সংকটে গম আমদানিকারকরা, চান সরকারের হস্তক্ষেপ
ভারত সরকার বেসরকারিভাবে গম রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় দেশের গম আমদানিকারকরা সংকটে পড়েছেন। তারা এখন সরকারের খাদ্য ও বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে ধরনা দিচ্ছেন সংকট সমাধানে দূতিয়ালি করার জন্য। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন আমদানিকারক দুই মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
অপরদিকে ভারত থেকে সরকারিভাবে জি টু জি ভিত্তিতে যে গম আমদানি প্রক্রিয়াধীন ছিল সেটি অব্যাহত আছে। ইতিমধ্যে এক লাখ টন গম দেশে এসেছে। বাকি দেড় লাখ টন পাইপলাইনে রয়েছে। এ কারণে দেশে গমের কোনো সংকট হবে না বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার মঙ্গলবার (১৭ মে) ঢাকাপ্রকাশ-কে জানিয়েছেন, গম নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। সরকারিভাবে যে গম আমদানি হয় সেটি অব্যাহত আছে। আরও দুই-তিন দেশের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। জুন পর্যন্ত গমের মজুদ আছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারের গুদামে মজুদের পরিমাণ হচ্ছে এক লাখ ছয় হাজার টন।
তিনি বলেন, সমস্যাটা অন্য জায়গায়। দেশের গম আমদানিকারকরা বেসরকারিভাবে ভারত থেকে যে গম আমদানি করেন, ভারত বেসরকারিভাবে রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় সেটি কিছুটা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তবে শিগগির সেই সংকট কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে গমের চাহিদা হচ্ছে প্রায় ৭৫ লাখ টন। এরমধ্যে দেশে উৎপাদন হয় প্রায় ১৩ থেকে ১৪ লাখ টন। বাকিটা আমদানি করা হয়। যার বেশিরভাগই আসে বেসরকারিভাবে।
গমের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। বিশ্বে গমের চাহিদার ২৫ শতাংশ পূরণ করে এই দুই। বাংলাদেশও এই দুই দেশ থেকে গম আমদানি করে থাকে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু গত প্রায় তিন মাস ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ অব্যাহত থাকার কারণে এই দুই দেশ থেকে আপাতত গম আমদানি বন্ধ রয়েছে। বেসরকারিভাবে ভারত থেকেও গম আমদানি করে থাকেন দেশের ব্যবসায়ীরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের গম আমদানিকারকদের অনেকেই ভারত থেকে গম আমদানির উদ্যোগ নেন এবং গত কিছু দিনে তারা ভারতের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোরে সঙ্গে গম আমদানির চুক্তি করেন। কেউ কেউ অগ্রিম টাকা দিয়েছেন। কিন্তু এলসি খুলেননি ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়। অপেক্ষা করছেন ডলারের দাম কমার। আবার কেউ কেউ এলসি খুলে টাকাও পরিশোধ করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করে ভারত বেসরকারিভাবে গম রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কঠিন সংকটে পড়েছেন দেশে গম ব্যবসায়ীরা।
বেসরকারিভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে গম আমদানি করার জন্য ইতিমধ্যে চুক্তি করেছে সেগুলোর মধ্যে এরাইজিং ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এক লাখ ১০ হাজার টন, সান সাইনিং ৫৫ হাজার টন, এম এস শাইখ ব্রাদার্স দুই লাখ ৫০ হাজার টন এবং ভেনাস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ক্রয় করেছে ৫৫ হাজার টন। এ রকম আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে এইভাবে গম ক্রয় করেছে। কিন্তু ভারত হঠাৎ করে বেসরকারিভাবে গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় সংকটে পড়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ঢাকাপ্রকাশকে জানিয়েছেন, বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রী ও আমার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন বিষয়টি সুরাহা করে দেওয়ার জন্য। সোজা কথায় তারা চাচ্ছেন ভারত সরকারের সঙ্গে কথা বলে সমস্যাটা সমাধান করা। তারা যেন ক্রয় করা গম দেশে আনতে পারেন।
তিনি বলেন, আমরা একটা উদ্যোগ নিচ্ছি। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারত সরকারকে অনুরোধ করা হবে।
খাদ্যমন্ত্রী আরও জানান, ভারত থেকে জিটুজি’র ভিত্তিতে সরকার আড়াই লাখ টন গম ক্রয় করেছে। এই গমের মধ্যে ৫০ হাজার টন ইতিমধ্যে দেশের গুদামে ঢুকেছে। আরও ৫০ হাজার টন নিয়ে জাহাজ গম চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে। সেগুলো এখন খালাসের অপেক্ষায়। আরও দেড় লাখ টন গম পাইন লাইনে রয়েছে। এগুলো এমাসেই চলে আসবে।
এদিকে বুলগেরিয়া বাংলাদেশের কাছে দুই লাখ টন গম বিক্রি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে বুধবার (১৮ মে) ভার্চ্যুয়ালি খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন বুলগেরিয়ার রাষ্ট্রদূত। এ ছাড়া গম আমদানির বিষয়ে আরও একাধিক দেশের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ হচ্ছে।
এনএইচবি/এমএমএ/