সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

পাসপোর্ট অফিসে অনিয়মই এখন নিয়ম

রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় ফলের ব্যবসা করেন সিরাজ মিয়া, গ্রামের বাড়ি রংপুর বিভাগের নীলফামারী জেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নে সেখানে স্ত্রী-কন্যা ও বাবা-মা নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার তার। কিন্তু ইদানিং বাবা হায়দার আলী বুকে ও কোমরে ব্যথা অনুভব করেন। বাবার চিকিৎসা করাতে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে ডাক্তার জানান, দেশে চিকিৎসা করানো এক প্রকার অসম্ভব। হায়দার আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাইয়ে নিয়ে চিকিৎসা করার পরামর্শ দেন ডাক্তার। এতে চিন্তার ভাঁজ পড়ে সিরাজ মিয়ার কপালে। বাবাকে উন্নত চিকিৎসা করাতে গ্রামের কিছু জমি বিক্রি করতে হয় সিরাজ মিয়াকে।

খুব দ্রুতই বাবাকে নিয়ে ভারতে যেতে হবে। তবে বাবা-ছেলের কারও নেই পাসপোর্ট। পাসপোর্ট করাতে গতকাল বুধবার (১৮ মে) এপ্রিল আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে ধর্না দেন সিরাজ মিয়া। প্রয়োজনীয় কাগজ নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও আসছে না ডাক। সিরিয়ালে আগে থাকলেও আগেভাগেই মিলছে না সেবা।

এদিকে লাইনের ফাঁকে দেন-দরবার হচ্ছে। দালালদের টাকা দিলেই মিলবে সেবা। টাকা দিলেই লাইন থেকে দালাল, দালাল থেকে আনসার আর আনসার থেকে কর্মকর্তার হাত ঘুরে মুহূর্তেই মিলছে সেবা। এগুলো হলো ফল ব্যবসায়ী সিরাজ মিয়ার ভোগান্তি ও পাসপোর্ট অফিসের দালাল এবং কর্মকর্তাদের সংঘবদ্ধ ঘুষ চক্রের চিত্র।

পাসপোর্ট অফিসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দালালদের হাতে জিম্মি প্রক্রিয়া, সার্ভার জটিলতা, কর্মকর্তাদের অসদাচরণ, অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে সেবা প্রদানসহ নানা রকমের অনিয়মের আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে দেশের বেশির ভাগ পাসপোর্ট অফিস। বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে কর্মকর্তাদের কাছে গেলে তারা শুধু সংশ্লিষ্ট অফিসার ডিজির কথা বলে পার পেয়ে যান। এবং কথায় কথায় কর্মকর্তারা তার নাম ব্যবহার করেন।

ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন শত শত আবেদনকারী পাসপোর্ট করতে এসে পড়ে যান গোলক ধাঁধায়। অফিসের বাইরে ওঁৎ পেতে থাকা প্রতারক ও দালাল চক্রের খপ্পর এড়াতে অফিসের যে কারও কাছে পাসপোর্ট করার তথ্য জানতে গেলেও মেলে না সুরাহা। তারা পরামর্শ দেয় নির্ধারিত দালালদের দিয়ে পাসপোর্ট করার অথবা কোনো তথ্যই না দিয়ে এড়িয়ে যান। কর্মকর্তাদের পরোক্ষ ইন্ধনে নিয়োগ দেওয়া এসব দালাল ছাড়া গ্রাহক নিজ উদ্যোগে লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার চেষ্টা করলে তার আবেদনে নানাবিধ সমস্যা আর ভুল দেখিয়ে দিনের পর দিন ফেরত দেওয়া হয়। আবার যারা দেরি করে হলেও পাসপোর্ট হাতে পাচ্ছেন তাদের পাসপোর্টের তথ্যে রয়েছে নানা অসঙ্গতি। সেটা সংশোধনে আরেক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার জালে জড়িয়ে যাচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা।

অপরদিকে, দালাললের কাছ থেকে সেবা নিতে গেলেই গুনতে হয় মোটা অংকের টাকা। এসব টাকার একটি বড় অংশের ভাগ নেন কিছু অসাধু কর্মকর্তা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পাসপোর্ট অফিসে ফরম পূরণ থেকে শুরু করে পাসপোর্ট ডেলিভারি পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় ঘুষ দিতে হচ্ছে। সব কাজ শেষ হওয়ার পরও পাসপোর্ট হাতে পেতেও গুনতে হয় আটশ থেকে হাজার টাকা। এদিকে সেবাপ্রত্যাশীদের সারি দীর্ঘ হলেও বাইরে থেকে দালালদের মাধ্যমে নেওয়া হয় টোকেন। এসব টোকেন আবার আনসারদের মাধ্যমে চলে যায় কর্মকর্তাদের কাছে। তারা আবার নির্ধারিত ফি নিয়ে মুহূর্তেই দিয়ে দেন সমাধান।

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাসুদুর রহমান। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলাফল ভালো হওয়ার সুবাদে স্কলারশিপে কানাডায় যাওয়ার সুযোগ পান তিনি। প্রস্তুতিও চলে সব কিছুর। আবেদন করেন পাসপোর্ট করার। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে না পাওয়ায় কানাডায় যাওয়ার স্বপ্ন শেষ হওয়ার পথে তার।

পাসপোর্ট অফিসের সামনে আরেক ভুক্তভোগী দুবাই কর্মরত মামুনের সঙ্গে ঢাকা প্রকাশের এই প্রতিবেদকের কথা হয়। এ সময় মামুন বলেন, পাসপোর্ট নবায়নের জন্য কয়েকদিন এখানে আসছি কিন্তু কাজ হচ্ছে না। যতবারই যাই, বলে প্রসেসিং চলছে, কালকে আসেন, কালকে এলে বলে সার্ভারে সমস্যা, অপেক্ষা করেন। দিন তারিখ কিছুই বলে না। এমন অভিযোগ শুধু তাদের নয় অসংখ্য মানুষ বিভিন্নভাবে রাতের সময় পাসপোর্ট না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দালালদের দিয়ে পাসপোর্ট আবেদন করালে তুলনামূলক ভোগান্তি কম। পুলিশ ভেরিফিকেশন, জন্মনিবন্ধন সনদ আর সত্যায়িত করার সিল সবই আছে দালালের কাছে। দরকার শুধু টাকা। নিজে না গিয়েও পকেটভর্তি টাকা দিলেই হয় পাসপোর্ট প্রস্তুত। কিন্তু নিয়মানুসারে আবেদন করে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পাওয়া যায় না পাসপোর্ট।

এদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নতুন পাসপোর্টেও আবেদনকারীদের তিন চতুর্থাংশকেই পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হয়ে ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলেই পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়েও শুরু হয় গড়িমসি। অথচ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি (সিটিজেন চার্টার) অনুযায়ী, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ইস্যু করতে ১৫ কর্মদিবস এবং জরুরি ফি এবং পুলিশ প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা।

অপরদিকে, ই-পাসপোর্ট প্রক্রিয়ায় বিতরণের ধরণ অনুযায়ী সাধারণ ১৫ কর্ম দিবসের মধ্যে, জরুরি সাত কর্ম দিবসের মধ্যে এবং অতীব জরুরি দুই কর্ম দিবসের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। এছাড়াও ভিসা ইস্যুর ক্ষেত্রে শ্রেণিভেদে এবং অনুকূল তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে তিন কর্মদিবস থেকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সেবা নিশ্চিত করার কথা। এ ক্ষেত্রে আইন থাকলেও তার প্রয়োগ দেখা যায় না।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশের ৬৯টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে প্রতি মাসে গড়ে দুই লাখ ২৬ হাজারের বেশি পাসপোর্টের আবেদন জমা হয়। এর মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ জমা হয় দালালের মাধ্যমে। তাদের জমা করা আবেদন প্রতি পাসপোর্ট কর্মকর্তারা ঘুষ নেন নির্ধারিত রেট এক হাজার টাকা করে। সে হিসাবে পাসপোর্ট আবেদন থেকে প্রতি মাসে ঘুষ আদায় হয় ১১ কোটি ৩২ লাখ টাকার বেশি। বিশাল অঙ্কের এ ঘুষের টাকা থেকে ১০ শতাংশ হারে অর্থাৎ এক কোটি সোয়া ১৩ লাখ টাকার মতো পাঠানো হয় ঢাকায় পাসপোর্টের প্রধান কার্যালয়ে।

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে আসা নথিপত্রে ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের কর্মকর্তা মো. সাচ্চু মিয়া, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক রফিকুল ইসলামসহ ৬৯টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিবরণ রয়েছে।

পাসপোর্ট আবেদনকারী (সেবা গ্রহীতা) পরিচয় দিয়ে একাধিক দালাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সরকারি ফি থেকে বেশি যা নেই সেই টাকা থেকে খুব অল্প কিছু থাকে আমাদের। বেশির ভাগই চলে যায় পাসপোর্ট অফিসের লোকজন ও আনসার সদস্যের কাছে।

পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই কাজ করে দেওয়া যায় বলেও জানান তারা। আইন অনুযায়ী, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ইস্যু করতে সাধারণভাবে পাসপোর্ট প্রাপ্তির জন্য ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ তিন হাজার ৪৫০ টাকা। অপরদিকে, জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট প্রাপ্তির জন্য ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ ফিস ছয় হাজার ৯০০ টাকা।

শুধু ই চালান এবং সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে জমাকৃত এসব ফি গ্রহণযোগ্য হওয়ার কথা থাকলেও দালালরা হাতে হাতেই গ্রহণ করছেন টাকা। দালালের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান পেতে হলে একজন গ্রাহককে গুনতে হয় অন্তত ৯ হাজার টাকা। দর-কষাকষিতে ক্ষেত্রবিশেষ টাকার অংক আট হাজারে নামতে পারে।

তবে সেই সংখ্যাটা তুলনামূলক কম। ফলে দেখা যায়, দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে একজন গ্রাহকের অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে পাঁচ হাজার ৫৫০ টাকা। এই টাকা প্রায় পাঁচটি পক্ষ পায়। কে কত টাকা পাবেন, তা আগে থেকে নির্দিষ্ট করা। ফলে ভাগাভাগি নিয়ে পক্ষগুলোর মধ্যে কোনো ধরনের সংঘাত বা অন্তঃকলহ দেখা যায় না।

ভুক্তভোগীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পাসপোর্ট, ভিসা ও ইমিগ্রেশন) সেলিনা বানু বলেন, বাইরে দালাল চক্র কি করে তা আমাদের জানা নেই। আমরা তো দালাল নিয়োগ করি না। কে কত নিচ্ছে বা দিচ্ছে তার দায় আমাদের নয়। এ সবের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে, তারাই পদক্ষেপ নেবে। আমাদের কাছে পৃথক কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সার্ভার জটিলতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিস্টেম আপগ্রেড করতে হলে সাময়িক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়, যার কারণে এসব সমস্যা তৈরি হয়। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সার্ভার আমাদের সার্ভারের চেয়েও অনেক বেশি সমস্যা আছে। অনেক সময় দেখা যায় এনআইডির সার্ভার স্লো থাকায় আমরাই ভেরিফিকেশন করতে পারি না। সার্ভার যেহেতু টেকনিক্যাল বিষয় সেহেতু মাঝে মাঝে সমস্যা হতেই পারে। তবে সার্ভার আরও উন্নত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ডিজির (সহকারি) মেজর মো. মোরশেদ বলেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করি তবে বাইরের বিষয়টি আমরা দেখি না। বাইরের বিষয়ে অন্যরা দেখে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কথা বলতে হলে বিল্ডিং এর ডিরেক্টর আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে কথা বলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিরেক্টর পাসপোর্ট অফিসের ডিরেক্টর (৬০২) মামুন আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, পাসপোর্ট অফিসের বাইরে সমস্যাগুলো আমরা দেখি না, এখানে পৃথকভাবে আমরা কাজ করি। এ বিষয়ে কথা বলতে হলে অ্যাডমিনের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, বাইরে অনিয়ম হয় বলছেন, ভুক্তভোগী কোনো ব্যক্তি আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি এর জন্য আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারছিনা।

কেএম/আরএ/

Header Ad
Header Ad

মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই-আগস্ট গণঅভুত্থানে গণহত্যার মামলায় আগামী মাসের শুরুতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে-আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আলজাজিরার বৈশ্বিক নেতাদের সাক্ষাৎকারমূলক অনুষ্ঠান ‘টক টু আল–জাজিরা’য় এ কথা বলেন তিনি।
আগামী ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর জুনের মধ্যেই নির্বাচন হবে বলে ফের জানিয়েছেন তিনি

এ সময় তিনি আরও বলেন, শুধু মানবিক সহায়তা নয়, নিরাপদ প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান।

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।

আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।

আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে।

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, মধুচন্দ্রিমা শেষ হোক বা না হোক, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে। জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা এখনও বলছে না।

লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে?

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন,
এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে–তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে।

তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এ আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান,
তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তার জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।

Header Ad
Header Ad

ঢাকাসহ সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এর পাশাপাশি কমতে পারে দিনের তাপমাত্রা। এছাড়া আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে মেঘলা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০-১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইতে পারে।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সোমবার সকাল ৬টায় ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ২৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮২ শতাংশ।

সারাদেশের সকাল ৬ টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো অথবা বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে সারাদেশে দিনের তাপামাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

আরও বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

রোববার (২৭ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুরের ডিমলাতে সর্বোচ্চ ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

Header Ad
Header Ad

সবাই মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য: আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ছবি: সংগৃহীত

ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সনদ তৈরি করা। সবাই মিলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার অংশ হিসেবে আলোচনা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের এলডি হলে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

আলী রীয়াজ বলেন, চর্চা, ঐক্যে এবং সম্মিলিতভাবে জাতীয় সনদ তৈরি করতে সবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সনদ তৈরি করা। যাতে করে ক্ষমতার বিন্যাসে পরিবর্তন ঘটে। বাংলাদেশ যাতে সমস্ত সম্ভাবনা নিয়ে জাগ্রত হতে পারে। গত ৫৩ বছর মানুষ যে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করছে, সেই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করা যায়, পথ উন্মুক্ত করা যায়, যেন সবাই মিলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি। তারাই অংশ হিসেবে এ আলোচনা।

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, মতামত ও সুপারিশই যথেষ্ট নয়। সব রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর জনমানুষের ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশকে নতুন বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর করতে পারব। কাজে কি লিখছি তা নয়, চর্চার মধ্য দিয়ে, অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে, প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে আমাদের এ কাজে অগ্রসর হতে হবে। আমরা সেই প্রচেষ্টায় আছি।

ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তরুণদের নেতৃত্বে প্রাণ দিয়ে যে সম্ভাবনা তৈরি করেছে, সবাই মিলে সে সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হতে হবে। সেই পথ ও প্রচেষ্টায় সবাই একত্রিত আছি, থাকব। একত্রিত থাকার তাগিদ জারি রাখব।

রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি দলের কাছে মতামত চেয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে ৩৫টি দল মতামত জমা দিয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ। রোববার পর্যন্ত কমিশন ১৯টি দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে। ২০তম দল হিসেবে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে কমিশন সংলাপ করছে বলে জানান আলী রীয়াজ।

২০১৮ সালে বর্তমান গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত কোটা সংস্কার আন্দোলনের কথা তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেন, তাদের অকুতোভয় সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের নতুন পর্যায় সূচনা হয়েছিল। যার ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী পর্যায়ে একটি অভূতপূর্ব ও অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থান হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকাসহ সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে
সবাই মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য: আলী রীয়াজ
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ
কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের ফের গোলাগুলি
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে ৩ পরিবর্তন
দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
টটেনহামকে উড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না মোদি
রেফারির কাছে ক্ষমা চাইলেন মাদ্রিদের ডিফেন্ডার আন্তনিও রুদিগার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা উপহার দিলেন ছাত্রদল নেতা
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি
নওগাঁয় গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত না দেওয়ায় জাতীয় পার্টি’র নেতাকে গণধোলাই
পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও পানি না দেওয়ার আহ্বান বিজেপি এমপির
এসআই নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ, ৫৯৯ জনকে প্রাথমিক সুপারিশ
হাকিমপুরে গরীবের চাল ছাত্রলীগ নেতার গুদামে
চুরির অভিযোগে কুবির দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার
ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগবাড়িয়ে কিছু করার পক্ষে নয় ঢাকা
সাব-ইন্সপেক্টর পদে প্রাথমিক সুপারিশ পেল ৫৯৯ জন
দুই উপদেষ্টার এপিএস-পিও’র দুর্নীতির খোঁজে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু