মেট্রোরেল লাইন-৪ এর নতুন রুট: ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড হয়ে নারায়ণগঞ্জ
রুট পরিবর্তন হচ্ছে মেট্রোরেল লাইন-৪ এর। ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইনের পাশ বা উপর দিয়ে মেট্রোরেলের এই লাইনটি আর হচ্ছে না। বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণ করলে এমআরটি লাইন-৪ এর কোন প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের মতামত গ্রহণের বিষয়ে মত দিয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ(ডিটিসিএ)। তবে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় রেখে মেট্রোরেল নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত নিয়ে যেতে নতুন রুট অ্যালাইনমেন্ট দিয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ডিএমটিসিএল।
রাজধানীর ঢাকার যানজট নিরসন এবং ঢাকার চারপাশকে যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে সরকার রাজধানীকে ঘিরে ছয়টি ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এই লাইনগুলো হচ্ছে-এমআরটি -১) বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর এবং নতুন বাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো পর্যন্ত। এই রুট হবে বিমানবন্দর-বিমানবন্দর টার্মিনাল ৩- খিলক্ষেত-যমুনা ফিউচার পার্ক-নতুন বাজার-উত্তর-বাড্ডা-বাড্ডা-হাতিরঝিল পূর্ব-রামপুরা-মালিবাগ-রাজারবাগ-কমলাপুর।
এই রুটের পূর্বাচল অংশ হচ্ছে, নতুন বাজার-যমুনা ফিউচার পার্ক-বসুন্ধরা-পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি (পিওএইচএস)-মাস্তুল-পূর্বাচল পশ্চিম-পূর্বাচল সেন্টার-পূর্বাচল পূর্ব-পূর্বাচল টার্মিনাল-পিতলগঞ্জ ডিপো পর্যন্ত।
এমআরটি-২ হচ্ছে গাবতলী –চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত। এই রুট হবে গাবতলী বেড়িবাঁধ (এমব্যাংকমেন্ট) রোড-বসিলা-মোহাম্মদপুর বিআরটিসি বাস স্ট্যান্ড-সাত মসজিদ রোড-ঝিগাতলা-ধানমন্ডি ২ নম্বর রোড-সাইন্স ল্যাবরেটরি-নিউ মার্কেট-নীলক্ষেত-আজিমপুর-পলাশী-শহীদ মিনার-ঢাকা মেডিকেল কলেজ-পুলিশ হেডকোয়ার্টার-গোলাপ শাহ মাজার-বঙ্গ ভবনের উত্তর পার্শ্বস্থ সড়ক-মতিঝিল- আরামবাগ-কমলাপুর-মুগদা-মান্ডা-ডেমড়া-চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত।
এমআরটি লাইন-৫ হচ্ছে নর্দার্ন রুট। এই রুট হবে হেমায়েতপুর-বালিয়ারপুর- বিলামালিয়া-আমিনবাজার-গাবতলী-দারুস সালাম-মিরপুর-১-মিরপুর-১০-মিরপুর ১৪-কচুক্ষেত-বনানী-গুলশান ২-নতুন বাজার হয়ে ভাটারা পর্যন্ত।
এমআরটি লাইন-৫ হচ্ছে সাউদার্ন রুট। এই রুট হবে গাবতলী-টেকনিক্যাল- কল্যাণপুর-শ্যামলী-কলেজ গেইট-আসাদ গেইট-রাসেল স্কয়ার-পান্থপথ-সোনারগাঁ-হাতিরঝিল পশ্চিম-নিকেতন-রামপুরা-আফতাব নগর পশ্চিম- আফতাব নগর সেন্টার-আফতাব নগর পূর্ব হয়ে দাশেরকান্দি পর্যন্ত।
নির্মাণাধীন দেশের প্রথম মেট্রোরেল হচ্ছে লাইন-৬। যেটির রুট হচ্ছে উত্তরা ৩য় পর্ব থেকে শুরু হয়ে-পল্লবী-রোকেয়া সরণির পশ্চিম পার্শ্ব দিয়ে খামারবাড়ী হয়ে ফার্মগেট-হোটেল সোনারগাঁও-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্ত্বর-তোপখানা রোড-বাংলাদেশ ব্যাংক হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত।
এই প্রকল্পের উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর এই অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হবে সাধারণের চলাচলের জন্য।
অপর অংশ অর্থাৎ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ হবে নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে।
এমআরটি লাইন-৪ হচ্ছে কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত। এই লাইনটি নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল বিদ্যমান কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ রেল লাইনের উপর দিয়ে এলিভেটেড বা উড়াল পথে।
কিন্তু মেট্রোরেলের অন্যসব লাইনের সমীক্ষা কাজ শেষ হলেও এমআরটি লাইন-৪ এর সমীক্ষা কাজ এখনও শুরু হয়নি। প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল এই লাইনটির রুট অ্যালাইনমেন্ট হচ্ছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইনের পাশ বা উপর দিয়ে। কিন্তু এই পথে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ডাবল লাইন নির্মাণ করলে নতুন করে এমআরটি লাইন নির্মাণ করা প্রয়োজন হবে না।
ইতিপূর্বে ডিএমটিসিএল পক্ষ থেকে এই লাইনের প্রাথমিক সমীক্ষার জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে পত্র দেওয়া হয়েছিল।
এমআরটি লাইন-৪ প্রকল্পের প্রাথমিক স্টাডি করার জন্য ডিএমটিসিএল এর লেখা পত্রের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বরাবর লেখা ডিটিসিএ-এর এক পত্রে উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণ করলে এমআরটি লাইন-৪ এর প্রয়োজন হবে না মর্মে শর্ত সাপেক্ষে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। এ লাইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রেলওয়ের মতামত আবশ্যক বলে ডিটিসিএ এর চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
অবশ্য ডিএমটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে তারা এমআরটি লাইন-৪ এর রুট পরিবর্তন করেছেন। যেহেতু পদ্মা রেল লিংক নারায়ণগঞ্জের কিছু অংশ পাবে, সে কারণে কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ রেলপথের পাশ দিয়ে বা উপর দিয়ে এমআরটি লাইন নেওয়া যৌক্তিক হবে না। এ কারণে ডিএমটিসিএল ইতিমধ্যে এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগকে চিঠি দিয়ে নতুন রুট এ্যালাইনমেন্টের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
তিনি জানান, নতুন রুট হবে কমলাপুর থেকে ঢাকা-চট্টগ্যাম সড়ক ধরে নারায়গঞ্জ লিংক রোড হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত। এক্ষেত্রে স্টেশনের সংখ্যা বাড়বে।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, নতুন রুটের যে এ্যালাইনমেন্ট দেওযা হয়েছে সেটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জাইকাসহ বেশ কয়েকটি দাতা সংস্থা এই সমীক্ষা করার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে।