রাজপথই সমাধান দেখছে বিএনপি
ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে যাই বলা হোক নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন ছাড়া আগামীতে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছে বিএনপি। দাবি আদায়ে ফের আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত দলটির। আন্দোলনের সময় বা দিনক্ষণ, কৌশল চূড়ান্ত না হলেও অচিরেই ইস্যু ভিত্তিক কর্মসূচিতে রাজপথে নামার পরিকল্পনায় এগোচ্ছে বিএনপি। দল ও তার অঙ্গ সহযোগি সংগঠনগুলোকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ সমাপ্তির দিকে। তবে একটি বিষয়ই প্রাধান্য দেওয়া হবে তা হলো-নির্বাচনকালিন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এবার আন্দোলনের ধরণ কৌশলের ছক আকছে বিএনপি। নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আদায়ে প্রয়োজনে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়তে জোটে থাকা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগের মতামতও উঠে এসেছে। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এমনটাই জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, সভা-সমাবেশ-বিবৃতিতে জাতীয় সরকার নিয়ে কথা বললেও বিএনপির মূল দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়। বিএনপির হাইকমাণ্ড মনে করছে-খালেদা জিয়াসহ সকল রাজনৈতিক কর্মীদের মুক্তি, সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, নিরপেক্ষ নির্বচন কমিশন গঠন, সকল দলের অংশগ্রহণ ব্যতীত বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে না। নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য ইভিএম পদ্ধতিও গ্রহণযোগ্য হবে না।
ফলে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের উদ্যোগ নিয়ে ক্ষমতাসীনদের বক্তব্যে কে ‘প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপির হাইকমাণ্ড। দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়-শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পদত্যাগ ব্যতিরেখে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। বরং অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। যারা নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে এবং সেই নির্বাচন কমিশন যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে সেখানে দিয়ে একটা জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার ও সংসদ গঠিত হবে। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। সেটি হলো এই সরকারের বদলে কেয়ারটেকার আর ইভিএমের বদলে ব্যালট পেপার।
‘নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নিয়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বিএনপি এখনো ঐক্যবদ্ধ। নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগে যদি কোন তৃতীয় শক্তির উত্থান ঘটে তা নিয়েও চিন্তিত নয় বিএনপি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া বিএনপির এই মুহূর্তে কোনো ভাবনা নাই।’
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। নির্বাচন ও আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে না। নির্বাচন নিয়ে আপাতত তেমন কোনো ভাবনা নেই বিএনপির। তবে বসে নেই বিএনপি, সীমিত আকারে হলেও যতটুকু সময়-সুযোগ তার যথাযথ ব্যবহার করতে যা করণীয় তাই ভেবে এগোচ্ছে দল। অর্থাৎ রাজপথের আন্দোলন থেকে পিছপা হবে না, হওয়ার কোনো বিকল্প পথ খোঁলা নেই। অচিরেই নতুন শক্তি নিয়ে রাজপথে আসবে বিএনপি।’
সময় যত অতিবাহিত হচ্ছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল (আওয়ামী লীগ-বিএনপি) মধ্যে ক্ষমতার লড়াই প্রধান হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ফলে গণতন্ত্র, নির্বাচন, সংলাপ ও সমঝোতায় সমাধানের পথ বন্ধ হলে ফের সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে চলে যেতে পারে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বাস্তবতায় দেশ এখন ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতায় টিকে থাকার লড়াইয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।
বিএনপিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা ফ্রি, ফেয়ার ইলেকশন করব। জনগণের ইচ্ছায় ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। আমরা তাদের (বিএনপি) অনুরোধ করছি নিবাচনে আসুন। দর কষাকষি করে লাভ নেই, সরকার সংবিধান থেকে এক চুলও নড়বে না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, আমরাও সেভাবে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করব।’
অন্যদিকে বিএনপির দাবি-দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি, শেখ হাসিনার অধীনে তো প্রশ্নই উঠে না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। ফলে দুই দলের মধ্যে সংলাপ-সমঝোতা না পৌঁছানো পর্যন্ত অনিশ্চিয়তা যেমন কাটছে না তেমনি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও শান্তিপূর্ণ তথা স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনাও থাকছে ক্ষীণ।
বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ঈদের পরে আন্দোলন কাকে বলে দেখিয়ে দিব!
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'আমাদের সবকিছুই আন্দোলনের অংশ, আমরা যা কিছু করছি তাই আন্দোলন। আন্দোলন বলতে আপনারা কী বুঝেন, তা জানি না। আমরা যারা আন্দোলন করি তারা বুঝি- আন্দোলন মানেই জনগণকে সম্পৃক্ত করা। এই তো আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিয়েছি এটাও আন্দোলনের কর্মসূচি, জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে যে কর্মসূচি দিয়েছি সেটাও আন্দোলনের কর্মসূচি। অস্থির হবেন না, আপনারা যেটা দেখতে চান সেটা খুব শিগগিরই দেখতে পাবেন।'
আন্দোলনে অনড় খালেদা
দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে আন্দোলন উপযোগী করতে দৃঢপ্রতিজ্ঞ দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে রাজনীতি থেকে দূরে সরে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রাজনৈতিক সমঝোতার পথকে ক্ষীণ বিবেচনায় নিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখার বিষয়ে অনড় রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ধারাবাহিকতায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলা সফরে গিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গুলো দ্রুততার সহিত শেষ করারও তাগিদ দিয়েছেন তিনি। গত ৯ মে খালেদা জিয়ার সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সাক্ষাতে এই বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। আলোচনায় উপস্থিত নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থায়ী কমিটি একজন সদস্য ঢাকাপ্রকাশকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, খাতা কলমে না হলেও রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। কিছু অভ্যন্তরীণ ভুল বুঝাবুঝি ও সাংগঠনিক দুর্বল থাকায় ব্যর্থতাই ছিল কয়েকদফা আন্দোলনের শেষ পরিণতি। ফলে ব্যর্থতার তকমা থেকে বের হতে এবার সাংগঠনিকভাবে শক্তি বৃদ্ধিতে কিছুটা সময় নিয়ে ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি। প্রস্তুতি একটি সেটা হচ্ছে- সরকার পতন আন্দোলন। বিএনপির কাছে আন্দোলনেই মুখ্য বিষয়। তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মতামত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাদের
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে বিএনপি আন্দোলন চলমান। অতীতে আন্দোলন করে দেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত করা হয়ে ছিল। এবারও রাজপথ আন্দোলনে তা পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা হবে। এখন শুধু বিএনপি নয়, সরকারবিরোধী দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবে না।
এমএইচ/