক
হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বাৎসরিক ব্যয় প্রায় ১৮ কোটি টাকা। এই ব্যয়ের একটা অংশ আসে হাতিরঝিলে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গুলোর ভাড়া থেকে। একারণেই বাণিজ্যিক সুবিধা বহাল রাখতে চায় সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (২৪ মে) হাতিরঝিলে সব বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা অপসারণের আদেশ দিয়ে স্থায়ী রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। প্রায় এক বছর আগে আংশিক রায় দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের ৩০ জুন হাইকোর্ট বাণিজ্যিক স্থাপনা অপসারণের আদেশ দিয়ে আংশিক রায় দিয়েছিল।
আরও পড়ুন: হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সি নিষিদ্ধের রায় প্রকাশ
হাতিরঝিলের মূল পরিকল্পনা লঙ্ঘন করে অবৈধ স্থাপনা অপসারণের জন্য হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ জনস্বার্থে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট একটি রিট দায়ের করে। এই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ জুন হাইকোর্ট হাতিরঝিলকে পাবলিক ট্রাস্ট হিসেবে উল্লেখ করে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো অপসারণের আদেশ দেন। রাজউককে সেই সময়ও ৬০ দিন সময় দেয় হাইকোর্ট।
আংশিক রায়ের পরই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে রাজউক। হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ মেটাতে বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে ইজারা দেওয়া হয়েছে বলে যুক্তি সংস্থাটির। এই ইজারার টাকা না পেলে হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ মেটানো সম্ভব হবে না বলে দাবি রাজউকের। কারণ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আগেই রাজউককে জানিয়ে দিয়েছে তারা হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ দিতে পারবে না।
রাজউকের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা ৬ দিন আগে দায়িত্ব পেয়েছেন। সাবেক চেয়ারম্যান এ.বি.এম আমিন উল্লাহ নূরী দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেছিলেন, আমরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছি। যারা ইজারা নিয়েছেন তারা লিজ মানি দেন। তারা অগ্রিম টাকা পরিশোধ করেছেন। এই টাকা হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় করা হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, হাতিরঝল প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে ডিপিপিতে কোনো নির্দেশনা নেই। রক্ষণাবেক্ষণে বছরে প্রায় ১৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা লাগে। ইজারা দেওয়া ৩৬টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে ৯ কোটি ৮ লাখ টাকা পাওয়া যায়। বাকি ৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা ঘাটতি রয়েছে।
বিভিন্ন সময় এই অর্থ চেয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে রাজউক। তবে এই টাকা রাজউককেই ম্যানেজ করতে হবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের আওতায় ১১টি বিশেষ স্যুয়ারেজ ডাইভারশন স্ট্রাকচার (এসএসডিএস) এবং ৪টি মেকানিক্যাল স্ক্রিন রয়েছে। তাদের রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তার জন্য দক্ষ জনবল প্রয়োজন।
৮ দশমিক ৮ কিলোমিটার এক্সপ্রেস রোড, ৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার সার্ভিস রোড, ৪টি সেতু, ৪টি ওভারপাস, ৩টি ভায়াডাক্ট ও ২টি ইউ-লুপ ব্যবহার বন্ধ হলে ঢাকার যান চলাচলও ব্যাহত হবে। হাতিরঝিল এলাকায় প্রায় দেড় লাখ গাছপালা রয়েছে। লেকের ফুল ও ঔষধি গাছের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত কর্মীরা রয়েছেন। প্রকল্পের ব্যয় মেটাতে ফুড কোর্ট, গাড়ি ধোয়া, শিশু পার্ক, অ্যাম্ফিথিয়েটার, পার্কিং ভবন, সার্কুলার বাস সার্ভিস ও বোট সার্ভিসের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ৫৫ পৃষ্ঠার এ পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, অনুলিপি পাওয়ার পর ৬০ দিনের মধ্যে এসব স্থাপনা রাজউককে সরিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে রাজউককে ৪ দফা নির্দেশনাও দিয়েছে হাইকোর্ট। বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। ১ হাজার ৯৭১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ৩০২ একর জমির ওপর এ প্রকল্পটি করা হয়। প্রথম দিকে, প্রকল্প এলাকার ১৬ কিলোমিটার রাস্তায় কোনো বাস অথবা মিনিবাস চলাচলের অনুমতি ছিল না। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৫/২০০৯ তম সভায় অনুমোদিত লে-আউটে প্রস্তাবিত ওয়াকওয়ে ও রোডওয়ে এলাইনমেন্ট ব্যতিত অন্য কিছু ছিল না।
প্রকল্পটি ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, বৃষ্টি, বন্যাজনিত পানি ধারণ, বৃষ্টির পানি পয়ঃনিষ্কাশন ও নগরের নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং সার্বিক পরিবেশ উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। খালগুলোর জন্য প্রস্তাবিত সুবিশাল লেকটি একটি নিয়ন্ত্রিত ‘হাইড্রোলিক সিস্টেম’ হিসেবে কার্যকর হয়।
এতে ওই এলাকার ড্রেনেজ ম্যানেজমেন্ট ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি পায়, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় ও সৌন্দর্যমণ্ডিত পাবলিক স্পেসের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। রমনার পাশাপাশি একটি সুবিশাল নীল জলাধারবেষ্টিত উন্মুক্ত স্থানের অভাব লাঘব হয়। যা বিশ্বের কাছে ঢাকা মহানগরীর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে।
আরইউ/এএজেড