সুফল মেলেনি মাছ-ব্যাঙ-হাঁস দিয়ে মশা নিধন
মশা নিধনে গাপ্পি মাছ, ব্যাঙ ও হাঁস ব্যবহার করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু এ সব পদ্ধতি তেমন কার্যকর হয়নি। এখন পুরনো পদ্ধতিতেই চলছে মশা নিধনের কাজ। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জেল-জরিমানা।
মশার লার্ভা ও প্রজননস্থল ধ্বংস করতে ডিএসসিসি লেক-খাল-জলাশয়ে মাছ অবমুক্ত থেকে শুরু করে হাঁস বা ব্যাঙেরও প্রয়োগ করেছিল। কিন্তু এ সব পদক্ষেপে সুফল পাওয়া যায়নি বলেই অভিযোগ নগরবাসীর।
গাপ্পি মাছ: কিউলেক্স মশা নিধনে ডিএসসিসি নগরীর বিভিন্ন ড্রেনে গাপ্পি মাছ অবমুক্ত করেছিল ২০১৮ সালে। কিন্তু ঢাকার ড্রেনের পানি এতটাই দূষিত যে কয়েকদিনের মধ্যেই গাপ্পি মাছ মরে ভেসে উঠে। তখন অনেক সমালোচনা হয় বিষয়টি নিয়ে।
গাপ্পি মাছের পর হাঁস: গাপ্পি মাছ দিয়ে মশা নিধন ব্যর্থ হওয়ার পর ২০২০ সালে মশা নিধনে কয়েক হাজার হাঁস রাজধানীর বিভিন্ন খাল, ঝিল ও জলাশয়ে ছেড়েছিল ডিএসসিসি। যদিও একবছর পর সেসব হাঁসের প্রায় ৯০ ভাগই গায়েব যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। তদারকির অভাবে হাঁসগুলো চুরি হয়ে যায়।
এরপর নামানো হলো ব্যাঙ: গাপ্পি মাছ ও হাঁস দিয়ে মশা নিধনের প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ না হওয়ায় ২০২১ সালের মার্চে রাজধানীর খাল, ঝিল, লেক, পুকুর ও জলাশয়ে নামানো হলো বিশেষ প্রজাতির ব্যাঙ। এটিও ডিএসসিসির একটি উদ্যোগ।
কিন্তু এই উদ্যোগও ফলপ্রসূ হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকার খাল, লেক ও জলাশয়ের পানি এতটাই দূষিত যে ব্যাঙও টিকে থাকতে পারেনি।
জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, মশার লার্ভা নিধনে ফলপ্রসূ ছিল গাপ্পি মাছ। উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের ড্রেনে গাপ্পি মাছ দেখতে পাওয়া যাবে। সেখানে মশার কোনো লার্ভা নেই। এ সংক্রান্ত কয়েকটি ভিডিও দেখান অধ্যাপক কবিরুল বাশার।
তবে ব্যাঙ বা হাঁস দিয়ে মশার লার্ভা ধ্বংসের বিষয়টি বিশ্বের কোথাও নেই দাবি করে অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলছেন, এটি ডিএসসিসি কেন করেছে জানি না।
ঢাকার পানির দূষণের কারণে গাপ্পি মাছ মারা যাওয়া প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, গাপ্পি মাছ পলিউটেড ওয়াটার ফিশ। তবে কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি হলে তারা বাঁচতে পারবে না।
গাপ্পি মাছ দিয়ে মশার লার্ভা ধ্বংসের বিষয়টি বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই প্রচলিত এবং কার্যকর পদ্ধতি। কিন্তু আমাদের দেশে এ পদ্ধতি কাজ না করায় পুরোনো পদ্ধতিতেই চলছে মশা নিধন।
মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করার পাশাপাশি নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। পুকুর-খাল-ঝিলের পানা পরিষ্কার করা হচ্ছে নিয়মত। চলছে ফগিং কার্যক্রম।
এর সঙ্গে নতুন যুক্ত হয়েছে জেল-জরিমানা। আগে মশা নিধনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হতো না। গত দুইবছর ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হচ্ছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায়। মশার লার্ভা পেলে নানা অংকের জরিমানাও করা হচ্ছে।
আরইউ/আরএ/