বিমান যাত্রীদের লাগেজ নিয়ে দুর্ভোগের শেষ নেই
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজ নিয়ে দুর্ভাগের শেষ নেই যাত্রীদের। ২-৩ ঘণ্টার বিমান যাত্রা শেষ করে লাগেজ বের করে নিতেই আরও তিন ঘণ্টা পার করতে হয় বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
সিঙ্গাপুর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে আসতে সময় লাগে চার ঘণ্টা। কিন্তু বিমান থেকে বেল্টে লাগেজ আসতে সময় লাগছে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। শুধু তাই নয়, অনেক সময় লাগেজগুলো বেল্ট থেকে এলোমেলোভাবে নিচে ফেলে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। একই সঙ্গে বেল্টের কর্মীদের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইটে থাইল্যান্ড থেকে দেশে আসেন সেলিম রেজা। তিনি জানান, থাইল্যান্ডের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দর থেকে দুই ঘণ্টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। কিন্তু বিমান থেকে নেমে ইমিগ্রেশন শেষ করে লাগেজের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় তিন ঘণ্টা।
হোসেন শিবলু নামে সিঙ্গাপুর প্রবাসী বলেন, সঠিক সময়েই বিমান ঢাকায় অবরতরণ করে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে, দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে লাগেজ পেতে। তিনি বলেন, বেল্ট থেকে সবার মালামাল অগোছালোভাবে নিচে ফেলা হয়। লাগেজ খুঁজে বের করতে অনেক সময় নষ্ট হয়।
সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘুরে দেখা গেছে, বিমানবন্দরে লাগেজের জন্য প্রায় প্রতিদিনই চিৎকার-চেঁচামেচি করেন যাত্রীরা। এ ছাড়া ময়লা পড়ে থাকা, যাত্রী হয়রানি, লাগেজ হারানো নিত্যকার চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, অনেক আগ থেকেই এমন বিড়ম্বনা থাকলেও দিনে দিনে অসহনীয় হয়ে উঠেছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজ নিয়ে অব্যবস্থাপনা। এসব নিয়ে অনেক অভিযোগ উঠলেও কিছুতেই সুরাহা হচ্ছে না।
ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানান, ইমিগ্রেশন পুলিশের হয়রানির শিকার হয়ে বহির্গামী যাত্রীদের নাভিশ্বাস উঠছে। যাত্রীদের লাগেজ সংগ্রহের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় সংঘবদ্ধ চক্রটি লাগেজ গায়েব করে ফেলে।এ ছাড়া লাগেজ কেটে ভেতরের মালামাল সরিয়ে ফেলার অবিযোগও পাওয়া গেছে। অনেক সময় যাত্রীদের লাগেজ আসেনি বলে জানানো হয়। বলা হয়, পরবর্তী ফ্লাইটে আসবে। এক্ষেত্রে পরবর্তী ফ্লাইটে লাগেজ এলেও লাগেজ প্রকৃত মালিকের কাছে পৌঁছানো হয় না।
এ বিষয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, আগে এক সময় লাগেজ বিড়ম্বনা হতো- এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। কিন্তু এখন আর হয় না। এখন আর দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করা লাগে না। খুব অল্প সময়ের মধ্যে যাত্রীরা বিমানবন্দর এলাকা ত্যাগ করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লাগেজ হারিয়ে গেলে তা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বের করা হয়। পরে হোম ডেলিভারি সার্ভিসের মাধ্যমে যাত্রীদের কাছে লাগেজ পৌঁছে দেওয়া হয়। তবে লাগেজ হারিয়ে যাওয়া ও বিড়ম্বনার কোনো অভিযোগ এখনো পর্যন্ত আমাদের কাছে আসেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক পলাশ বলেন, আমরা সব সময় যাত্রীদের সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। যেকোনো যাত্রীকে আমরা আন্তরিকভাবে সেবা দিয়ে থাকি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হয়তো অনেক যাত্রী প্রথমে বিষয়টি বুঝে উঠতে পারেন না, যার কারণে এ ভোগান্তিতে পড়েন তারা। যাত্রীরা যদি পুলিশের সহায়তা চায় তাহলে পুলিশ ও বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে তাদের সহযোগিতা করে। আর যদি কারো লাগেজ বা অন্য কিছু হারিয়ে যায় এমন অভিযোগ এলেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেটি আমলে নিয়ে কাজ করি। অনেক লাগেজ আমরা উদ্ধার করে লাগেজের মালিককে ফিরিয়ে দিয়েছি।
কেএম/এসএন