উন্নয়ন দৃশ্যমানে এডিপিতে বরাদ্দ আসছে তিন লাখ কোটি টাকা
উন্নয়ন কাজকে দৃশ্যমান করতে আগামী অর্থবছরে (২০২২-২৩) রেকর্ড পরিমান উন্নয়ন কাজে নজর দিচ্ছে সরকার। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা। এরমধ্যে পদ্মা সেতুর পুরো কাজ শেষে করতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা, মেট্রোরেলে আট হাজার ২৬৪ কোটি টাকা ও কর্ণফুলি ট্যানেলে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (১৭ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) এর অনুমোদন দিতে পারে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরে-ই বাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবরা উপস্থিত থাকবেন।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন কাজে সোয়া দুই লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এরমধ্যে বিদেশি ঋণ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় ধরা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছরেও এডিপিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বেশি করে বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে।
নতুন এডিপিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। কারণ মেগা প্রকল্পগুলোর সিংগভাগই যোগাযোগ খাতের। তাই এ খাত এডিপিতে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে। মোট এডিপির প্রায় ২৯ শতাংশই যাবে এ খাতে।
এরপরই বিদ্যুৎ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও গৃহায়ণ খাত। কারণ এসব খাতেও মেগা প্রকল্পগুলো রয়েছে। এসব বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনীতি অনেক এগিয়ে যাবে। এছাড়া বেশি করে বরাদ্দ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, বঙ্গবন্ধু রেলসেতু, দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।
সবচেয়ে বেশি বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। এরমধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৩০ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে বাইরের ঋণ আট হাজার ৩১ কোটি টাকা। বাকি ২২ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করা হবে। আর সেতু বিভাগের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে বিদেশি ঋণ তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকা। বাকি ৫ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করা হবে।
সূত্র জানায়, মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে এবছরই চালু হতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু। এ জন্য আগামী অর্থবছরে পদ্ম সেতুতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে দুই হাজার ২০২ কোটি টাকা। এর পুরোটাই সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করা হবে।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চালু হতে যাচ্ছে রাজধানীর আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল-৬ এর একাংশ। তাই সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে মেট্রোরেলেও বেশি করে আট হাজার ২৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে। এরমধ্যে এমআরটি-৬ এ দুই হাজার ৮৮২ কোটি টাকা, এমআরটি-৫ এ তিন হাজার ১৩০ কোটি ও এমআরটি-১ এ দুই হাজার ২৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার। এসব খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে আট হাজার ২৬৪ কোটি টাকা।
এছাড়া অক্টোবরে চালু হওয়ার কথা কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল। এ প্রকল্পেও আগামী অর্থবছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার। আর ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে চার হাজার ৪৫ কোটি টাকা, ঢাকা-সিলেট করিডোর প্রকল্পের জন্য ৯৬৮ কোটি, সাসেক-২ (এলেঙ্গা-রংপুর) প্রকল্পে এক হাজার ৭২৪ কোটি টাকা।
এভাবে বিভিন্ন খাতে বেশি বেশি করে আগামী বছরের জন্য বরাদ্দ দিতে যাচ্ছে সরকার। সবার ঘরে বিদ্যুৎ সেবা সব সময় নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কেউ গৃহহীন থাকবে না। তা আমলে নিয়ে গৃহায়নেও বেশি করে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া গ্রামীণ সড়ক সংস্কার ও চওড়া করতে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও পল্লী উন্নয়নে বেশি করে ২৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে। এভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও খাতে ব্যয় করা হবে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারি অর্থ ব্যয় করা হবে এক লাখ ৯৩ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণ ধরা হয়েছে ৯০ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা।
জেডএ/