ডা. জাফরুল্লার ফর্মুলাকে পাত্তা দিচ্ছে না রাজনৈতিক দলগুলো
জাতির সংকট নিরসনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জাতীয় সরকারের এক রূপরেখা দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণনা করেছেন। এই লেখায় তিনি ‘জাতীয় সরকারের ফর্মুলা’ উপস্থাপন করেছেন। তার সেই লেখায় রাজনীতিবিদদের প্রায় মাইনাস করেই ফর্মুলাটি করা। দেশে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসগ যেসকল রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে ফর্মুলাটি করা হয়েছে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফারুল্লাহ চৌধুরী যে ফর্মুলা দিয়েছেন সেটা পাত্তাই দিচ্ছেন না রাজনৈতিক নেতারা। তাদের অনেকে মনে করছেন তিনি একজন বয়োজ্যেষ্ঠ লোক তাঁর দৃষ্টি ভঙ্গিতে যা মনে হয়েছে দিয়েছেন। সেখানে কার নাম থাকল আর কার নাম থাকল না সেটা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই।
দেশের রাজনৈতিক সংকট যদি থাকে সেটা গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচনের মাধ্যমেই পরিবর্তন করতে হবে। অন্য কোন পথ বা ফর্মুলা এদেশে কার্যকর হবে না। যদি সেটি করতেও যায় তাহলে দেশের সংকট আরও ঘনিভূত হবে বলেন মনে করেন তারা। এজন্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রস্তাব বিন্দুমাত্র কানে তুলছেন না শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হতো ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির থিংকট্যাং হিসেবে কাজ করে। অনেক সময় তার বিভিন্ন বক্তব্যে আওয়ামী লীগ প্রতিবাদও করেছে। তবে সেই বিএনপি তার এই প্রস্তাবকে আমলে নিচ্ছে না।
এবিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, জাফরুল্লাহ সাহেব একজন বয়োজ্যেষ্ঠ সম্মানিত মানুষ। উনাকে আমরা সবাই সম্মান করি। দেশ ও জাতির কল্যাণে তার চিন্তাভাবনায় অনেক সময় কারো কারো সঙ্গে মিলে যায়, তার মানে এই নয় সব কিছুতেই মিল থাকবে, মিলে যাবে। তিনি আমাদের দলের কেউ নন, দলের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কেউ না। জাতীয় সরকার বিষয় উনার প্রস্তাবনা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত এর সঙ্গে বিএনপি'র কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। উনার দৃষ্টিতে যাকে বিবেচনাযোগ্য বলে মনে হয়েছে তাকে তিনি অন্তর্ভুক্ত করেছে।
বিএনপির বক্তব্য স্পষ্ট-নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। দলীয় সরকারের অধীন ও শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না। আমরাও জাতীয় সরকারের কথা বলছি- কিন্তু সেটি হবে বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের পদত্যাগ, পতন ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার পর।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, তিনি কেন দেন কিসের জন্য দেন সেটাই তো বুঝি না। এটা জাতির সঙ্গে এক ধরণের তামাশা। কারণ যাদের নাম তিনি দেন তাদের সঙ্গে আলাপ না করে এভাবে না দেওয়া এটা তামাছা ছাড়া কি? তিনি বয়োজোষ্ঠ্য মানুষ তাকে সম্মান করতে চাই কিন্তু তিনি যেভাবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফর্মুলা দেন এটা নিয়ে আসলে কথা বলার কিছু নাই।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির বলেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার নিজের মতামত দিয়েছেন এর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নেই।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ঢাকাপ্রকাশকে বলেন,আমি তার ফর্মুলা দেখি নাই। এটি নিয়ে আলাপ করতে চাই না। তাছাড়া আমাদের পার্টির ফোরামেও এনিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এসব নিয়ে আলোচনা করার সময় হয়নি।
একইভাবে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কাার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, এগুলো নিয়ে কোনো আলাপ করতে চাই না। এসব নিয়ে কথা বলার সময় নাই।
এবিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্তব্য নিতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় তারা কেউ বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজী হননি।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর লেখাটি ১৫মে মধ্যরাতের পর সংবাদ মাধ্যমের কাছে পাঠানো লেখায় তার ফর্মুলাটি তুলে ধরেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রস্তাবিত সর্বদলীয় ও বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে গঠিত জাতীয় সরকার রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ ও গণভোটের মাধ্যমে গঠিত হবে। তার প্রস্তাবিত ‘জাতীয় সরকারের ফর্মুলা’য় রাষ্ট্রপতি হবেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান অথবা ড. কামাল হোসেন। আর প্রধানমন্ত্রী হবেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। একইসঙ্গে তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং বিভিন্ন কমিশনের চেয়ারম্যানদের নামও প্রস্তাব করেছেন।
এসএম/