ভালো আম পেতে অপেক্ষা আরও দুই সপ্তাহ
আমের রাজধানী নামে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে কেবল আমের আটি পুষ্ট হয়েছে। গুটি আমও ভালো করে পাকেনি। আর ভালো জাতের জিআই সনদপ্রাপ্ত খিরসাপাত আম পাকবে আরও দেরিতে। মে মাসের শেষ থেকে জুনের প্রথম সপ্তাহে। অথচ রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে চকচকে সোনালী রংয়ের কেমিক্যাল দিয়ে পাকা আমে ভরা।
বিক্রেতারা বলছেন, ভালো আম নেন, গোবিন্দভোগ ১৪০ টাকা কেজি। দেখতে ভালো, খেতে মজা। কিন্তু এগুলো বাস্তবে কেমিক্যালে পাকা আম বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে শনিবার (১৪ মে) দেখা যায় ফল ব্যবসায়ীরা ডালিতে করে থরে থরে সাজিয়ে সোনালী রংয়ের চকচকে আম বিক্রি করছেন। এরকম আমের ব্যাপারে জানতে চাইলে বাজারের ফল ব্যবসায়ী আমির হোসেন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘গোবিন্দভোগ ৮০ টাকা কেজি। সাতক্ষীরার আম। মিরপুর আড়ত থেকে কিনে বিক্রি করা হচ্ছে।
দেখতে ধুসর রং কেন? এগুলো কি প্রকৃতভাবে পাকা আম? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কি দিয়ে পাকা বলতে পারব না।
কারওয়ান বাজারে কেমিক্যালযুক্ত আম
শুধু কারওয়ান বাজারে নয়, মোহাম্মদপুর, মতিঝিলেও ফল ব্যবসায়ীরা ডালিতে থরে থরে আম সাজিয়ে বলছেন, গোবিন্দভোগ সাতক্ষীরার আম। মতিঝিলের ফল ব্যবসায়ী সোবহান বলেন, ‘লন লন ভালো আম। ১৪০ টাকা কেজি।’ এতো চকচকে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এর কারণ বলতে পারব না। আড়ত থেকে কেনা হয়েছে। বিক্রি করছি। কিছু মেশানো থাকলে তারা মিশিয়েছে।’
আবহাওয়া আর মাটির গুণে দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় সাতক্ষীরার আম আগেভাগেই পাকে। কিন্তু পাকার আগেই বাগান মালিকরা আম পেড়ে বাজারে নিয়ে আসছেন। অপুষ্ট আমে সয়লাব সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড়বাজার। এ ব্যাপারে খোদ বড়বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু অভিযোগ করে জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে আগাম আম ভেঙে নিচ্ছেন বাগান মালিকরা। এ রকম অপুষ্ট আম নানা কেমিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে বাজারে আনা হচ্ছে। এ সব আমের বেশির ভাগই যাচ্ছে রাজধানীতে।
আমের ব্যাপারে জানতে চাইলে বরেন্দ্র কৃষি উদ্যোগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনজের আলম মানিক তার বাগানের আম দেখিয়ে ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘আমরা করোনার কারণে গত দুই বছরে বেশ টাকা বা পুঁজি হারিয়েছি। কিন্তু এবছর আমের উৎপাদন কম হলেও আশা করছি সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব।
বরেন্দ্র কৃষি উদ্যোগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনজের আলম মানিক
সবচেয়ে ভালো আম কোনটি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জিআই সনদপ্রাপ্ত খিরসাপাত আম খুবই ভালো। সবার পছন্দ এটি। এরপর ন্যাংড়া, ফজলি বিভিন্ন জাতের আম আছে। হাইব্রিড আম্রপলিসহ বিভিন্ন আম রয়েছে। মে মাসের শেষ সপ্তাহ বা জুনের প্রথম সপ্তাহে খিরসাপাত আম পাওয়া যাবে। তারপর ন্যাংড়া,ফজলি আসবে বাজারে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, ভালো মানের আম পেতে আরও দুই সপ্তাহ মতো অপেক্ষা করতে হবে। তারা বলছেন, অনেক জায়গায় পাকা আম দেখা গেলেও আসলে আবহাওয়াগতভাবে সেটা পাকবেনা। কেমিক্যাল দিয়েই হয়ত পাকানো হচ্ছে। এজন্য গায়ের রং দেখতে একেবারে চকচকে গলুদ। কয় দিন পরই ধুসর হয়ে যাচ্ছে।
রাজশাহীর আম বাগানমালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রশাসনের তরফ থেকে শুক্রবার (১৩ মে) বাগান থেকে আম নামানোর ঘোষণা দিয়েছে। তবে আমের মোকাম বানেশ্বর বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে বেচাকেনা তেমন জমেনি। কামরুল ইসলাম বলেন, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী গুটি আম বাগান থেকে পাড়া শুরু হয়েছে। এগুলো তেমন ভালো স্বাদের না। ভালো মানের খিরসাপাত আম পেতে হলে ২৮ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (রাজস্ব) মুহাম্মদ শরিফুল হক বলেন, ‘২০ মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে লক্ষণভোগ বা লখনা, রাণীপছন্দ, ২৮ মে থেকে হিমসাগর বা ক্ষিরসাপাত, ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪, ১৫ জুলাই থেকে গৌরমতি এবং ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামানোর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ক্রেতাদের বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সে তারিখ অনুযায়ী শুক্রবার (১৩ মে) থেকে বাগানীরা গুটি জাতের আম নামাতে শুরু করেছে।
বাজারে আমের ব্যাপারে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হামিম রোজা ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘ভালোমানের অর্থাৎ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর খিরসাপাত আম পাওয়া যাবে জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে। বর্তমানে ঢাকাতে যে চকচকে আম দেখা যাচ্ছে তা পরিপক্ক না। কার্বাইড দিয়ে হয়ত পাকানো। তাতে স্বাভাবিক স্বাদ হবে না।
বর্তমান প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘এই এলাকার খিরসাপাত আম পেতে হলে আবহাওয়াগত কারণে জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর সাতক্ষীরার যে হিমসাগর বলা হয় তা খিরসাপতের মতো জাত। সেটাও মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহের আগে বাজারে আসার কথা না। আসতে তা পরিপক্ক হবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রকৃত আম বাগানের মালিক বা ব্যবসায়ীরা আমে কেমিক্যাল দিতে পারে না। তারা সময় মতো বাজারে ছাড়ে। যাতে পুষ্টিগুণের স্বাদ পায়। এবার আমের ফলন কম হয়েছে। তাই দামও বাড়তে পারে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এবার জেলা প্রশাসন থেকে এখনও আম ভাঙ্গার সময় নির্ধারণ করে দেয়নি। তবে তা না করলেও স্বাভবিক সময়ে বাগানের আম পাড়া (ভাঙ্গা) হবে।’
জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর ভেজালের বিরুদ্ধে বাজারে অভিযান পরিচালনা করে থাকে। তা জানতে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সফিকুজ্জানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও ফোন বন্ধ থাকায় মন্তব্য জানান সম্ভব হয়নি।
জেডএ/আরএ/